• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুন ১০, ২০১৯, ০৯:৫৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১০, ২০১৯, ০৯:৫৫ পিএম

নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে কাদের উস্কানিতে বিএসএমএমইউ উত্তপ্ত?

নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে কাদের উস্কানিতে বিএসএমএমইউ উত্তপ্ত?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) মেডিকেল অফিসার নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে অকৃতকার্যদের জোট বেঁধে করা আন্দোলনকে কেউ কেউ উস্কে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উস্কানিদাতারা এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই কর্মকর্তা, তাদের কেউ আছেন চিকিৎসক নেতা। চাকরি ও রাজনৈতিক কারণে উস্কানিদাতা ও তাদের অকৃতকার্য স্বজনরা সরাসরি আন্দোলনে আসতে পারছেন না।

শোনা যাচ্ছে- চাকরির নিশ্চয়তা দিয়ে উস্কানিদাতারা কিছু পরীক্ষার্থীর সঙ্গে আর্থিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। বাস্তবে তারা অকৃতকার্য হয়েছেন। এজন্য উস্কানিদাতারা পরীক্ষায় অনিয়ম-দুর্নীতি, ভিসিকে দোষারোপ করে অকৃতকার্যদের উস্কে দিয়েছেন। তাছাড়া অকৃতকার্যদের কেউ কেউ আছেন, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের স্বজন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া দৈনিক জাগরণকে বলেন, অকৃতকার্যরা তো হতাশ। এ থেকেও তারা আন্দোলন করতে পারেন। তারপরও আমাদের সন্দেহ হচ্ছে, তাদেরকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েরই কেউ উস্কে দিচ্ছে কি-না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিষয়টি জানিয়েছি। তারা এটি দেখছেন।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়াকে সভাপতি ও রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল হান্নানকে সদস্য সচিব করে গঠিত ১০ সদস্যের নিয়োগ কমিটি আজ সোমবার (১০ জুন) মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করছে। ভিসি ভবনের দোতলায় প্রো-ভিসির (প্রশাসন) কক্ষের সারিতে দেখা গেছে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা বসে আছেন। সেখানে যেতে হলে আনসার সদস্যদের পেরিয়ে যেতে হচ্ছে। সন্দেহভাজনদের তল্লাশিও করা হচ্ছে।

দুপুর ১টা থেকে ১৫ জনের মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হচ্ছিল। পরীক্ষার হলে যাওয়ার আগে ভিসি অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া দৈনিক জাগরণকে বলেন, আগামী ৮ জুলাই পর্যন্ত সাক্ষাৎকার চলবে।

তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ থেকে শুরু হওয়া মৌখিক পরীক্ষায় প্রতিদিন সকালে ৩৫ জনের সাক্ষাৎকার নেয়ার কথা থাকলেও আগামী শনিবার (১৫ জুন) থেকে আরও ১৫ জন পরীক্ষার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হবে। ৮ জুলাইয়ের আগেই মৌখিক পরীক্ষা শেষ হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে ব্যাপক পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও নজরদারি করে যাচ্ছেন। এজন্য অকৃতকার্যরা আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেননি।

রোববার লিখিত পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের বিক্ষোভ কর্মসূচি এবং তাদের উপর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লাঠিচার্জের ঘটনায় আজ মৌখিক পরীক্ষা হওয়া নিয়ে শঙ্কা ছিল। তবে যথাসময়ে পরীক্ষা গ্রহণ শুরু করে দেয় কর্তৃপক্ষ।

মেডিকেল অফিসার নিয়োগে বেশ কয়েক দফা তারিখ পরিবর্তনের পর গত ২২ মার্চ লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর বিভিন্ন ভবনে অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষায় দুশ পদের বিপরীতে অংশ নেন ৮ হাজার ৫৫১ জন চিকিৎসক। গড়ে প্রতি পদের বিপরীতে অংশগ্রহণকারী ছিলেন ৪৩ জন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে দুশ পদের মধ্যে ১৮০ জন এমবিবিএস চিকিৎসক এবং ২০ জন বিডিএস চিকিৎসক নেয়া হবে। পরীক্ষার ফল দুদিন পর ঘোষণার কথা থাকলেও তা না করে ১২ মে প্রকাশ করা হয়। এতে প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ ৭২৯ জনের তালিকা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আন্দোলনকারীরা বলছেন- লিখিত পরীক্ষা গ্রহণের আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছিল। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেও বিতর্কিত প্রশ্নপত্রেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এমনকী ২২ মার্চ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও ৪ দিন আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষ কক্ষে প্রশ্নপত্র খোলা হয়। যেখানে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা উপস্থিত ছিলেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর উল্লেখ থাকলেও বিদ্যুৎ কান্তি সূত্রধর নামে ৩৮ বছর বয়সের এক প্রার্থীকে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে নিয়োগ চূড়ান্ত করেছে। তথ্য রয়েছে, তার সঙ্গে উপাচার্যের সখ্য রয়েছে আগে থেকেই। নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলের তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উচ্চপদস্থ ব্যক্তি, যেমন- উপাচার্যের সন্তান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের জামাতা, উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী-২ এর স্ত্রীসহ অনেকেই প্রথম সারিতে রয়েছেন। কিন্তু নিয়মানুযায়ী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে সংযুক্ত কেউ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না। অথচ সেটিই হয়েছে এবং তারাই তাদের স্বজনদের নিয়োগ আগে নিশ্চিত করেছেন। 

নিয়োগ পরীক্ষার দিন মেডিকেলের পাশাপাশি একই প্রশ্নে ডেন্টাল পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী প্রশ্নপত্র ভিন্ন হওয়ার কথা। এ বিষয়ে রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত অভিযোগ করলেও কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ফলাফল প্রস্তুত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ফলাফল প্রকাশের আগেই অনেক পরীক্ষার্থীর কাছে মেডিকেল অফিসার পদে নিয়োগ পরীক্ষার রোল-নম্বরসহ একটি অনুলিপি পাওয়া যায়, যা সবার মনে ক্ষোভ ও শঙ্কা তৈরি করে। প্রকাশিত ফলাফলের সঙ্গে আগে পাওয়া সেই ফলাফলের হুবহু মিল পাওয়া যায়। এসব বিষয়ে অভিযোগ করলেও আমলে নেয়নি প্রশাসন। এছাড়া নিয়ম না থাকলেও পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে উত্তর সরবরাহ করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া দৈনিক জাগরণকে বলেন, খুব স্বচ্ছভাবে এবং কঠোরভাবে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে। তারপরও নানা অভিযোগ তুলে অকৃতকার্যরা আন্দোলন করেই যাচ্ছে। তাদের দাবি অযৌক্তিক। মেধার ভিত্তিতেই ফল প্রকাশ হয়েছে। অনিয়মের কোনো প্রশ্নই আসে না। তারা যত যা-ই করুক, এ বিষয়ে কোনো আপস হবে না। আর তারা তো এখন আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন, এখন আদালত থেকেই চূড়ান্ত সমাধান আসবে। আন্দোলনই যদি করে, তাহলে তারা আদালতে কেন গেল?

আরএম/ এফসি