• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০১৯, ০৬:৫৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ৯, ২০১৯, ০৬:৫৭ পিএম

কা-ডিঙ্গা-পেপো: শয়তানি শক্তির করাল থাবায় বাংলাদেশ!

কা-ডিঙ্গা-পেপো: শয়তানি শক্তির করাল থাবায় বাংলাদেশ!

বাংলাদেশে বর্তমানে ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ আকার ধারণ করেছে। প্রতিবছর জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস ডেঙ্গু রোগের মৌসুম বলা হলেও, এ বছর আগে-ভাগে এ রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ফলে মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক আতঙ্ক। সরকারি তথ্য অনুযায়ি, আজ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৪ হাজার ৬৬৬ জন। চলতি বছরে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে (জানুয়ারি থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত) ২৯ জনের মারা যাওয়ার তথ্য সরকারিভাবে বলা হলেও বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ নানা সূত্র বলছে মৃত্যুর সংখ্যা ৭০ ছাড়িয়ে গেছে।

বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রথম প্রাদুর্ভাব ২০০০ সালে। সে বছরই প্রথম এডিস এজিপ্টি নামের মশাটির নাম শুনেছিল ঢাকাবাসী। প্রথম বছর আনুমানিক ৫ হাজার রোগী আক্রান্ত হয়েছিল ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা শহরে; মারা গিয়েছিল ৯৩ জন। এর দুই বছর পর ২০০২ সালে ৬২৩২ জন আক্রান্ত হয় ডেঙ্গুতে। মারা যায় ৫৮ জন। ৩ বছর পরে মৃত্যুর সংখ্যা ধীরে ধীরে প্রায় শূন্যে নেমে আসে। তবে এটি আবার ২০১৮ সালে ফিরে আসে। সেবার, এতে ২৬ জন মারা যায় এবং ১০,১৪৮ জন আক্রান্ত হয়।

|| 'ডেঙ্গু': এক শয়তানি শক্তির কালো থাবা

ডেঙ্গু নামটি কোনো মৌলিক ভাষার শব্দ থেকে আসেনি। ধারণা করা হয় যে, আফ্রিকার সোয়াহিলি ভাষার প্রবাদ ''কা-ডিঙ্গা পেপো' থেকে 'ডেঙ্গু' নামটি এসেছে, যার অর্থ ব্যাখ্যা করা হয়েছে, 'শয়তানের শক্তির (কড়াল থাবায়) কাছে আটকে যাওয়ার মতো ব্যথা। তবে নেদারল্যান্ডসের গবেষক ডি. এ. ব্লেইজিস-এর ব্যাখ্যায় এর অর্থ যা দাঁড়ায়, তার সঙ্গে বর্তমান প্রেক্ষাপটের মিল রয়েছে। তিনি জানান, সোয়াহিলি ভাষার 'ডিঙ্গা' শব্দটি মূলত স্প্যানিশ শব্দ 'ডেঙ্গু' থেকে আসতে পারে, যার মানে হলো 'সতর্ক থাকা'। আর বর্তমানের প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে, নির্ধারিত কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি না থাকায় ডেঙ্গুরোগের হাত থেকে বাঁচার উপায় ঐ সতর্ক থাকা। আরেকটি ধারণা চালু আছে যে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর দাসরা এই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অনেকটা ত্যাড়াব্যাকা হয়ে হাঁটতো বলে তাদের ডাকা হতো ' ডান্ডি ফিভার' সেখান এই 'ডেঙ্গু' নামটির উল্লেখ এসেছে।

ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাস জনিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ। বিশেষ ধরনের এডিস প্রজাতির স্ত্রী মশার কামড়ের মাধ্যমে এ রোগের ভাইরাসের সংক্রামণ শুরু হয়। এদের মাঝে প্রাথমিক প্রজাতিটি হচ্ছে 'অ্যাইজিপটি' (Ae. aegypti) শ্রেণিভুক্ত। তবে 'অ্যালবোপিকটাস' (Ae. albopictus) দ্বিতীয় প্রজন্মের এডিস প্রজাতির মশার মাধ্যমেও এই রোগের সংক্রামণ হচ্ছে। এই প্রজাতির দ্বারা সংক্রামিত ডেঙ্গুরোগই তুলোনামূলক ভয়াবহ হয়ে থাকে।

সংক্রমণের তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে সচরাচর এই জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা দেয়। উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, পেশিতে ও গাঁটে ব্যথা এবং গায়ের চামড়ায় ফুসকুড়ি। দুই থেকে সাত দিনের মাঝে সাধারণত ডেঙ্গু রোগী আরোগ্য লাভ করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, রোগটি মারাত্মক রক্তক্ষরী রূপ নিতে পারে যাকে ডেঙ্গু রক্তক্ষরী জ্বর (ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার) বলা হয়। এর ফলে রক্তপাত হয়, রক্ত অনুচক্রিকার মাত্রা কমে যায় এবং রক্ত প্লাজমার নিঃসরণ ঘটে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কখনোবা ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম দেখা দেয়। ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কমে যায়। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগীর চাপ। প্রতিদিনই পুরনো রেকর্ড অতিক্রম করে নতুন রেকর্ড করছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রুগীর সংখ্যা।

|| কবে প্রথম ডেঙ্গু জ্বর রোগটি শনাক্ত হয়?

ডেঙ্গু অনেক প্রাচীন একটি রোগ। ডেঙ্গু জ্বরের ঘটনার প্রথম বিবরণ পাওয়া জিন বংশের (২৬৫-৪২০ খ্রীষ্টাব্দ) এক চীনা মেডিক্যাল এনসাইক্লোপিডিয়ায়, (বিশ্বকোশ) যেখানে উড়ন্ত পতঙ্গের সাথে সম্পর্কযুক্ত “জলীয় বিষ”-এর কথা বলা হয়েছে। ১৭শ শতাব্দীর এক মহামারীর বিবরণও পাওয়া যায় । কিন্তু ডেঙ্গু মহামারীর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রথম বিবরণ পাওয়া যায় ১৭৭৯ ও ১৭৮০ তে। যখন এক মহামারীর কবলে পড়েছিল এশিয়া, আফ্রিকা ও উত্তর আমেরিকা। তখন থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত মহামারী অনিয়মিত ছিল। তবে, ১৯০৬ সালে “এডিস ইজিপটাই” মশার পরিবাহিতা সম্পর্কে সবাই নিশ্চিত হয়, এবং ১৯০৭ সালে ভাইরাস ঘটিত রোগের মধ্যে ডেঙ্গু হয়ে ওঠে দ্বিতীয় (ইয়েলো ফিভার-এর পরেই)।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় (১৯৩৯-৪৫) ও তারপর ডেঙ্গুর লক্ষণীয় বিস্তারের কারণ হিসাবে পরিবেশগত ধ্বংসের কথা বলা হয়। একই প্রবণতা রোগের বিবিধ সেরোটাইপের নতুন নতুন এলাকা বিস্তারে এবং ডেঙ্গু হেমারেজিক ফিভারের উদ্ভবে দেখা যায়। রোগের এই চরম রূপের বিবরণ ১৯৫৩ সালে প্রথম ফিলিপাইন্সে পাওয়া যায়। ১৯৭০-এ এটি শিশু মৃত্যুর এক প্রধান কারণ হয়ে ওঠে এবং আমেরিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ১৯৮১ সালের মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায় ডেঙ্গু হেমারেজিক ফিভার ও ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম প্রথম পরিলক্ষিত হয়,যখন অনেক বছর আগের DENV-1 আক্রান্তরা DENV-2তে আক্রান্ত হয়। বিশ শতকের শেষ ২৫ বছরে এই রোগটির ব্যাপকভাবে বিস্তার ঘটে। সম্প্রতি DENV-3 ও DENV-4 টাইপের লিথ্যাল ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রামণ এ রোগের প্রকট আরো তীব্র করে দিয়েছে। ডব্লিউএইচও

তথ্যসূত্র: 
১. ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন 
২. উইকিপিডিয়া 
৩. ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ
৪. বিশেষ প্রতিবেদন: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে ডেঙ্গুর বৈশ্বিক পরিস্থিতি- দুলাল আহমদ চৌধুরী, দৈনিক জাগরণ

এসকে

আরও পড়ুন