• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ৭, ২০১৯, ০৮:৩০ এএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৩, ২০১৯, ০৮:৩২ পিএম

আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশ অনন্য, তবে মানবৃদ্ধি জরুরি

প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশ অনন্য, তবে মানবৃদ্ধি জরুরি

ইউনিয়ন, থানা বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিকের বদৌলতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশ এখন অনন্য উচ্চতায়। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে আজ ৭ এপ্রিল পালিত হচ্ছে বিশ্বস্বাস্থ্য দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ’সমতা ও সংহতি নির্ভর সার্বজনীন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা’।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ দৈনিক জাগরণকে বলেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে আরও উন্নত করতে অত্যাবশকীয় সেবা প্যাকেজ তৈরি করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বিভিন্ন দাতা সংস্থার সমন্বয়ে তৈরি এই প্যাকেজ খুব দ্রুত চূড়ান্ত শেষে প্রয়োগ শুরু হবে। কত ধরনের সেবা দেয়া হবে, তা উল্লেখ আছে এই প্যাকেজে। এতে অসংক্রামক ব্যাধিকে যুক্ত করা হয়েছে। কেননা, বর্তমানে অসংক্রামক ব্যাধির প্রকোপ বৃদ্ধির দিকে।

বিভিন্ন স্তরের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে- বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় খুব একটা অগ্রসর না হতে পারলেও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় তা পেরেছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি নৈপুণ্য দেখিয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক।

প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী দেশগুলোর অন্যতম এবং কমিউনিটি ক্লিনিক প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় বাংলাদেশকে এই অবস্থানে নিয়ে গেছে- এমন আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাওয়া গেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) কাছ থেকেও।

বর্তমানে প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক আছে দেশজুড়ে। আরও ১ হাজার ২৯টি বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। সব মিলেয়ে ১৪ হাজার ৮৯০টি হবে। এসব পরিচালনার কাজ প্রকল্পের মাধ্যমে শুরু করা হলেও তা আরও ভালভাবে পরিচালনার উদ্দেশে সম্প্রতি ট্রাস্ট গঠন ও আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এর চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা এবং সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী।

প্রতিমাসে প্রায় ৭০ থেকে ৯০ লাখ গ্রামীণ জনগোষ্ঠী কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা পেয়েছেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত ৫০ কোটিরও বেশি রোগী সেবা পেয়েছেন এসব ক্লিনিক থেকে। দেয়া হচ্ছে ৩০ প্রকারের অত্যাবশকীয় ওষুধ। এক জরিপ অনুযায়ী- ক্লিনিকগুলোয় সেবাগ্রহীতাদের ৮৫ শতাংশ প্রাপ্ত সেবায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

কমিউনিটি ক্লিনিক ট্রাস্টের একজন সিনিয়র কর্মকর্তার ভাষ্য- কমিউনিটি ক্লিনিক না হলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সামলানোই দায় ছিল। এটা প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। এটাকে আরও দৃঢ় করতে নিত্যনতুন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

তবে স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক অধ্যাপক রশিদ-ই-মাহবুব দৈনিক জাগরণকে বলেন, যেসব উপায়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে সেসব উপায় ভালো- এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু সমস্যা হলো মানের দিক থেকে। চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে, কিন্তু মানের দিকে খেয়াল করা হচ্ছে না। তাহলে কীভাবে উপযুক্ত চিকিৎসা নিশ্চিত হবে। কমিউনিটি ক্লিনিকে যারা সেবা দিচ্ছেন, তারা প্রফেশনাল নন, তারা প্রোভাইডার। সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) অর্জনের জন্য অবশ্যই সেবার মান উন্নত করা জরুরি। এজন্য যে পরিমাণ অর্থ দরকার, তা-ও সরকাররই সংস্থান করা উচিত। তাছাড়া জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটনো এবং ওষুধের মূল্যহ্রাসের দিকেও দৃষ্টি দেয়া জরুরি।

কমিউনিটি ক্লিনিক সংশ্লিষ্টরা বলছেন- কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম এবং সেবাদানকারীদের করণীয় সম্পর্কে নির্দেশিকা সম্পন্ন করে প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে পৌঁছে দিয়েছে সরকার। নির্দেশিকা টাঙানো থাকায় চিকিৎসা ও ওষুধ নিয়ে অবৈধ কাজ করার সুযোগ থাকছে না। কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) শুক্রবার এবং সরকারি ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন কমিউনিটি ক্লিনিকে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত উপস্থিত থাকতে হয়। প্রশিক্ষণ পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত স্বাস্থ্য সহকারী এবং এফডব্লিউএ-এর কাজে তারা সহায়তা করেন। 

হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা ক্লিনিক খোলা এবং বন্ধ করা, রোগীর উপস্থিতি রেজিস্টারে নাম তোলা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নিশ্চিত করাসহ তাদের কর্মপরিধির আওতাধীন এই মুহূর্তে যেসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা সম্ভব, তা করেন। কমিউনিটি গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন। সার্বিক প্রজনন স্বাস্থ্য পরিচর্যার আওতায় অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের প্রসব-পূর্ব (প্রতিষেধক টিকাদান) এবং প্রসব-পরবর্তী (নবজাতকের সেবা) সেবা দেন। সময়মতো প্রতিষেধক টিকাদান (যক্ষ্মা, ডিপথেরিয়া, হুপিং কফ, পোলিও, ধনুষ্টংকার, হাম, হেপাটাইটিস-বি, নিউমোনিয়া) শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়। 

কমিউনিটি ক্লিনিকে জনগণের জন্য, বিশেষত মহিলা ও শিশুদের অপুষ্টি দূর করার জন্য ফলপ্রসূ ব্যবস্থা নেয়া ও সেবা দেয়া হয়। ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, কুষ্ঠ, কালাজ্বর, ডায়রিয়াসহ সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং সেগুলোর সীমিত চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে। সাধারণ জখম, জ্বর, ব্যথা, কাটা-পোড়া, দংশন, বিষক্রিয়া হাঁপানি চর্মরোগ, ক্রিমি এবং চোখ, দাঁত ও কানের সাধারণ রোগের ক্ষেত্রে লক্ষণভিত্তিক প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। অস্থায়ী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সংক্রান্ত বিভিন্ন উপকরণ, যেমন- কনডম, পিল, ইসিপি সর্বক্ষণিক সরবরাহ ও বিতরণ নিশ্চিত করা হয়। জটিল রোগীদের প্রয়োজনীয় প্রাথমিক সেবা প্রদান করে দ্রুত উচ্চতর পর্যায়ে রেফার করা হয়। সদ্য বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের নিবন্ধীকরণ ও সম্ভাব্য প্রসব তারিখ সংরক্ষণ করতে হয়। মহিলা ও কিশোর-কিশোরীদের রক্তস্বল্পতা শনাক্ত এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে হয়। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং ব্যবস্থাদি থাকা সাপেক্ষে স্বাভাবিক প্রসব পরিচালনা করা হয়। 
কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার ওষুধপত্র ও এমএসআরসহ আবশ্যক দ্রব্যাদির প্রয়োজনীয়তা নির্ণয় করেন। ওষুধপত্র ও এমএসআর সংগ্রহের জন্য ইউনিয়ন মেডিক্যাল অফিসারের মাধ্যমে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং পরিবার কল্যাণ সামগ্রী প্রদানের জন্য উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বরাবর ইনডেন্ট দিয়ে থাকেন। যেসব গর্ভবতী মহিলা কমিউনিটি ক্লিনিক হতে প্রসবপূর্ব ও প্রসবোত্তর সেবা নেননি এবং যেসব নারী/ পুরুষ ইপিআই, যক্ষ্মা, কুষ্ঠ বিষয়ে কমিউনিটি ক্লিনিক হতে সেবা নেননি, স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারীরা তাদের খুঁজে বের করে কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন।

আরএম/ এফসি