• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মে ২০, ২০১৯, ০৫:২২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২০, ২০১৯, ০৫:৪৩ পিএম

ঢাকা মেডিকেলের কেবিনে ভর্তি হলেন ‘ট্রিম্যান’ আবুল!

ঢাকা মেডিকেলের কেবিনে ভর্তি হলেন ‘ট্রিম্যান’ আবুল!
আবুল বাজনাদার

বিরল রোগ আক্রান্ত ‘ট্রিম্যান’ খ্যাত আবুল বাজনাদার আবারো ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের কেবিনে ভর্তি হয়েছেন।

রোববার (১৯ মে) দুপুরে ভর্তি শেষে তাকে কেবিন দেয়া হয় বলে দৈনিক জাগরণকে জানান আবুল বাজনাদার।

এর আগে, ৭ মে আবুল জানিয়েছিলেন- কেবিন না পাওয়ায় ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হতে পারছেন না। অবশ্য চিকিৎসকরা বলছেন, আবুল বাজনাদার নিজেই চিকিৎসা নিতে ঢামেকের বার্ন ইউনিটে আসছেন না।

হাত-পায়ে পূর্বের মতো শেকড় সদৃশ বস্তু ক্রমেই বড় হয়ে উঠছে আবুল বাজনাদারের। একটানা আড়াই বছর ঢামেকের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসা গ্রহণ শেষে ২০১৮ সালের ২৭ মে কাউকে কিছু না জানিয়েই আবুল বাজনাদার হাসপাতাল ছেড়ে যান। এরপর গত ২০ জানুয়ারি তিনি ফিরে আসেন ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে।

সোমবার (২০ মে) দুপুরে আবুল বলেন, বড় স্যারেরা (সিনিয়র চিকিৎসক) কেউ এখনও আসেন নাই। রাউন্ডে যারা আসেন, তারাই এসে দেখে গেছেন।

গত ২৫ জানুয়ারি আবুল জাগরণকে বলেছিলেন, ‘আমি স্যারদের (চিকিৎসকদের) বইলেসি (বলেছি), আপনারা তো চেষ্টা কম করেন নাই। কিন্তু আবার তো হস্যে (হচ্ছে)। আবার তো সেই আগের মতন অপারেশনই করা হবে। কিন্তু সমস্যাটা তো আবার হবে। বিদেশে গিয়ে দেখতে চাই আরও ভালকিছু হয় কী না। এজন্য সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা চেয়েছিলেন তিনি। এরপর ফের বাড়ি চলে যান।

গত ২০ জানুয়ারি বার্ন ইউনিটে ফিরে আসার পর ৮ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের অধীনে আবুলের চিকিৎসা শুরু হয়। বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ২৬ জানুয়ারি অপারেশন করে আক্রান্ত স্থানে আবার গজানো শেকড় সদৃশ বস্তু সমূলে তুলে ফেলতে। কিন্তু তা পরে আর করা হয়নি। আবুলও চলে যান খুলনার তার বাড়িতে।

২০১৮ সালের ২৭ মে ঢামেক থেকে চলে যাবার পর আবুলের হাত-পাসহ দেহের বিভিন্ন স্থানে শেকড়-সদৃশ বস্তু আবারও বড় হতে থাকে।

আজ সোমবার আবুল জাগরণকে বলেন, যত জীবন বাঁচি তত জীবন নাকি এভাবে অপারেশন করে করে শেকড় কেটে রাখতে হবে। এভাবে কী জীবন চলে? এজন্য আমি চাস্যি (চাচ্ছি) বিদেশে চিকিৎসা নিতে। ঢাকা মেডিকেলের স্যারেরা তো কম চেষ্টা করেন নাই। নিজে খেতে পারি না, বসতে পারি না, বাথরুম করতে পারি না, এভাবে আর কতদিন?

২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢামেকে ভর্তির পর চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, আবুল বাজনাদার ‘এপিডার্মোডিসপ্লাসিয়া ভেরাসিফরমিস’ রোগে আক্রান্ত। রোগটি ‘ট্রি-ম্যান’ (বৃক্ষমানব) সিনড্রোম নামে অধিক পরিচিত। 

ঢাকা মেডিকেলে ভর্তির পর ছোট-বড় ২৩টিরও বেশি অস্ত্রোপচার হয়েছে আবুলের দুই হাত ও দুই পায়ে। সর্বশেষ অস্ত্রোপচার হয় ২০১৮ সালের ২৭ জুলাই।

চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী ‘ট্রি-ম্যান সিনড্রোম’ এর কোনো চিকিৎসা নেই। এটা জিনঘটিত রোগ।

আবুলের আগে পৃথিবীতে এই রোগে আক্রান্ত মাত্র ৩ জনের সন্ধান পাওয়া গেছে। ২০০৭ সালের মার্চে রোমানিয়ায় সন্ধান পাওয়া যায় কৃষক আয়ন তোয়াদের। তিনি প্রথম বৃক্ষ মানব। রেডিয়েশন চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। ২০১৩ সালের শেষ দিকে তার দেহে অস্ত্রোপচার করা হয়। ধারণা করা হয়, পরে ক্যান্সার সংক্রমণের শিকার হয়েছিলেন আয়ন। তিনি এখন আর বেঁচে নেই।

২০০৭ সালের নভেম্বরে ইন্দোনেশিয়ায় সন্ধান পাওয়া যায় ৩৪ বছরের দেদে কসওয়ারার। ২০০৮ সালে অস্ত্রোপচারের পর তার দেহ থেকে অপসারণ করা হয় ৬ কেজি ওজনের আঁচিল। বিরল সেই অস্ত্রোপচার নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করে ডিসকভারি চ্যানেল। পরে অবশ্য দেদের শরীরে রোগের লক্ষণগুলো ফিরে আসতে থাকে। চিকিৎসকরা তাকে বছরে দুইবার অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তিনি সেই চিকিৎসা নিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনিও জীবিত নেই।

২০০৯ সালে ডিসকভারি চ্যানেল ‘ট্রিম্যান মিটস ট্রিম্যান’ শিরোনামে আরেক অনুষ্ঠানে ইন্দোনেশিয়ার আরেক ব্যক্তিকে হাজির করে। দেদে কসওয়ারার এলাকায় সন্ধান পাওয়া ওই ব্যক্তি চিকিৎসার পর এখন অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনে।

 আরএম/একেএস