• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ৯, ২০১৯, ০৮:৫৩ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ৯, ২০১৯, ০৮:৫৩ এএম

ঢামেকের চালচিত্র

রোগীর পরিত্যক্ত চুল বিক্রি করে অ্যাম্বুলেন্সের মালিক!

রোগীর পরিত্যক্ত চুল বিক্রি করে অ্যাম্বুলেন্সের মালিক!


ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অস্থায়ী কর্মচারী জামাল। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে হাসপাতালে রোগীর ফুটফরমায়েশ খেটে টুপাইস কামিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন তিনি। হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে ( মাথায় ইনজুরি ) রোগীদের ফুটফরমায়েশ খাটার পাশাপাশি কাজের ফাঁকে অপারেশন থিয়েটারে সার্জনের সঙ্গে কাজ করতেন তিনি। নিউরোসার্জারি বিভাগে অপারেশনের আগে রোগীদের মাথার চুল কাটা হতো। সে সময় জামাল রোগীর মাথার কেটে ফেলা চুল জমিয়ে রেখে বিক্রি করতো। এ ভাবে একই ওয়ার্ডে তার ১২ বছর কাটে। ওয়ার্ড থেকে রোগীর পরিত্যক্ত চুল বিক্রি করে টাকা জমিয়ে তিনি এখন ২টি অ্যাম্বুলেন্সের মালিক হয়েছেন। এখন অভাব তাকে আর গ্রাস করতে পারে না। 

জাগরণ প্রতিবেদককে জামাল বলেন, আমরা ৩ ভাই ৩ বোন। আমি ঢাকা মেডিকেলের স্থায়ী সরকারি কর্মচারী না। স্পেশাল কর্মচারী হিসেবে রোগীর ফুটফরমায়েস করে দু’পয়সা পেলে তা দিয়েই চলি। তবে ওয়ার্ডে ফেলে দেয়া রোগীর চুল বিক্রি করে আমার অভাবি জীবনের মোড়ে ঘুরিয়ে দিয়েছে আল্লাহ। আমার মালিকানাধীন ২টি অ্যাম্বুলেন্স এই হাসপাতালে ভাড়ায় চলছে। এর সবই রোগীর চুল বিক্রি করা টাকায় কেনা।      

জামালের কাছ থেকে জানা যায়, পরিত্যক্ত চুলকে ঘিরে দেশে গড়ে উঠেছে কয়েকশ’ শিল্প প্রতিষ্ঠান। তাদের মতো অনেক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছে, এই চুল ব্যবসায় জড়িত থেকে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা, বিশেষ করে ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, মাগুরা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, মাদারীপুর থেকে শহরে আসছে এ সব চুল সংগ্রহকারী দল। তারা জানায়, উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর, রংপুরসহ অনেক জেলাতেই গড়ে উঠেছে পরিত্যক্ত চুল শিল্প। ওইসব জেলাগুলোতে গড়ে উঠেছে, তিন শতাধিক চুল প্রক্রিয়াকরণ কারখানা। যারা উত্তরাঞ্চল জেলাশহর থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় আসছে, তারা ঘুরে ঘুরে চুল সংগ্রহ করে নিয়ে যায় উত্তরাঞ্চলে।  

জামাল বলেন, প্রথমে জট পাকানো চুলে সুচ দিয়ে জট ছাড়ানো হয়। এরপর উন্নতমানের শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে রোদে শুকানো হয়। শুকানোর পর দৈর্ঘ্য অনুযায়ী প্যাকিং করা হয়। সর্বনিম্ন ৮ ইঞ্চি থেকে শুরু করে ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা চুল বাজারজাত করা হয়। ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত প্রতি কেজি চুল বিক্রি হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকায়। এভাবে প্রতি ২ ইঞ্চি বেশি লম্বা হলে প্রতি কেজি দেড় হাজার টাকার বেশি দরে বিক্রি হয়। এভাবে ২৮ থেকে ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত প্রতি কেজি চুল বিক্রি হয় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকায়। 

চুল রিফাইনারী ফ্যাক্টরির মালিক মনির হোসেন বলেন, সেকালের মতো পরিত্যক্ত এই চুল এখন আর ফেলনা নয়। এই পরিত্যক্ত চুল চলে যায় চীন, কোরিয়া, মিয়ানমারসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ওইসব দেশের ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে বৈধ পথেই এসব চুল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ধারণা করা যায়, বিদেশে এসব চুল বিভিন্নরকম টুপি, পরচুলা ও টাক মাথায় হেয়ার প্ল্যান্টেশনসহ আরও নানা কাজে ব্যবহৃত হয়। 

এইচএম/আরআই