• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০১৯, ০৪:০৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৮, ২০১৯, ১০:১২ পিএম

যেভাবে রক্ষা পাওয়া যাবে তীব্র গরমজনিত সমস্যা থেকে 

যেভাবে রক্ষা পাওয়া যাবে তীব্র গরমজনিত সমস্যা থেকে 
তীব্র তাপে পেপার দিয়ে রোদ আটকানোর চেষ্টা পথচারীর- ছবি: কাশেম হারুন

তীব্র দাবদাহ থেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় রোদে না যাওয়া, বেশিক্ষণ না থাকা, তরল জাতীয় খাবার বেশি গ্রহণ, গাঢ় রঙের পোশাক পরিধান না করাসহ নানা ধরণের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।  

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বে-নজীর আহমেদ দৈনিক জাগরণকে বলেন, রোদে বেশিক্ষণ থাকা যাবে না। দেখা যেতে পারে, উচ্চ তাপমাত্রার রোদে বেশিক্ষণ থাকলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। তাছাড়া এমন তীব্র গরম থেকে ডায়রিয়া, টাইফয়েডসহ নানা পানিবাহিত রোগেও আক্রান্ত হবার আশঙ্কা বেশি থাকে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রাক্তন পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান দৈনিক জাগরণকে বলেন, তীব্র তাপমাত্রাজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বজুড়েই প্রতিফলিত হচ্ছে। এর প্রধান কারণ বৈশ্বিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি। এই সমস্যা মোকাবিলার জন্য দরকার সুষ্ঠু, সুচিন্তিত পরিকল্পনা।  

বে-নজীর আহমেদের মতন মাহমুদুর রহমানও বলছেন, এই গরমে ডায়ারিয়াসহ নানা ধরণের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা বাড়ে। 

এর কারণ হিসেবে মাহমুদুর রহমান বলেন, গরমে মানুষ তৃষ্ণার্ত বেশি হয়। ফলে পথেঘাটে, যত্রতত্রস্থান বা উৎস থেকে পানি পান করে। 

তাছাড়া এই গরমে হঠাৎ হঠাৎ মুষলধারে বৃষ্টিপাতও পানিবাহিত রোগ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, মুষলধারে বৃষ্টিপাত হলে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়, জলের শক্তিশালী চাপ-প্রবাহ সৃষ্টি হয়। এটা কোনো না কোনোভাবে ওয়াসার সরবরাহ করা পানি সংযোগের সাথে যুক্ত হয়ে পানি দূষণ করে। 

এভাবে দূষণ সারাবছর হলেও মুষলধারে বৃষ্টির সময় কিছুটা বেশি হয় বলে জোর ধারণা মাহমুদুর রহমানের।  

একটি প্রশ্নে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বে-নজীর আহমেদ বলেন, গরম থেকে সুরক্ষিত থাকতে হলে হালকা রঙের পোশাক পরিধান করা, বিশুদ্ধ পানি পান, রোদে অবস্থানকালে বড় ছাতা ব্যবহার করা, মাঠঘাটের কর্মীদের মাথায় বড় টুপি পরিধান, হাফহাতা শার্ট ইত্যাদি পরিধান করা ভাল।  

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান দৈনিক জাগরণকে বলেন, তীব্র গরমে খাবারও নষ্ট হয়ে যায় দ্রুত। কাজেই নষ্ট বা পুরাতন খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকা জরুরি। 

তীব্রগরমে হৃদরোগী, শ্বাসতন্ত্র রোগীদের জটিলতার পাশপাশি ইনফ্লুয়েঞ্জা, অল্প আকারে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবও দেখা দেয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।  

এদিকে, শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যই নয়, এমন আবহাওয়ায় মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়াও জরুরি বলে মনে করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ। 

তীব্র গরমে আখের রস পান করে তৃ্ষ্ণা মেটাচ্ছেন পথচারীরা- ছবি: কাশেম হারুন

তিনি বলেন, প্রচুর তরল খাদ্য পান করতে হবে। তীব্র রোদে যাওয়া বর্জন করতে হবে। গরমে বেশি ঘেমে গেলে একটু লবণ মিশ্রিত পানি পান করতে হবে। এসব শারীরিক যত্ন নিলেই মানসিক স্বাস্থ্য ভাল থাকবে। 

হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বৈরী প্রকৃতির কারণে অতি উদ্বিগ্নতা, খিটখিটে মেজাজ, তীব্র মানসিক চাপ (একিউট স্ট্রেস ডিসঅর্ডার), মানিয়ে চলার সমস্যা (অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডার), আবেগের সমস্যা, বিষণ্নতা থেকে শুরু করে গুরুতর মানসিক রোগ (সাইকোসিস) ও বিপর্যয়-পরবর্তী মানসিক চাপজনিত রোগ (পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার) ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। 

আবার জলবায়ু পরিবর্তন বা দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ কোনো প্রকৃত শারীরিক অসুস্থতা ছাড়াই মানসিক সমস্যার কারণে শারীরিক উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসতে পারে। সেখানে দেখা যায়, মানসিক কারণে তাদের মধ্যে মাথাব্যথা, ক্লান্তি, বুক ধড়ফড়, খাদ্যে অরুচি, শরীর ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা তৈরি হয়েছে। এ রোগকে বলা হয় সাইকোসোমাটিক ডিসঅর্ডার। এ সময় মানসিক রোগ চিকিৎসকের সহায়তায় চিকিৎসাসেবা নেয়া প্রয়োজন।

আরএম/টিএফ