• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০১৯, ০৯:৪৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ১০, ২০১৯, ০৯:৫০ পিএম

ডেঙ্গুভীতি কাটছেই না

ডেঙ্গুভীতি কাটছেই না
ঢাকার একটি হাসপাতালে ডেঙ্গুজ্বরাক্রান্ত রোগীর সেবা দিচ্ছেন এক নার্স -বিবিসি বাংলা

গণমাধ্যমকর্মী মাহফুজ রানা শুক্রবার (৯ আগস্ট) দুপুরে বাসায় একটি মশা মারেন। মশাটির দেহে সাদা সাদা ফোটা ছিল, দেখতে অনেকটাই এডিস মশার মতো। তবে মশাটি এডিস মশা কি-না তা তিনি নিশ্চিত নন। মশাটি মারার পর তিনি দেখতে পান মশাটির দেহ ছিল রক্তে টইটুম্বর। আর সেটাই ভীতির সঞ্চার করে মাহফুজ রানার মনে। এমন অবস্থায় তিনি শরণাপন্ন হলেন সহকর্মী ইমনের। বললেন, আমার বউ-বাচ্চা তো বাসাতেই থাকে, আমিও থাকি। মশাটা আমাদেরকেই কামড়ে রক্ত নিয়েছে। এখন ডেঙ্গু পরীক্ষা করা উচিত কি- না। জবাবে ইমন বলেন, যদি জ্বর না আসে বা ডেঙ্গুর লক্ষণ প্রকাশ না পায় তাহলে পরীক্ষা করে লাভ নেই।

শনিবার (১০ আগস্ট) দৈনিক জাগরণকে ইমন বলেন, আসলে ভয় পেয়ে মাহফুজ রানা এ রকম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। চারদিকে যেভাবে ডেঙ্গুর ছড়াছড়ি, সেক্ষেত্রে এমন ভয় পাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

শুধু মাহফুজ রানাই নন, ডেঙ্গুভীতি কাজ করছে বোধসম্পন্ন প্রায় সব মানুষের ভেতরেই।

চলতি বছরের জুলাই থেকে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা ঢাকাসহ সারাদেশে হু হু করে বাড়তে শুরু করে। ফলে বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল—  সবখানেই কমবেশি সবাই আছেন ডেঙ্গুর ভয়াল ভীতিতে। 

৯ আগস্ট (শুক্রবার) সকাল ৮টা থেকে ১০ আগস্ট (শনিবার) সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা শহরসহ দেশের ৬৩ জেলায় (রাজশাহী ছাড়া) ২ হাজার ১৭৬ জন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ভর্তি হওয়ার খবর মিলেছে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম জানায়, নতুন আক্রান্ত ২ হাজার ১৭৬ জন নিয়ে এ বছর (১০ আগস্ট পর্যন্ত) সারাদেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার ৮৪৪ জনে। এর মধ্যে এখনও বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৯ হাজার ৪২০ জন।

গত ২৪ ঘণ্টাতেই ঢাকা বিভাগে (শহর ব্যতীত) ২৭৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২২৬ জন, খুলনা বিভাগে ১২৬ জন, রংপুর বিভাগে ৭১ জন, রাজশাহী বিভাগে ১১৪ জন, বরিশাল বিভাগে ১৭৮ জন, সিলেট বিভাগে ৩২ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৮৭ জন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত দেশজুড়ে (ঢাকা শহর ব্যতীত) ১২ হাজার ১৯৬ জন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

ঢাকার বাইরে স্থানীয় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪ হাজার ১৬২ জন।

ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত ২৯ জনের মারা যাওয়ার তথ্য সরকারিভাবে বলা হলেও বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ নানা সূত্র বলছে সংখ্যাটা ৭৯ জনেরও বেশি।

বেসরকারি একটি হাসপাতালের রোগ নির্ণয় বিভাগের কর্মী হাশেম আলী দৈনিক জাগরণকে জানান, ডেঙ্গুর পরীক্ষা ‘এনএস১’ করাতে প্রতিদিন যে পরিমাণে রক্তের নমুনা আমরা পরীক্ষা করি, তার মাত্র ১০ ভাগ ডেঙ্গুজ্বরের ভাইরাস পাওয়া যায়। বাকিরা আতঙ্ক থেকে সন্দেহ দূর করার জন্য রক্ত পরীক্ষা করাতে আসেন।

‘‘পরীক্ষা করাতে পরামর্শ না দিলেও রোগীর চাপাচাপি, অনুরোধের কারণে লিখতে বাধ্য হই। তাতে বোঝাই যাচ্ছে— মানুষটা কতটা ভীতির মধ্যে রয়েছেন’’

রাজধানীর কলাবাগানে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মুকিতুল আলম। তিনি জানালেন, জ্বর জ্বর লাগে না কিন্তু শরীরে ব্যথা হয়- তখন রোগী এসে বলেন ডেঙ্গু টেস্ট দিতে। জ্বর যদি হয়েও থাকে আর সেটার বাহ্যিক লক্ষণ যদি ডেঙ্গুর মতো নাও হয়, তাহলে তো কথাই নেই। পরীক্ষা করাতে পরামর্শ না দিলেও রোগীর চাপাচাপি, অনুরোধের কারণে লিখতে বাধ্য হই। তাতে বোঝাই যাচ্ছে— মানুষটা কতটা ভীতির মধ্যে রয়েছেন।

রাজধানীর ধানমণ্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ‘এনএস১’ পরীক্ষা করান নাফিস খান। ফল আসে নেগেটিভ। দৈনিক জাগরণকে তিনি বলেন, হালকা জ্বর ছিল। মনে হচ্ছিল ডেঙ্গু না। কিন্তু ভাবলাম, কয় টাকাই লাগবে, পরীক্ষাটা করিয়ে নিশ্চিত হয়ে নেই। কেন-না, চারদিকে শুধু ডেঙ্গুর কথাই শুনছি। 

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক বেনজির আহমেদ দৈনিক জাগরণকে বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে এখন দেশে যে পরিস্থিতি উদ্ভব  হয়েছে, তাতে মানুষের ভেতর ভীতি কাজ করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে জ্বর হলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সে সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।

ছবি বিবিসি বাংলা

আরএম/এসএমএম

আরও পড়ুন