• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৫, ২০১৯, ০৫:১৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৫, ২০১৯, ১১:৪৪ পিএম

বহির্বিভাগ সেবা দিয়ে নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউটের নজির

বহির্বিভাগ সেবা দিয়ে নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউটের নজির
জাতীয় নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউট -ছবি : জাগরণ

বহির্বিভাগের কক্ষগুলোর সামনে নেই কোনো শৃঙ্খলাকর্মী, নেই রোগীদের দাঁড়িয়ে থাকা ভীড়, চাপাচাপি, উচ্চশব্দে রোগীর নাম ধরে ডাকাডাকি। নেই উচ্চ শোরগোল বা অনৈতিকভাবে শৃঙ্খলা ভেঙে বহির্বিভাগের কক্ষে রোগী প্রবেশের অসুস্থ প্রতিযোগিতা। শুধুমাত্র ডিজিটাল পদ্ধতি প্রয়োগ করে বহির্বিভাগ শৃঙ্খলার সঙ্গে রোগীর সেবা নিশ্চিত করে অনন্য নজির গড়েছে ঢাকার তেজগাঁওস্থ জাতীয় নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউট।  

২০১৩ সালে ৮ তলা বিশিষ্ট ভবনে ১০০ শয্যা নিয়ে ইনস্টিটিউটের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে এর শয্যা সংখ্যা ১৩৫টি। আরও ১১৫ শয্যা ও ৪টি ফ্লোর বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতিদিন বহির্বিভাগ থেকে ৫০০-৮০০ রোগী সেবা গ্রহণ করছেন।

 জাতীয় নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউটের বর্হিবিভাগ -ছবি : জাগরণ

সোমবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে দেখা যায়, বহির্বিভাগের চেয়ারগুলো কানায় কানায় পরিপূর্ণ। কেউ চেয়ার না পেয়ে পায়চারী করছিলেন, কেউ বহির্বিভাগ ঘেঁষা সিঁড়িতে বসে ছিলেন। দেখা গেল- ইনস্টিটিউটের নিচতলার ৮টি কক্ষ থেকে বহির্বিভাগ সেবা দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি কক্ষের সামনে লাল লাইট সম্বলিত ডিজিটাল বোর্ড দিয়ে কক্ষ নম্বর লেখা আছে। 

৮টি কক্ষের ঠিক মধ্যখানে মাঝারি আকৃতির রঙিন ডিসপ্লে বোর্ড প্রদর্শিত হচ্ছে। যেখানে ভেসে উঠছে, কত নম্বর টোকেনধারী রোগী কত নম্বর কক্ষে যাবেন। সঙ্গে সঙ্গে সেই কক্ষের দরজায় থাকা লাল লাইট সম্বলিত ডিজিটাল বোর্ডে সংশ্লিষ্ট রোগীর টোকেন নম্বর প্রদর্শিত হচ্ছে। একইসঙ্গে কোমল শব্দের মাইকে নারীকণ্ঠে সংশ্লিষ্ট টোকেন নম্বর একের পর এক বলে দেয়া হচ্ছে। সেই অনুযায়ী রোগী যাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের কাছে।  

জাতীয় নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আবু হানিফ দৈনিক জাগরণকে বলেন, এই পদ্ধতি আমাদের কাজে অনেক শৃঙ্খলা এনে দিয়েছে। পরিবেশ ইতিবাচকভাবে বদলে দিয়েছে। রোগী নিজেই দেখে বুঝতে পারছেন যে, কখন তার ডাক পড়ছে বা পড়বে। 

২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে জাতীয় নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউটে ইলেক্ট্রনিক টোকেন পদ্ধতিতে বহির্বিভাগ রোগীর সেবা প্রদান শুরু হয়। খুব অল্প সময়ের মাঝে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এর সুফল পেতে শুরু করে এবং রোগীরাও তা সানন্দে গ্রহণ করে। এটি নিয়ে রোগীদের অভিযোগ খুব একটা নেই। 

সোমবার (১৫ এপ্রিল) নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউটটে প্রথমবারের মতো এসেছেন ইসরাত কবির। তিনি বলেন, সিস্টেম দেখে সত্যিই অনেক ভালো লেগেছে। সাধারণত ব্যাংকে এই সিস্টেমে কাজ করা হয়। খুব সুন্দরভাবে আমি চিকিৎসক দেখাতে পেরেছি, কোনো সমস্যা হয়নি।  

ইসরাতের মতো এমন ভাললাগা কাজ করে অধিকাংশ রোগীর মাঝেই। তবে কিছু রোগী পাওয়া গেছে, যাদের মধ্যে নেতিবাচক অনুভূতি কাজ করে। এমন একজন রোগী আরিফ। তিনি বলেন, আমার পরে টোকেন নিয়েছে, অথচ সে আমার আগে ডাক্তার দেখিয়ে চলে গেল। তাহলে কী দরকার এইসব সিস্টেমের। 

আরিফের টোকেন নম্বর ছিল ১৪০০।  তবে আরিফ স্বীকার করেন- অন্য সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগের চেয়ে এই হাসপাতালের বহির্বিভাগ অনেক শৃঙ্খলার। 

বরিশাল থেকে আসা রোগী ফারজানা বলেন, ‘প্রথমে তো বুঝি নাই সিস্টেম। পরে একজন রোগী সিস্টেমটা বইলা দিল। এখন পুরাপুরি বুঝতে পারছি। বরিশালের কোনো সরকারি হাসপাতালে তো এইটা নাই।’ 

জাতীয় নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আবু হানিফ -ছবি : জাগরণ

নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আবু হানিফ বলেন, পরিবেশ শৃঙ্খলিত থাকলে ভালভাবে কাজ করা যায়। এই টোকেন সিস্টেম আমাদের কাজে স্বচ্ছতা, পরিচ্ছন্নতা, গতি এনেছে। রোগীর আস্থা কুড়াতেও এ পদ্ধতি আমাদের খুব কাজে এসেছে। 

আরএম/ একেএস