• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১৯, ২০২১, ১০:০৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১৯, ২০২১, ১০:৫২ এএম

সকল মাতৃভাষার জয় হোক

সকল মাতৃভাষার জয় হোক

আজ ১৯ মে। অনেকেই জিজ্ঞেস করবেন ১৯ মে কী? কী হয়েছিল এদিন? আজ কোনো টিভি চ্যানেলে, রেডিওতে বা পত্রিকায় এই খবর আসবে না। অতীতের বছরগুলোর মতোই বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাবে মাতৃভাষার  ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ আত্মত্যাগের ঘটনা।

১৯ মে হলো ভাষাশহীদ দিবস। ২১ ফ্রেব্রুয়ারির মতোই একটি রক্তঝরা দিন। ১৯৬১ সালের এদিনে বাংলা ভাষার দাবিতে ১১ জন মারা গিয়েছিলেন পুলিশের গুলিতে, ভারতের আসাম রাজ্যের একটি শহর শিলচরে। এদিন বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন এক নারী, ১৬ বছরের এক কিশোরী কমলা ভট্টাচার্য্য, ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন, রেজাল্ট দেখে যেতে পারেননি...। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম নারী ভাষাশহীদ। 

১৯ মে আরও শহীদ হন শচীন্দ্র পাল, বীরেন্দ্র সূত্রধর, কানাইলাল নিয়োগী, চন্ডিচরন সূত্রধর, সত্যেন্দ্র দেব, হীতেশ বিশ্বাস, কুমুদরঞ্জন দাস, তারিণী দেবনাথ, সুনীল সরকার ও সুকুমার পুরকায়স্থ।

আসাম রাজ্যের প্রধান ভাষা অহমীয়া হলেও বরাক উপত্যকার করিমগঞ্জ,কাছাড় এবং শিলচর হলো বাঙালিদের ঘাঁটি। দেশ বিভাগের এক বছর পর ১৯৪৮ সালে রেফারেন্ডামের মাধ্যমে সুরমা ভ্যালি (বর্তমান সিলেট বিভাগ) পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু বৃহত্তর সিলেটের তিন-চতুর্থাংশ নিয়ে বরাক ভ্যালি থেকে যায় আসামে। ১৯৬১ সালে আসাম প্রাদেশিক সরকার শুধু অহমীয়া ভাষাকে রাজ্যের একমাত্র সরকারি ভাষা ঘোষণা দিলে ক্ষোভ দানা বাঁধে বাঙালিদের ভেতর। ক্রমশ তা রূপ নেয় আন্দোলনে। তারা বাংলাকেও রাজ্যভাষার মর্যাদা দেওয়ার দাবি তোলেন। 

আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্বে ১৯৬১ সালের ১৯ মে শিলচরে সকাল ৬টা-সন্ধ্যা ৬টা ধর্মঘট পালন করা হয়। বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে ভাষাবিপ্লবীরা যখন স্থানীয় রেলওয়ে স্টেশনে রেলপথ অবরোধ পালন করছিলেন, তখন নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত আসাম রাইফেলসের একটি ব্যাটালিয়ন তাদের বাধা দেয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে আসাম রাইফেলস গুলবর্ষণ করলে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান ১১ জন ভাষাবিপ্লবী। আহত হন অর্ধশতাধিক। রাজ্য সরকার শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত বাতিল করতে বাধ্য হয়। এরপর আসামে বাংলাকে দ্বিতীয় রাজ্যভাষা হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়।

১৯ মে বাংলা ভাষার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কিন্তু দুই বাংলার বাংলা ভাষার রথীমহারথী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো পঁচিশে বৈশাখ বা বাইশে শ্রাবণ নিয়ে যতটা আগ্রহী, ১৯ মে বা ১৬ মার্চ নিয়ে তার ছিটেফোঁটাও নয়। উনিশকে অনেকেই জানেন না। এর মূল কারণ, আমাদের আত্মবিস্মৃতিপরায়ণতা। আরেকটা কারণ হলো দুই দেশেরই রাষ্ট্রযন্ত্র ও গণমাধ্যমে উনিশকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাংলাভাষী মানুষ তাদের ভাষা সাহিত্য বরাবরই উপেক্ষিত। দুই বাংলা বাদেও বাংলার তৃতীয় আরেকটি ভুবন যে ওখানে গড়ে উঠেছে, সে খবর অনেকেই রাখেন না। 

১৯ মে বৈচিত্র্যে ও ব্যাপকতায় এ যাবৎ সংঘটিত বিশ্বের সব ভাষা আন্দোলনকে ছাড়িয়ে গেছে একটি কারণে যে এখানে কেবল বাংলাভাষীরা নয়, অন্য ভাষার মানুষও অংশ নিয়েছিল। সে আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছিল পাহাড় ও সমতলের অবাঙালি জনগণ, এদের অনেকে নেতৃত্বও দিয়েছেন। শিলচরের অনেক বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এমএলএ শ্রীনন্দকিশোর সিংহ ১৯ মের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আসাম রাজ্য বিধান সভা থেকে পদত্যাগ করেন। একটি ভাষার স্বীকৃতির জন্য অন্য ভাষাভাষীরাও আন্দোলন করেছেন এমন ঘটনা পৃথিবীর ভাষাসংগ্রামের ইতিহাসে বিরল।

১৯ মে অমর হোক। 
সকল ভাষাশহীদকে লাল সালাম। 
সকল মাতৃভাষার জয় হোক।