ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীর মৃত্যুর ঘটনায় অধ্যক্ষসহ ৩ শিক্ষককে বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। একইসঙ্গে ওই তিনজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এরা হলেন- অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতী শাখা প্রধান জিনাত আরা ও শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনা। আজ বুধবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান। ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের সব শাখার ক্লাস ও পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
দুপুরে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ভিকারুননিসা স্কুলের ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় প্ররোচিত করা অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকসহ অভিযুক্ত ৩ শিক্ষকের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে।
অরিত্রী আত্মহত্যার ঘটনায় মঙ্গলবার ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলেন, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ - ফাইল ছবি
এদিকে অরিত্রি অধিকারীর মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের বিচার ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো আজ বুধবারও (৫ ডিসেম্বর) বিক্ষোভ করছেন অভিভাবকরা ও শিক্ষার্থী। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সকাল থেকে রাজধানীর বেইলি রোডের ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের প্রধান ক্যাম্পাসের সামনে অবস্থান নিয়েছেন তারা। পরীক্ষা বর্জন করে রাজপথে নেমে আসে শিক্ষার্থীরা। অভিভাবকরাও যোগ দিয়েছেন তাদের সঙ্গে।
রাজধানীর বেইলি রোডের ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের প্রধান ক্যাম্পাসের সামনে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষামন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিন দিনের মধ্যে সুষ্ঠু বিচার না হলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। এ ছাড়া কলেজ অধ্যক্ষ ও শাখাপ্রধানের পূর্ণ বরখাস্ত, গভর্নিং বডি বাতিল চেয়েছে তারা।
অরিত্রী অধিকারী ছবি : সংগৃহীত
গত রোববার পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারী (১৫)। ফোনে নকল থাকার অভিযোগ তুলে তাকে পরীক্ষা থেকে বহিস্কার করা হয়। এর পর তার বাবা-মাকে ডেকে পাঠায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। সোমবার সকালে তারা স্কুলে যান এবং মেয়ের হয়ে দফায় দফায় ক্ষমা চান। উপাধ্যক্ষের কক্ষ থেকে তাদের বের করে দেয়া হয়। পরে তারা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কক্ষে গেলে তিনিও তাদের অপমান করেন এবং স্কুল থেকে অরিত্রী অধিকারীকে ছাড়পত্র দেয়ার হুমকি দেন। নিজের সামনে বাবা-মায়ের এমন অপমান সইতে না পেরে ওই দিন দুপুরে শান্তিনগরের বাসায় ফিরে গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে ওই ছাত্রী।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের প্রধান ক্যাম্পাসের সামনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা - ছবি: কাশেম হারুন
ওই ঘটনার জেরে মঙ্গলবার শিক্ষার্থী অভিভাবকদের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে ভিকারুননিসা ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের বিক্ষোভের মধ্যেই অরিত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা তদন্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষ পৃথক দুটি কমিটি করেছে। পাশাপাশি হাইকোর্টও এ ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন।
জাহো/এফসি