• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৪, ২০২০, ০২:৪৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১৪, ২০২০, ০২:৪৪ পিএম

ফেসবুক থেকে

এদের কথা মনে পড়ে

এদের কথা মনে পড়ে

গোলাম কিবরিয়া, ডেমরার মাতুয়াইলের মাঝপাড়ায় বাড়ি, ঢাকার সোহরাওয়ার্দি কলেজের ছাত্র। বিএলএফ-এ ঢাকার আমার ব্যান্ডের টুআইসি। আমাদের স্কোয়াড লিডার মোস্তফা মোহসিন মন্টু। ঢাকার গেন্ডারিয়ার কাছেই যাত্রাবাড়ির দয়াগঞ্জে পাক-বাহিনীর ক্যাম্পে রেইডে ১২ অক্টোবর দুপুরে নিহত হয়। এতো সু-প্ল্যান, বারবার রিহার্সাল, উইথড্রয়ালের তিন চারটি পথ নির্দিষ্ট করার পরও সে ফিরে আসতে পারে নি। পরের দিন তার মৃতদেহ, সেখানে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া বাড়িঘরের পাশে অন্যান্য মৃতদেহের মধ্য থেকে উদ্ধার করা হয়। এই বিষয়ে পরে আরো লিখবো।

***

সেপ্টেম্বরের এক বা দুই তারিখে খবর পাই আগস্টের শেষ দিকে ঢাকায় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা গ্রেফতার হয়েছে। খবর পেয়ে আমরা সব শেল্টার, হাইড আউট পরিবর্তন করি। যদিও সেসব মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আমাদের ব্যান্ডের যোগাযোগ ছিল না। তবে তারা আমাদের সাহায্যে সিদ্ধিরগঞ্জে একটা অপারেশন করেছিল। তারা ছিল এফএফ ক্রাক প্লাটুনের। বেশ কয়েকজন গ্রেফতার হয়েছিল। পরে বিস্তারিত জেনেছি। এখন এটা ইতিহাস।

অস্ত্রও উদ্ধার হয়, পত্রিকায় সেসব প্রচার করা হয়। ভেবে পাই না, একজন গ্রেফতার হওয়ার পর, সব খবর পাকবাহিনীর হাতে চলে গেল কী করে। তারা কোন সার্কিট ব্রেক করেনি। নিজের বাড়িতে থাকেই বা কী করে? অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল মুক্তিযুদ্ধের।

ভোর বেলায়, ঢাকার ডেমরার মাতুয়াইলের যে বাড়িতে ছিলাম, সে বাড়ির কর্তা মসজিদে ফজরের নামাজ পড়তে যেয়ে দেখেন, পাকবাহিনী সে গ্রাম ঘিরে ফেলছে। শুধু গ্রাম নয়, প্রায় পুরো ডিএনডি প্রজেক্ট। যাত্রাবাড়ি থেকে ডেমরার শারুলিয়া। টেলিফোনের তাঁর বিছাচ্ছে। অস্ত্রশস্ত্র সাজাচ্ছে। তিনি ফিরে এলেন। আমাকে ঘুম থেকে ওঠালেন। আমি বের হয়ে যেখান দিয়েই যাওয়ার চেষ্টা করি সেখানেই দেখি পাক আর্মি ঘিরে রেখে সামনে অগ্রসর হচ্ছে। শতশত মানুষ দৌড়িয়ে পালাবার চেষ্টা করছিল, তারাও ফিরে আসছে।

অবশেষে মহিলারা মুখে হাড়িপাতিলের কালি মাখছে। ঝোপঝারে আত্মগোপনের চেষ্টা করছে। আমি ফিরে এলাম। বাড়ির কর্ত্রী যাকে আপা বলে ডাকতাম, তিনি বুদ্ধি নিয়ে এলেন, শুয়ে পড় বিছানায়, বললেন আমাকে। আমার বিছানার পাশে ওষুধপত্রের শিশি-বোতল রাখলেন। আর আমার মাথায় পানি দিচ্ছেন তিনি। পাকবাহিনী ঘরে ঘরে প্রবেশ করে চেক করছে। আমাকে দেখে, কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলো পাক সেনা। বাড়ির কর্তা চোস্ত ঊর্দুতে উত্তর দিলেন, বোখার। বাড়ির কর্তা ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসার লাইব্রেরিয়ান ছিলেন। উর্দু ভালো জানতেন।

এটু পরেই গুলির শব্দ পেলাম। আমরা স্তব্ধ। কাছের এক বাড়ির লোক আর্মি দেখে পালাবার চেষ্টা করেছিল। ওকে গুলি করেছে। আর্মির সাথে মিলিশিয়ারা নিহত ব্যক্তির স্ত্রীকে মুরগি ধরে দেওয়ার আদেশ দিলে, মহিলা ভাত ছিটিয়ে মুরগি ধরে ওদের দিয়েছিল। পাশেই পরে ছিল তাঁর মৃত স্বামী ও যুবক পুত্র।