• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১, ২০২০, ০১:০২ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ১, ২০২০, ০১:৩৮ এএম

সম্ভবনা ও প্রত্যাশার নতুন বছর 

সম্ভবনা ও প্রত্যাশার নতুন বছর 

বিদায় ২০১৯, স্বাগত ২০২০। আরেকটি নতুন বছর! আরেকটি নতুন সূর্যোদয়। বিদায়ী বছরটি সামগ্রিকভাবে দেশের জন্য অনেক বেশি  গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বছরের শুরুতেই  টানা তৃতীয়বারের মতো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। এমনই প্রেক্ষাপটে স্বস্তি-আনন্দের আবহে দেশবাসী স্বাগত জানিয়েছিল বিগত বছরকে। অন্যদিকে নতুন বছরে (২০২০ সালে) পূর্ণ হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী। এ উপলক্ষেই এ বছর দেশব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালিত হবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী। বছর জুড়েই চলবে আনন্দ উৎসব।

এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ঐতিহাসিক কারণে আমরা খ্রিস্টীয় শতাব্দীতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের অনেক ঐতিহাসিক সত্যের মধ্যে এটাও একটা যে, আমরা এ এলাকার অধিবাসীরা বঙ্গীয় বর্ষ মেনে চলি দেশপ্রেমজাত সাংস্কৃতিক কারণে। কিন্তু নিত্য জীবনযাপনের বেলায় খ্রিস্টীয় বর্ষ মেনে চলি। এরই ধারায় মহাকালের গহ্বরে হারিয়ে গেল আরও একটি বছর। 

২০১৯ সালটি ছিল নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। আন্দোলন-সংগ্রাম, সড়ক দুর্ঘটনা, ছেলেধরাসহ বিভিন্ন গুজব, ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তাল শিক্ষাঙ্গন, বেপরোয়া ছাত্রলীগ, আগুনের বিভীষিকা, দুর্ভোগের ঈদযাত্রা, মাদক-দুর্নীতিবিরোধী অভিযান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বাজার সিন্ডিকেট, মশার উৎপাত, ডেঙ্গুর যাতনা, বায়ু ও পরিবেশ দূষণসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ২০১৯ ছিল ঘটনাবহুল। তবে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও এগিয়ে চলছে দেশ। 

ইতিহাসের খেরো পাতা থেকে জানা যায়, প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই বর্ষ বিদায় এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানানো মানুষের আবেগ ও হৃদয়বোধেরই একটি অন্তর্নিহিত প্রতিফলন। ইতিহাস সচেতন পাঠকমাত্রের জানা, প্রাচীন রোমের পৌরাণিক দেবতা জেনাসের নামানুসারে নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারির নামকরণ। দেবতা জেনাসের দুটি মুখ। একটি সূর্য অপরটি চন্দ্র। সূর্য উত্তাপ বিকিরণ করে জীবন সঞ্চালন ঘটায়। চন্দ্র তার মধুর আলোয় জীবনের পরিপুষ্টি আনে। আবার জেনাসের একটি মুখ ভবিষ্যতের প্রতীক, অন্যটি অতীতের। তিনি পার্থিব মানুষের জীবনদ্বারের প্রহরী। তাই দৃষ্টি প্রসারিত করে আছেন আমাদের অতীত থেকে অনাগত ভবিষ্যতের দিকে। অতীত থেকে অনাগতের যাত্রাপথে যে চলমান প্রবাহমানতা, জেনাস তার নিয়ামক এবং নিয়ন্ত্রক। তিনি স্বস্তি, শান্তি আর কল্যাণের দেবতা। প্রাচীন রোমানরা একে ভক্তিভরে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করতেন বিভিন্ন বিবাহ অনুষ্ঠানে, ব্যবসা-বাণিজ্য শুরুর আগে ও পরে, শিশু জন্মের মুহূর্তে। 

ইতিহাসবিদরা জানিয়েছেন, চার হাজার বছর আগে প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার বেবিলিয়নরা ‘আকিতু’ নামে নববর্ষ অনুষ্ঠান পালন করে সুখী, শান্তিপূর্ণ, শুভময় ভবিষ্যতের জন্য প্রার্থনা জানাতেন দেবতার দুয়ারে। আর আবহমান কাল ধরে বিশ্বও এগিয়ে চলেছে নতুনের হাত ধরে। পুরনো জীর্ণতাকে ভুলে নতুন দিনের নতুন কাব্যে জীবনকে আরো কাব্যময় করে তুলতে। তাই ইংরেজি ক্যালেন্ডারের প্রথম দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে বিশ্ববাসী মেতে ওঠে নানা আয়োজনে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাঙালিও মেতে ওঠে ইংরেজি নববর্ষ বরণের আনন্দে। 

শহর-নগর, গ্রাম-বন্দরসহ সারা দেশে যেন বয়ে চলে এক খুশির বন্যা। প্রতি বছর এই উৎসব এভাবে আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে। 

পুরনো বছরের গ্লানি ভুলে নতুনকে বরণ করার উৎসবে সারা বিশ্বের একাত্মতা বিশ্ববাসীকে একটু হলেও এক সুতায় গেঁথে রাখে। নতুন 

আশায়, স্বপ্নে উদ্দীপ্ত হয় মানুষ। সাফল্যে ঔজ্জ্বল্য হয়ে উঠবে, মুছে যাবে ব্যর্থতার গ্লানি- এমন প্রত্যাশায় মানুষ উজ্জীবিত হয়।

অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে নতুনকে নিয়ে এগিয়ে চলার আনন্দময় ও উন্নত জীবনের গল্পে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ। সবার 

প্রত্যাশা, নতুন বছর হবে একটি সুখী-সমৃদ্ধ-জঙ্গিবাদমুক্ত বাংলাদেশ। নতুন বছরের কাছে প্রত্যাশা ভালো থাকার, সুন্দর থাকার। দেশটা হোক 

সহিংসতা, নৃশংসতা ও জঙ্গিবাদমুক্ত। চাই অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা। সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ, শিক্ষাঙ্গনে সুস্থ পরিবেশে বেঁচে থাকুক 

স্বপ্নেরা !

জেডএইচ/ এফসি/এসকে