• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মে ১৭, ২০১৯, ০৪:৫১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১৭, ২০১৯, ০৪:৫১ পিএম

বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস আজ

৮ কারণে বাংলাদেশের তরুণরা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিতে

৮ কারণে বাংলাদেশের তরুণরা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিতে

যে ৮ কারণে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয় মানবদেহে সেসব কারণ বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম চর্চা বেশি করে। তাই বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অংশ উচ্চ রক্তচাপের শিকার হচ্ছেন। চিকিৎসকদের দৃষ্টিতে এই সংখ্যা ক্রমাগতই বাড়ছে।

বেশি লবণ গ্রহণ, শারীরিক শ্রম না করা, বসে কাজ করার সাথে অভ্যস্ততা, অতিরিক্ত মেদ, মদ্যপান বা মাদকাসক্তি, শব্দ দূষণ, ফার্স্ট ফুড গ্রহণ, বিষণ্নতা বা অন্য মানসিক রোগের প্রভাব- এই ৮ কারণ তরুণদের মাঝে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এর প্রভাবে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা ব্রেন স্ট্রোকের মতন ঘটনা ঘটে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে বছরের পর বছর পরিবারের জন্য ভয়াবহ কষ্টের বস্ততে পরিণত হন তারা। এক পর্যায়ে মৃত্যুর মুখ দেখতে হয় তাদের। কারও ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের পরপরই মৃত্যুও ঘটে যাচ্ছে। অন্যদিকে যাদের কিডনিতে সমস্যা ও ডায়াবেটিকস আছে তারাও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিতে আছেন।

এ অবস্থায় আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘আপনার রক্তচাপ মাপুন’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে দেড়শ' কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। এই রোগে প্রতি বছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়। 

বাংলাদেশে কী পরিমাণ তরুণ প্রতি বছর উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হচ্ছেন বা এর প্রভাবে অকালে মৃত্যুর সাথে আলিঙ্গন করছেন- এ ধরনের কোনো তথ্য সরকারের কাছে নেই। তবে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী-দেশের মোট জনসংখ্যার ২ ভাগ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ জনিত সমস্যায় আক্রান্ত। এর মধ্যে শতকরা ৮ দশমিক ৯ ভাগ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকে। এর চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। তাই যেকোন উপায়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন অনুষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, অতিরিক্ত লবণের ব্যবহারের কারণে প্রায় ৬০ শতাংশ রোগী এই রোগে আক্রান্ত হয়। এছাড়া ধূমপান, অ্যালকোহল সেবন, চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ, হাঁটাচলা ও ব্যায়াম না করার কারণে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়। উচ্চ রক্তচাপের কারণে মস্তিস্কের রক্তক্ষরণ, হার্ট অ্যাটাক, কিডনি বিকল ও চোখের রেটিনা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ থেকে দূরে থাকতে নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, চর্বিযুক্ত খাবার কম খেতে হবে। ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন করতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক বে-নজীর আহমেদ দৈনিক জাগরণকে বলেন, নিয়মিত ফার্স্ট ফুড গ্রহণ, শারীরিক পরিশ্রম থেকে বিরত থাকা, মাদকাসক্তি, বিষণ্নতা, শব্দ দূষণ আমাদের তরুণ সমাজকে ক্ষতি করছে বেশি। এসবের জেরেই তাদের মাঝে উচ্চ রক্তচাপের আশঙ্কা দেখা দেয়।

তরুণরা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হবার বিষয়ে অধ্যাপক বে-নজীর আহমেদের মতো বিএসএমএমইউ’র মেডিসিন বিভাগের মেডিকেল অফিসার মোহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেনও ফার্স্ট ফুড, শারীরিক পরিশ্রম থেকে বিরত থাকাকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, এসব ফার্স্টফুড অত্যন্ত ক্ষতি করছে তরুণদের। তাছাড়া কোনো কাজকর্ম করেন না এমন তরুণও কম নয়। অনেকে চাকরি পাচ্ছেন না, অনেকে খোঁজেন না বা করতে চান না। এতে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে। চাকরি না পেয়ে হতাশ হন তরুণরা।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, রক্তনালী বা ধমনীর দেয়ালের বিপরীততে রক্ত প্রবাহের ধাক্কাকেই রক্তচাপ বলে। রক্তচাপ খুব বেড়ে গেলে তা হৃদপিণ্ডের কাজ অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দেয় এবং রক্তনালীর মারাত্মক ক্ষতি করে। ১২০/৮০-এর অধিক রক্তচাপকে উচ্চ রক্তচাপ বলে। ওপরের মাত্রাটিকে সিস্টোলিক চাপ বলে, যা হৃদযন্ত্রের স্পন্দনের সময়কার রক্তচাপ। নিচের মাত্রাকে ডায়াস্টোলিক চাপ বলে, যা হৃদস্পন্দনের অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের রক্তচাপ যখন হৃদযন্ত্রে রক্ত এসে জমা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপের কারণ জানা যায় না।

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনকে ‘নীরব ঘাতক’ বলা হয়। বছরের পর বছর এটি উপসর্গহীন থাকতে পারে। প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন জানে না যে, তাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে। এটি হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, রক্তনালী, মস্তিষ্ক এমনকি কিডনিরও ক্ষতি করতে পারে। যাদের রক্তচাপ ক্রমাগতভাবে স্বাভাবিক মাত্রার সামান্য ওপরে থাকে; অর্থাৎ সিস্টোলিক মাত্রা ১২০ থেকে ১৩৯ এর মধ্যে এবং ডায়াস্টোলিক মাত্রা ৮০ থেকে ৮৯ এর মধ্যে থাকলে তাকে প্রি-হাইপারটেনশন বলে। তাদের উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হবার ঝুঁকি অনেক বেশি। চিকিৎসকেরা তাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে রক্তচাপ কমানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

অধ্যাপক বে-নজীর আহমেদ বলেন, তরুণদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে, পরিশ্রমী হতে হবে। তাছাড়া ধূমপান, মাদকদ্রব্য গ্রহণ ছাড়তে হবে। ফলমূল-শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সর্বোপরি স্বাস্থ্যকর পরিবেশে জীবন-যাপনও জরুরি। এসব মেনে চললে উচ্চ রক্তচাপ থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব।

আরএম/এসএমএম