• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০১৯, ০৮:৩৫ পিএম

সরকারি সহায়তা পেলে বদলে যাবে দোহার ও নবাবগঞ্জ অঞ্চল

সরকারি সহায়তা পেলে বদলে যাবে দোহার ও নবাবগঞ্জ অঞ্চল
দোহার মৈনটঘাট এলাকা যা মিনি কক্সবাজার নামে পরিচিত। এক সন্ধ্যার দৃশ্য

 

রাজধানী ঢাকার পাশেই দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলা। এই দুই উপজেলায় কৃষি ও পর্যটন শিল্পে সরকারি সহায়তা পেলে দ্রুত পাল্টে যাবে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক চিত্র।

স্থানীয়দের দাবি, উপজেলা দুটির অর্থনীতিতে কৃষির ব্যাপক অবদান রয়েছে। সারা বছর এ অঞ্চলে উৎপাদন হচ্ছে নানা জাতের ধান ,শাকসবজি,পাট, আদা, হলুদ, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ,ধনিয়া, সরিষা, তিল ইত্যাদি। তাছাড়া এখানে বাঙ্গি, পেঁপে, কলা, কুল, বেল, লেবু, লিচু,আঁতাফল, আমড়া, জাম, আম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন অর্থকারী ফসল উৎপাদন হয়।

অন্যদিকে কবি কায়কোবাদের জন্মস্থান নবাবগঞ্জের আগলা গ্রাম, কলাকোপা, বান্দুরা এলাকা ও দোহারের পদ্মার তীরবর্তী মিনি কক্সবাজার খ্যাত মৈনটঘাট সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে গড়ে উঠতে পারে একটি পর্যটন এলাকা। এই পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে এলাকার জনসাধাণের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে মনে করেন এ অঞ্চলের সচেতনতা মহল। বিশেষ করে মৈনটঘাটকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে দোহার উপজেলার অর্থনীতির চিত্রও পাল্টে যাবে।

                               দোহারের পদ্মা নদীতে জেলেরা ইলিশ মাছ ধরছে

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, নবাবগঞ্জের কলাকোপায় ও বান্দুরা এলাকায় জুড়ে রয়েছে নানা প্রাচীন নিদর্শন ও ঐতিহাসিক স্থাপনা। যা দেশ বিদেশের পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মতো। এর মধ্যে অন্যতম নির্দশন হলো খেলারাম দাতার বাড়ি। পেশায় ডাকাত হলেও ডাকাতি করা লুণ্ঠিত সম্পদ সাধারণ জনগণের মাঝে বিলিয়ে দিতেন বলে তার নাম হয় খেলারাম দাতা।
 
ধারণা করা হয় বাড়িটিতে পূর্বে ৪টি ভবন ছিল। যা এখন মাটিতে দেবে গিয়ে শুধু দোতলা বাড়ি রয়েছে। বাড়ির ভিতরের কামরাগুলো খুব ছোট এবং কিছুটা সুরঙ্গের মতো। বেশ কয়েকটি গম্বুজবিশিষ্ট এ বাড়ির ভিতরের পরিবেশ কিছুটা অন্ধকারাছন্ন।

দেয়ালে রয়েছে অসম্ভব সুন্দর কিছু কারুকাজ যা বাড়িটির সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে। এ বাড়িটি প্রায়ই শুটিংস্পট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিছুদিন আগে সরকারি প্রত্নতত্ত্ববিভাগ ভবনটি সংস্কারের কাজ করে।

জর্জবাড়ি কলাকোপায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী অনিন্দ্য সুন্দর জমিদারবাড়ি। ব্রিটিশ আমলের শেষ দিকে নির্মাণ করেন স্থানীয় হিন্দু জমিদার সুদর্শন রায়। বাড়িটি বর্তমানে জর্জবাড়ি নামে পরিচিত। এ বাড়ির সামনে বিশাল প্রাঙ্গন রয়েছে হরেক ফুলের গাছ। একপাশে আছে হরিণের ডেরাও। কলাকোপায় আরও দেখা যাবে ব্যবসায়ী রাধানাথ সাহার বাড়ি, লোকনাথ সাহার বাড়ি (মঠবাড়ি বা তেলিবাড়ি), মধু বাবুর পাইন্নাবাড়ি, পোদ্দারবাড়ি, কালীবাড়ি।

এখানকার অনেক ভবনের নির্মাণশৈলীর সঙ্গে ব্রিটিশ আমলে তৈরি পুরান ঢাকার হিন্দু জমিদার বাড়িগুলোর মিল পাওয়া যায়। কোকিলপেয়ারী জমিদার বাড়ি জর্জ বাড়ির পাশের ভগ্ন প্রায় বাড়িটির নাম কোকিলপেয়ারী জমিদার বাড়ি। কালের সাক্ষীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এ বাড়ির প্রতিটি অংশ জুরে খেলা করছে আলো ছায়া।

২০০ বছরের ভগ্ন বাড়িটি হয়ত কোনো অব্যাক্ত ইতিহাস নিয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে। সামনে ভাঙ্গা মন্দির ভিতরে মস্তকবিহীন একটা মূর্তি বসে আছে ভাঙ্গা বেদীর উপর। তেলেবাড়িটি মঠবাড়ি হিসেবেও পরিচিত। কোকিলপেয়ারী জমিদার বাড়ির ডান দিকের চিকন পথ ধরে একটু সামনে গেলেই হাতের বামে পরবে তেলেবাড়ি। ইছামতি নদীর কোল ঘেঁষে এ তেলেবাড়িটি এখন আনসার ও ভিডিপি ক্যাম্প। এ বাড়িতে এখন ২৯ আনসার ব্যাটালিয়নের বসবাস।

প্রচলিত আছে, এ বাড়ির মালিক লোকনাথ তেল বিক্রি করে ধনী হয়েছিলেন বলে তার নামে এ বাড়ির নাম। মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের সাক্ষী গান্ধীর মাঠ। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় এ অঞ্চলে এসে এখানে সভা করেন মহাত্মা গান্ধী। সেই থেকে এ মাঠটি গান্ধীর মাঠ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।

             বেদখল ও অবহেলায় নিশ্চিহ্নের পথে মহাকবি কায়কোবাদের স্মৃতি বিজরিত পৈতৃক বাড়ি

কবি কায়কোবাদের জন্মস্থান নবাবগঞ্জ। তিনি ১৮৫৭ সালে নবাবগঞ্জ উপজেলার আগলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯২৫ সালে তিনি তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে নিখিল ভারত দ্বারা কাব্যভূষণ’, ‘বিদ্যাভূষণ ও ‘সাহিত্যরত্ন‘ উপাধিতে ভূষিত হন। তাছাড়া এখানে রয়েছে জপমালা রাণীর গীর্জা, বান্দুরা ভাঙ্গা মসজিদ, বান্দুরার হাসনাবাদ গির্জা। যা সহজেই মানুষকে আকৃষ্ট করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নবাবগঞ্জের পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে এখন চিন্তা করছেন স্থানীয় শিল্পপতি ও উদ্যোক্তরা। গত কয়েক বছরের ব্যবধানে কলাকোপায় আধুনিক শিশুতোষ পার্ক গড়ে উঠেছে। আরো ১টি পার্ক নির্মাণের চেষ্টা চলছে।

দোহারের জয়পাড়া এলাকার বাসিন্দা ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা করম আলী জানান, কৃষি ও পর্যটন শিল্প বিকাশের মাধ্যমে কৃষি ও প্রবাসী অধ্যুষিত নবাবগঞ্জ ও দোহারের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন স্থানীয় শিল্পপতি ও সরকারের সহযোগিতা।  

নবাবগঞ্জের বাসিন্দা কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হোসেন জানান, এখন অনেক স্থানীয় উদ্যোক্তা পর্যটন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। নবাবগঞ্জ ও দোহারের পর্যটননির্ভর শিল্প বিকাশে স্থানীয় শিল্পপতিরা উদ্যোক্তরা এগিয়ে আসুক এটা আমরা সকলেই চাই। এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সরকারি উদ্যোগ। এখানকার জলবায়ু এবং মাটি নানা ধরনের কলকারখানাসহ, শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য উপযোগী। অনুকূল পরিবেশও রয়েছে।

                                দোহারে একটি ফসলি জমি থেকে ধান কাটছেন কয়েক চাষি

ফলে কৃষিভিত্তিক শিল্প দোহার ও নবাবগঞ্জ অঞ্চল গড়ে উঠতে পারে। সড়ক পথে রাজধানীর গুলিস্থান থেকে নবাবগঞ্জ উপজেলা সদরের দুরত্ব ৩৩ কিলোমিটার ও দোহারের জয়পাড়া ৩৮ কিলোমিটার। তাছাড়া স্বল্প ব্যয়ে নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলায় কৃষি ভিত্তিক শিল্প গড়ে রাজধানীসহ সারা দেশে বিপনণ করার বাড়তি সুবিধা রয়েছে। এখানে অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি ও জলোচ্ছাসের কোনো ভয় নেই। এ এলাকায় বিভিন্ন ফলের জুস কারখানা, মৎস্য শিল্প, তুলাসহ কৃষি ভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার একটি আদর্শ অঞ্চল।

এসসি/এএস