• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ৭, ২০১৯, ০৭:১৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৯, ২০১৯, ০৯:৪৩ পিএম

কেবিনের অভাবে বার্ন ইউনিটে ভর্তি হতে পারছেন না ‘ট্রিম্যান’ আবুল! 

কেবিনের অভাবে বার্ন ইউনিটে ভর্তি হতে পারছেন না ‘ট্রিম্যান’ আবুল! 


বিরল রোগ আক্রান্ত ‘ট্রিম্যান’ খ্যাত আবুল বাজনাদার কেবিন না পাওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হতে পারছেন না বলে দাবি করেছেন তিনি। অবশ্য চিকিৎসকরা বলছেন, আবুল বাজনাদার নিজেই চিকিৎসা নিতে ঢামেকের বার্ন ইউনিটে আসছেন না। 

উল্লেখ্য, হাত-পায়ে পূর্বের মতন শেকড় সদৃশ বস্তু ক্রমেই বড় হয়ে উঠছে বর্তমানে খুলনায় নিজ বাড়িতে অবস্থানরত আবুল বাজনাদারের।

মঙ্গলবার (৭ মে) দুপুরে আবুল বাজনাদার দৈনিক জাগরণকে বলেন, মাঝখানে ঢাকা মেডিকেল তো গেসিলাম। কেবিন ছিল না। পরে স্যারদের (চিকিৎসক) বইলা বাড়িত চইলা আসি। এতোদিনেও কেবিন পাই নাই। দেখি, ঈদের পরে আবার যামু।

উল্লেখ্য, একটানা আড়াই বছর ঢামেকের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসা গ্রহণ শেষে ২০১৮ সালের ২৭ মে  আবুল বাজনাদার এ হাসপাতাল ছেড়ে যান কাউকে কিছু না জানিয়েই। এরপর গত ২০ জানুয়ারি আবুল বাজনাদার ফিরে আসেন ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে।

গত ২৫ জানুয়ারি আবুল জাগরণকে বলেছিলেন, ‘আমি স্যারদের (চিকিৎসকদের) বইলেসি (বলেছি), আপনারা তো চেষ্টা কম করেন নাই। কিন্তু আবার তো হস্যে (হচ্ছে)। আবার তো সেই আগের মতন অপারেশনই করা হবে। কিন্তু সমস্যাটা তো আবার হবে। বিদেশে গিয়ে দেখতে চাই আরও ভালকিছু হয় কি-না।’ এজন্য সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা চেয়েছিলেন তিনি। এরপর ফের বাড়ি চলে যান তিনি।

কেবিন নিয়ে আবুল বাজানাদারের বক্তব্যের বিষয়ে জাগরণ কথা বলে তার চিকিৎসার প্রধান সমন্বয়কারী ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা ডা. সামন্তলাল সেনের সাথে। তিনি বলেন, আবুলকে তো মেডিকেলে আসতে হবে। না আসলে চিকিৎসা করব কীভাবে?

কেবিনের বিষয়ে আবুলের বক্তব্যের বিষয়ে সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘এটা নিয়ে আবুল কী বলে না বলে, এটা দেখার বিষয় না, তাকে মেডিকেলে আসতে হবে।’

গত ২০ জানুয়ারি বার্ন ইউনিটে ফিরে আসার পর আট সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের অধীনে চিকিৎসা শুরু হয় বাজনাদারের। বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ২৬ জানুয়ারি অপারেশন করে আক্রান্ত স্থানে আবার গজানো শেকড় সদৃশ বস্তু সমূলে তুলে ফেলতে। কিন্তু তা পরে আর করা হয়নি। আবুলও চলে যান খুলনার তার বাড়িতে।

মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে মঙ্গলবার দুপুরে জাগরণকে বলেন, রোগটির চিকিৎসা নেই। তারপরও আমরা চাচ্ছি যেন কার্যকর চিকিৎসা প্রয়োগ করা যায়। সেজন্যই সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের সহযোগিতা চেয়েছিলাম ২০ জানুয়ারি আবুল আমাদের কাছে আসার পর। সিঙ্গাপুর আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছিল। বাজনাদারের কাগজপত্র ইমেইলে পাঠিয়ে আমরা জানতে চেয়েছিলাম, তার চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় কী করা যেতে পারে। উত্তরে তারা আমাদের কাছে সংশ্লিষ্ট বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পাঠিয়েছেন। সেগুলো দেখা হচ্ছে। আর অপারেশন তো করা লাগবেই। না হলে শেকড় সদৃশ বস্তু সরানো অসম্ভব।

আবুলের বিদেশ যাবার ইচ্ছের বিষয়ে তিনি বলেন, আবুল তো আমাদের কাছে স্পষ্টই বলেছে, তিনি বিদেশে যেতে চান। কিন্তু বললেই তো আর সব হয়ে যায় না। দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। তার চিকিৎসায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ আছে। তার অনুমতি ও সহযোগিতা ছাড়া তো বিদেশে পাঠানো সম্ভব না। তাছাড়া বিদেশে যাবার মতন আর্থিক সামর্থ্য আবুলেরও নেই।

২০১৮ সালের ২৭ মে ঢামেক থেকে চলে যাবার পর আবুলের হাত-পা সহ দেহের বিভিন্ন স্থানে শেকড়-সদৃশ বস্তু আবারও বড় হতে থাকে। 

আজ মঙ্গলবার আবুল জাগরণকে বলেন, যত জীবন বাঁচি তত জীবন নাকি এভাবে অপারেশন করে করে শেকড় কেটে রাখতে হবে। এভাবে কী জীবন চলে? এজন্য আমি চাস্যি (চাচ্ছি) বিদেশে চিকিৎসা নিতে। ঢাকা মেডিকেলের স্যারেরা তো কম চেষ্টা করেন নাই। নিজে খেতে পারি না, বসতে পারি না, বাথরুম করতে পারি না, এভাবে আর কতদিন?

২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢামেকে ভর্তির পর চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, আবুল বাজনাদার ‘এপিডার্মোডিসপ্লাসিয়া ভেরাসিফরমিস’ রোগে আক্রান্ত। রোগটি ‘ট্রি-ম্যান’ (বৃক্ষমানব) সিনড্রোম নামে অধিক পরিচিত।  

ঢাকা মেডিকেলে ভর্তির পর ছোট-বড় ২৩টিরও বেশি অস্ত্রোপচার হয়েছে আবুলের দুই হাত ও দুই পায়ে। সর্বশেষ অস্ত্রোপচার হয় ২০১৮ সালের ২৭ জুলাই।

চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী ‘ট্রি-ম্যান সিনড্রোম’ এর কোনো চিকিৎসা নেই। এটা জিনঘটিত রোগ।

আবুলের আগে পৃথিবীতে এই রোগে আক্রান্ত মাত্র ৩ জনের সন্ধান পাওয়া গেছে। ২০০৭ সালের মার্চে রোমানিয়ায় সন্ধান পাওয়া যায় কৃষক আয়ন তোয়াদের। পৃথিবীতে সন্ধান পাওয়া প্রথম বৃক্ষ মানব তিনি। রেডিয়েশন চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। ২০১৩ সালের শেষ দিকে তার দেহে অস্ত্রোপচার করা হয়। ধারণা করা হয়, পরে ক্যান্সার সংক্রমণের শিকার হয়েছিলেন আয়ন। তিনি এখন বেঁচে নেই।

২০০৭ সালের নভেম্বরে ইন্দোনেশিয়ায় সন্ধান পাওয়া যায় ৩৪ বছরের দেদে কসওয়ারার। ২০০৮ সালে অস্ত্রোপচারের পর তার দেহ থেকে অপসারণ করা হয় ছয় কেজি ওজনের আঁচিল। বিরল সেই অস্ত্রোপচার নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করে ডিসকভারি চ্যানেল। পরে অবশ্য দেদের শরীরে ফিরে আসতে থাকে রোগের লক্ষণগুলো। চিকিৎসকরা তাকে বছরে দুইবার করে অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তিনি সেই চিকিৎসা নিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনিও জীবিত নেই।

২০০৯ সালে ডিসকভারি চ্যানেল ‘ট্রিম্যান মিটস ট্রিম্যান’ শিরোনামে আরেক অনুষ্ঠানে ইন্দোনেশিয়ার আরেক ব্যক্তিকে হাজির করে। দেদে কসওয়ারার এলাকায় সন্ধান পাওয়া ওই ব্যক্তি চিকিৎসার পর এখন অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনে।

আরএম/আরআই