• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০১৯, ০৫:০৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ২৮, ২০১৯, ০৫:০৯ পিএম

হাত বাড়িয়ে দাও

‘জাহেদী’ আবার স্কুলে যাবে

‘জাহেদী’ আবার স্কুলে যাবে

 আসুন একটা গল্পের সাথে পরিচিত হই এবং নিজেদের অবস্থান নির্ধারণ করি। গল্পের মানুষ গুলোর নাম বনিয়াতুল মুছাইয়াদা বনি, চুয়েটের ০৯ ব্যাচের ছাত্রী - যার সাথে আমার পরিচয় হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনার সময় - ও ছিল এসব কর্মকান্ডের অত্যন্ত প্রাঞ্জল একজন কর্মী এবং সফল সাংগঠনিক অথবা তারই আদরের ছোট ভাই মো. মেহেবুব জাহেদী।

কল্পনা করুন নিলফামারি জেলার ডিমলা উপজেলার কোনো এক প্রত্যন্ত  অঞ্চলের শিক্ষক দম্পতির কথা। মা  সরকারী প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষিকা আর বাবা এ বছরের শুরুতে শিক্ষকতার পেশা থেকে অবসর গ্রহন করেছেন। বড় দুই ছেলে মেয়ে যখন ভালো ভবিষ্যতের দিকে যাচ্ছে তখন ছোট্ট ‘জাহেদী’ কে নিয়ে তাদের সংগ্রাম শুরু হয়। ‘রেটিনাইসিস পিগ্মেন্টোসা’ চোখের একটি বিরল অসুখ। মাত্র আড়াই বছর বয়স থেকে জাহেদী এই সমস্যায় ভুগছে। আপনার আমার মত স্বাভাবিক দৃষ্টি  জাহেদীর নেই। দেখতে ওর অনেক কষ্ট হয়। পায়ের কাছের ফুটবল টাও ছোট বেলায় খুঁজে পেত না! যার দরুন ক্রিকেট পাগল হয়েও জাহেদি কখনো ক্রিকেট ব্যাট কিংবা বল কোনটাও হাতে তুলতে পারেনি।

ডাক্তারদের মতে, তার ভিশন ফিল্ড ৩ দিকে। নিচের দিকের ভিশন শুন্য। ছোট্ট বেলায় একবার দৌড় দিতে গিয়ে নিচে শুকনা একটা কুয়ায় পড়ে যায়! অনেক্ষন আটকেও থাকে! খুব ভয় পেয়েছিল ! আর বাসায় রাখা চেয়ার, টেবিল ও নিচু যাই কিছু হোক বারি খেতে খেতে অভ্যাস হয়ে গেছে। প্রতিটা বোর্ড পরীক্ষায় বোর্ড থেকে এক্সট্রা ৩০ মিনিট বরাদ্দ থাকে ওর জন্য। কারন ওর চোখের কো-অর্ডিনেশন এর কারনে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লেগে যায়। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চোখের মনি নড়ালে লাইন হারিয়ে ফেলে! রাস্তায় হাটার সময় খুব ফোকাসড হয়ে হাটতে হয়, এতে করে অনেক মুরুব্বী কে সালাম দেয়া হয়ে উঠেনা! হতভাগা জাহেদি হয়ে উঠে বেয়াদব! কিন্তু কেউ বুঝতেই পারলনা যে সে দেখতে পারেনি!

শুধু চোখের সমস্যা থাকলে হয়তো লড়াইটা সহজ হতো। কিন্তু মাত্র ৮ বছর বয়সেই ধরা পড়ে কিডনির অসুখ। দুটো কিডনি একসাথে অকেজো হয়ে যায় ছোট্ট জাহেদীর। কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনই হলো একমাত্র চিকিৎসা। পায়ের নিচের মাটি আর আকশের দুরত্ব খুব একটা বেশি মনে হচ্ছিল তখন তার পরিবারের! ২০১১ সালে কিডনী প্রতিস্থাপন অপারেশন সফলতার সাথে সম্পন্ন হয় জাহেদীর। ওর বাবা প্রাণপ্রিয় ছেলেকে কিডনি ডোনেট করেন। এর পর থেকে প্রতি বছর একবার নিয়মিত চেকআপের জন্য এবং পরবর্তী ১৩ মাসের ঔষধ নিয়ে আসার জন্য ভারতে যেতে হত জাহেদীর।

হঠাৎ করেই আবার সব ওলট পালট হয়ে গেল! ৮ বছর পর। যুদ্ধটা হয়ত সেখানেই থেমে যেতে পারত! কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের ৮ বছর পরে এসে ওর বডি তার ট্রান্সপ্লান্টকৃত কিডনী রিযেক্ট করেছে। নিজের কিডনিকে ফরেইন পার্টিকেল মনে করছে তার শরীর। এন্টিবডি তৈরি হচ্ছে শরীরে। এই মুহূর্তে প্লাজমা ফেরোসিস (ক্যাথাটারের মাধ্যমে সারা শরীরের প্লাজমা সার্কুলেশন ও পরিবর্তন ) করতে হবে। এন্টি রিজেকশন ইঞ্জেকশন দেয়া হবে ১০ টি সেশনে। এই ট্রিটমেন্ট খুবই ব্যায়বহুল এবং কষ্টকর। জাহেদীর গলায় আবার ক্যথাটার করা হয়েছে! সারা শরীর ফুড়িয়ে ভেইন না পেয়ে কনুই তে শেষ পর্যন্ত কেনুলা করতে হয়েছে। ছোট্ট জাহেদী এবার ভীত! এখন সে বড় হয়েছে! ভাবতে শিখেছে! অন্যদের কষ্টটা বোঝে হয়ত সেটাই তাকে আরো বেশী কষ্ট দিচ্ছে। ডাক্তাররা আরেকবার ট্রান্সপ্লান্ট এর জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতেও বলা হয়েছে!

শুরুতে বলেছিলাম তারা আর্থিকভাবে সচ্ছল। কিন্তু কিডনি চিকিৎসা ২ বার করানোর মত কি সচ্ছল? না , অতটাও না। আমরা নিজেই অনেকে সচ্ছল কিন্তু চিকিৎসার জন্য যদি আজকে ১৫/২০ লক্ষ টাকার প্রয়োজন হয়। সেটা কি কষ্টকর হয়ে ঊঠবেনা! এদিকে প্রকৌশলী ভাই বোনেরা এখনও জীবনের সাথে যুদ্ধ করে চলছে প্রতিনিয়ত। আর স্বপ্ন দেখছে ভাইকে সুস্থ করে আবার স্কুলে পাঠাতে। ২০১১ সালে আপনারা ছোট্ট ‘জাহেদীর’ এর পাশে দাড়িয়েছিলেন একসাথে। জানি এবারও দাড়াবেন ওদের পাশে।

 সাহায্য পাঠাতে পারেন নিচের নাম্বারগুলোতে-

 বিকাশ: ০১৭৫৪৩৩৩৪২৩
রকেট: ০১৭৫৪৩৩৩৪২৩৫
বনিয়াতুল মুছাইয়াদা বনি (বড় বোন)

DBBL Bank A/C
A/C Name: MOHAMMAD MAHEDI HASAN MENON
A/C No: 116.101.238766
Dutch Bangla Bank Limited
Gulshan Branch,
Dhaka
Swift:DBBLBDDH
 
 লেখক: চট্রগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও স্থাপত্য-পরিবেশ বিষয়ক গবেষক