• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০১৯, ১১:৪৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ৩০, ২০১৯, ১১:৪৫ এএম

ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস আজ

ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস আজ

৩০ জুন। সাঁওতাল বিদ্রোহ ও সাঁওতাল গণহত্যা দিবস।এই দিনে ‘জমি চাই, মুক্তি চাই’—এ দাবি নিয়ে সাঁওতালরা বিদ্রোহ করেছিল ব্রিটিশ শাসক ও তাদের দোসর মহাজনদের বিরুদ্ধে। আজ পূর্ণ হচ্ছে সেই গৌরবোজ্জ্বল বিদ্রোহের ১৬৪ বছর।

১৮৫৫ সালের এই দিনে সাঁওতাল নেতা সিধু, কানু ও তার বোন ফুলমতির নেতৃত্বে ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন এবং  জমিদারদের অত্যাচার ও মহাজনী চক্র বৃদ্ধি ঋণ প্রথার বিরুদ্ধে তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় এই ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহের সূচনা হয়। যে বিদ্রোহ দমনে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ও তাদের এ দেশিয়  জমিদার-মহাজনদের সৈন্য, সামন্ত-পাইক-বরকান্দাজদের যৌথ বাহিনী সাঁওতালদের ওপর নির্মম নৃশংস গণহত্যা, সাঁওতাল নারী ধর্ষণ, নির্যাতন এবং সাঁওতাল পল্লী হাতির পাল দিয়ে ধ্বংসের নিষ্ঠুর খেলায় মেতে ওঠে।  

আজকের এই দিনে সিধু ও কানু মুর্মু ১০ হাজার সাঁওতালকে সংগঠিত করে এক বিদ্রোহী বাহিনী গড়ে তোলেন। যারা তীর, ধনুকে সজ্জিত হয়ে ব্রিটিশ শাসনের সমান্তারাল সরকার গঠন করে নিজস্ব আইন-কানুনের মাধ্যমে খাজনা আদায়ের সূচনা করে। বিদ্রোহী সাঁওতালরা বিদ্রোহের সূচনায় গ্রামের অত্যাচারী জমিদার ও সুদখোর মহাজনদের ওপর আক্রমণ চালায়-কয়েকজনকে হত্যাও করা হয়-যাতে ব্রিটিশ সরকারের শাসন ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। 

ভারতের আজকের ঝাড়খ প্রদেশসহ বিস্তৃত সাঁওতাল এলাকায় সূচিত এই বিদ্রোহ দমনে মুর্শিদাবাদের নবাব ব্রিটিশদের সহায়তায় হাতির পাল নামিয়ে দিয়ে সাঁওতাল পল্লীতে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। নিষ্ঠুর নির্মমতায় ব্রিটিশ সরকার সাঁওতাল বিদ্রোহ দমনের পন্থা অবলম্বন করে এবং সিধু ও কানু এবং তাদের ভাই চান্দ ও ভৈরবকে গ্রেফতার করার জন্য ১০ হাজার টাকার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। সিধু ও কানুকে হত্যা করা হয় এবং ব্রিটিশ বাহিনী মুর্শিদাবাদের নবাবের হাতির পাল দিয়ে ১০ টি সাঁওতাল পল্লী, হাট-বাজার ও বসতী ভেঙে চুরে গুঁড়িয়ে দেয়। 

৬০ হাজার বিদ্রোহী সাঁওতালদের মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার বিদ্রোহীকে হত্যা করে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ও জমিদার-মহাজনদের ঘাতক বাহিনী। সাঁওতালদের রক্তে ভেসে যায় বীরভূম, বরাভূম, ছোটোনাগপুরসহ ব্রিটিশ ভারতের বিভিন্ন সাঁওতাল অধ্যুষিত জেলা। ব্রিটিশ সরকার ১৮৫৫ সালের নভেম্বরে মার্শাল ল জারি করে সাঁওতাল বিদ্রোহ দমনের জন্য। সেই বছরের ৩০ জুনের সাঁওতাল বিদ্রোহ ও গণহত্যা নিয়ে মহাশ্বেতা দেবী লিখেছিলেন তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘চোট্টি মুন্ডা ও তার তীর’। মৃনাল সেনের ‘মৃগয়া’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয় ১৮৫৫ সালের ৩০ জুনের সাঁওতাল বিদ্রোহ নিয়ে।

এখনও নীপিড়িত সাঁওতাল সম্প্রদায়। তাদের বিশ্বাস যদি সাঁওতাল বিদ্রোহে তাদের জয় হতো তাহলে তাদের দুর্দশাও কেটে যেত। তাই বিদ্রোহের দিনে এখনও তারা গায় তাদের বিদ্রোহ  সঙ্গীত- 

‘উরু তাং তাং
ধনুকে জোর ধরে টান
টানা বাবা টানা
ওই ফিরিঙ্গী দেয় হানা
মাদক সিঙ্গা বাজারে
ঝোঁপে ঝাড়ে পাহাড়ে।’