• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ২, ২০১৯, ০৪:৪৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৩, ২০১৯, ০৮:৩২ পিএম

পরিবার যেন অটিজম শিশুর ইতিবাচক দিকগুলোয় মনযোগী হয়

পরিবার যেন অটিজম শিশুর ইতিবাচক দিকগুলোয় মনযোগী হয়

 

অটিজম সমস্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশ বহু বহু পদক্ষেপ গ্রহণ, সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করলেও এখনও যে পরিবারে অটিজম সমস্যাগ্রস্থ ব্যক্তি আছেন, সে পরিবার ডুবে থাকেন বিষণ্নতা, হতাশায়, কখনওবা হীনমন্যতায়। এমন অবস্থার মধ্য দিয়েই আজ ২ এপ্রিল পালিত হলো- বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস।  

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগি অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ জাগরণকে বলেন, অটিজম সমস্যাগ্রস্থদের পরিবারে এমন অবস্থা শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের বহু দেশে আছে। এর কারণ- সংশ্লিষ্ট পরিবার অটিজম শিশুর শারীরিক-মানসিক-দৈহিক নেতিবাচক দিকটাই বেশি দেখেন এবং ভাবেন। কিন্তু সেসব শিশুর মধ্যেও অনেক গুণ প্রকাশ পায় বা পাবার সম্ভবনা তৈরি হয়, যা পরিবারের সদস্যরা দেখেন না। এই মানসিকতা বদলাতে হবে। তার মতে- অটিজম বা স্মায়ূবিকাশ জনিত সমস্যায় আক্রান্তদের সময় মতন সঠিক পরিচর্যা গ্রহণ অনেক প্রয়োজন। এই সুযোগ বর্তমানে দেশে আছে এবং উন্নত হচ্ছে।

বাংলাদেশে অটিজম সমস্যা মোকাবিলায় রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি আছে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়েমা ওয়াজেদও নিজ অবস্থান থেকে সক্রিয় আছেন সমস্যাটি মোকাবিলায়। তারই ঐক্লান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে, আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। ২৭ সদস্য বিশিষ্ট ১৬টি মন্ত্রণালয় এই কমিটির সদস্য পদে আছে। সায়েমা ওয়াজেদ এই কমিটির সভাপতি।  

ক্রমান্বয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অটিজম সেন্টারটিকে ইনস্টিটিউটে রূপান্তর করা হয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরাধীন নন কমিউনিকেবল ডিজিজ বিভাগে গঠন করা হয়েছে অটিজম সেল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটসহ দেশের মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোয় অটিজম কর্নার, সরকারি কর্মকর্তাদের বুনিয়াদী প্রশিক্ষণে অটিজম নিয়ে ধারণা প্রদান অন্তর্ভূক্ত, ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালসহ দেশের সব সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থাপন করা হচ্ছে বিশেষ স্কুল। এরই মধ্যে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে প্রয়াস নাম দিয়ে একটু স্কুল চালু করা হয়েছে।  

এছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ বেশকিছু মন্ত্রণালয় অটিজম মোকাবিলায় বেশ জোরালোভাবে নানা পদক্ষেপও গ্রহণ করেছে। ঢাকার মিরপুরে আছে- সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়াধীন জাতীয় প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন। সেখানে এসব শিশুদের বিনামূল্যে পড়াশোনা, খাবার-দাবার ও থাকার ব্যবস্থা আছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে অটিজম নির্ণয়ের জন্য কর্নারও করা হয়েছে।  

মানসিক ইনস্টিটিউটটের সহযোগি অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ

মানসিক ইনস্টিটিউটটের সহযোগি অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ জাগরণকে বলেন, এতো সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও পরিবারগুলোর মধ্যে হতাশা থাকা একেবারেই অনুচিৎ।  এসব শিশুরা অত্যন্ত মেধাবী হয়ে থাকে, শুধুমাত্র সঠিক পরিচর্যা করতে হয়ে, উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে দিতে হয়। এসব অব্যহত রাখলে সমস্যাগ্রস্থ শিশুটি দক্ষ জনসম্পদে পরিণত হবে। তিনি বলেন, অটিজম মোকাবিলায় আমাদের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি আছে বলেই এতো জোর পেয়েছে ইস্যুটি। এমনকি বৈশ্বিক দরবারেও বাংলাদেশ বহুল প্রশংসিত হয়েছে।  সায়েমা ওয়াজেদের উছিলায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এই লড়াইয়ের জন্য শক্তিশালী বন্ধন তৈরি হয়েছে। তিনি পেয়েছেন আন্তর্জাতিক পুরষ্কারও।  

অটিজম মোকাবিলায় রাষ্ট্রীয় এতো এতো পদক্ষেপের সুফল কতটুকু পাওয়া যাচ্ছে? এমন প্রশ্নে হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, একসময় এসব শিশুকে লোকে পাগল বলত, আরও নানা ভাষায় কটুক্তি করত, শিশুর পরিবার বা বংশকে আড়চোখে দেখত। এখন এটা অনেক হ্রাস পেয়েছে। মানুষজন চিনেছে- অটিজম কী, অটিজম কেন? এটা অনেক বড় অর্জন। তাছাড়া সনাক্ত ও চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এটা তো বাংলাদেশের মতন উন্নয়নশীল দেশের জন্য অনেক বড় ব্যাপার। ১০-১২ বছর আগে এমনটা ছিল না। পরিবর্তন আরও আসবে। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া।  

আরএম/এসজেড