• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০১৯, ১১:০৭ এএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ১, ২০১৯, ১১:০৮ এএম

দেশজুড়ে প্রাণঘাতী ডেঙ্গু আতঙ্ক, রেহাই পাচ্ছে না কেউ

দেশজুড়ে প্রাণঘাতী ডেঙ্গু আতঙ্ক, রেহাই পাচ্ছে না কেউ

দেশ জুড়ে প্রাণঘাতী ভয়াবহ ডেঙ্গু আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ ডেঙ্গু আগ্রাসনে রেহাই পাচ্ছে না কেউ। মন্ত্রী থেকে শুরু করে চিকিৎসক, পুলিশ, আইনজীবী, সাবেক সাংসদ, উপসচিবের স্ত্রী, সরকারি আমলা, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক এবং ঢাবির শিক্ষার্থী আক্রান্ত হচ্ছেন। গতকাল ৩১ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত প্রাণঘাতী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে গত বছর ২০১৮ সালে রেকর্ডসংখ্যক ১০ হাজার ১৪৮ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়। চলতি বছরের গতকাল (৩১ জুলাই) পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রেকর্ডসংখ্যক ১৭ হাজার ১৮৩ রোগী ভর্তি হয়েছেন। শুধু চলতি জুলাই মাসে ইতিহাসের সর্বোচ্চ প্রায় ১৫ হাজার (১৪ হাজার ৯৯৬ জন) ডেঙ্গু রোগী সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

এরমাঝে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আহম মোস্তফা কামাল ওরফে লোটাস কামাল, চিত্রনায়ক আলমগীর, পুলিশ, চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ প্রায় ১৬ হাজার ব্যক্তি। এছাড়া ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৬ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মনিটরিং সেলের হিসেব মতে, হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন শাহাদাত হোসেন হাজরা, ডিএমপির পুলিশের বিশেষ শাখার সাবইন্সপেক্টর কোহিনুর বেগম, রাজধানীর নারী চিকিৎসক তানিয়া সুলতানা, সাভারের জুয়েল মাহমুদ নয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী স্বাধীন, রায়েরবাগে ওয়াকর্সপের মালিক এবং ফরিদপুরের চর ভদ্রাসন এলাকা সেলিম বিশ্বাস, গাজীপুরের কাপাসিয়ার আবদুল করিম সরকার, বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের নাসির খানের ছেলে আসলাম খান ও পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার গোসনতারা গ্রামের আমদ আলীর ছেলে সোহেল, ফরিদপুরের রাবেয়া, আজমপুরের ফাতেমা, এলিফ্যান্ট রোডের নাসিমা, কামরাঙ্গীরচরের হাফিজা, ডেমরার রাজু, লালবাগের ফরহাদ, গাজীপুরের রিতা ও রবিউলসহ ১৬ জনের মৃত্যুর হিসেব পাওয়া গেছে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ তথ্য, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুসারে ৮ জনের মৃত্যুর কথা বলা হলেও গতকাল (৩১ জুলাই) ডেঙ্গু রোগে মৃতের সংখ্যা ১৫ বলে জানিয়েছে। তবে বেসরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি বলে জানা গেছে। আইইডিসিআর এর তথ্য অনুসারে ১৫ জন মৃতের মধ্যে এপ্রিলে ২ জন, জুনে ২ জন ও চলতি জুলাই মাসে ১১ জন মারা গেছেন।

এদিকে, ডেঙ্গু নিয়ে নতুন করে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২২১ জন ভর্তি হয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, বর্তমানে এখানে চিকিৎসাধীন আছেন ৬৭৯ জন ডেঙ্গু রোগী। এছাড়া মিটফোর্ড হাসপাতালে নতুন ভর্তি ১০৫ ও চিকিৎসাধীন ২৯৯ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে নতুন ভর্তি ৪৮ ও চিকিৎসাধীন ১২১ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নতুন ভর্তি ৬১ ও চিকিৎসাধীন ২৬৬ জন, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নতুন ভর্তি ৪২ ও চিকিৎসাধীন ২১৬ জন, বারডেম হাসপাতালে নতুন ভর্তি ১৭ ও চিকিৎসাধীন ৫২ জন, বিএসএমএমইউতে নতুন ভর্তি ২৬ এবং চিকিৎসাধীন ৯৬ জন, পুলিশ হাসপাতালে নতুন ভর্তি ৩৩ এবং চিকিৎসাধীন ১৩২ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন ভর্তি ৬৩ এবং চিকিৎসাধীন ২৫৩ জন, বিজিবি হাসপাতালে নতুন ভর্তি দুই জন এবং চিকিৎসাধীন ৩০ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নতুন ভর্তি ৯০ এবং মোট চিকিৎসাধীন আছেন ২৪৭ জন।

অপরদিকে, ঢাকা শহরের বাইরে ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোতেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এসব জেলার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন ১৪০ জন, তাদের নিয়ে মোট চিকিৎসাধীন আছেন ২৫৪ জন। পাশাপাশি খুলনা বিভাগে নতুন ডেঙ্গু রোগী ৫৬ এবং মোট চিকিৎসাধীন ১৫১ জন, রাজশাহী বিভাগে নতুন ৫৬ জন এবং মোট চিকিৎসাধীন ১৯৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে নতুন ৫৫ জন এবং মোট চিকিৎসাধীন ১০৪ জন, সিলেট বিভাগে নতুন ৫৫ এবং মোট চিকিৎসাধীন ৭০ জন, রংপুর বিভাগে নতুন রোগী ২০ এবং মোট চিকিৎসাধীন ৮৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে নতুন রোগী ৯ জন এবং মোট চিকিৎসাধীন ২৫ জন, বরিশাল বিভাগে নতুন শনাক্ত ৬ জন এবং মোট হাসপাতালে ভর্তি ২৫ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকা অনুযায়ী, ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোনা জেলা বাদে দেশের অন্য সব জেলায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। ডেঙ্গু বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা আগস্ট মাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে ডেঙ্গু সংশ্লিষ্ট এডিস মশার প্রজনন বাড়তে পারে। 

তবে, হাসপাতালগুলোতে যথেষ্ট সিট না থাকায় অনেক রোগীকে ভর্তি করা যাচ্ছে না। তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। ডেঙ্গু আতঙ্ক নিয়ে হাসপাতালে ছুটছেন রোগী ও তার স্বজনরা। ডেঙ্গু রোগীর স্বজনরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। ডেঙ্গু রোগীদের নিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে বাণিজ্য করার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এজন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালকে জরিমানাও করা হয়েছে বুধবার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ জানিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পুরো ঢাকাই এখন ডেঙ্গু ঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকার প্রায় একশত এলাকার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। পরবর্তীতে বিশ্লেষণ করে জানানো হবে কোন এলাকা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে শয্যা বাড়িয়ে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও অধিক হারে নগরায়নের কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে বলে ডিজি মন্তব্য করেন।

এইচ এম/টিএফ

আরও পড়ুন