• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০১৯, ০৮:১৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ১৬, ২০১৯, ০৮:১৫ পিএম

ডেঙ্গু পরিস্থিতি

শক সিনড্রোম ও হেমারেজিকের প্রভাবে এবার মৃত্যু বেশি

শক সিনড্রোম ও হেমারেজিকের প্রভাবে এবার মৃত্যু বেশি
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের চিত্র-ছবি বিবিসি বাংলা

ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে এবার যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের বেশিরভাগই মৃত্যু হয়েছে হেমারেজিক ও শক সিনড্রোমে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ‘ডেঙ্গুজ্বরে মৃত্যু সংক্রান্ত’ পর্যালোচনা কমিটি এমনটাই তথ্য দিয়েছে। রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা কেন্দ্র (আইইডিসিআর) এ পর্যালোচনা কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ৪০ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। তবে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী এই সংখ্যা শতাধিক। আর আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার ঘরে পৌঁছে গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘হেমারেজিক’ ও ‘শক সিনড্রোম’ হচ্ছে ডেঙ্গুর পৃথক দুটি পর্যায় এবং দুটিই বিপজ্জনক। এ সময় রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা বাধ্যতামূলক। এমনকি বেশিরভাগর ক্ষেত্রে আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন পড়ে। রোগী হেমারেজিক পর্যায়ে চলে গেলে দেহের ভেতর রক্তক্ষরণ হয়। একইসঙ্গে রক্তের প্লাটিলেট কমতে শুরু করে। এই হেমারেজিকের পরবর্তী রূপই হচ্ছে শক সিনড্রোম। যা রোগীর জন্য আরও ভয়ঙ্কর।

—শক সিনড্রোম এর উপসর্গ—
● শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা হওয়া কিংবা শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বৃদ্ধি ● ত্বক ঠাণ্ডা হওয়া ● ত্বকের ভেতরের অংশে রক্তক্ষরণের কারণে ত্বকের ওপর লালচে ছোপ ছোপ দাগ হওয়া ● বমি, মল কিংবা প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া ● প্রচণ্ড পেটব্যথা ও অনবরত বমি হওয়া ● নাক ও দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ ও অবসাদ ● কখনও মস্তিষ্কের ভেতর রক্তক্ষরণ হতে পারে

...............................................................

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা কেন্দ্রের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান দৈনিক জাগরণকে বলেন, হেমারেজিক বা শক সিনড্রোম হলে তীব্র পেট ব্যথা, হৃৎপিণ্ডের সমস্যা বৃদ্ধি ও মস্তিষ্কে সমস্যা দেখা দিতে পারে। শুধু এসবই নয়, কিডনি, ফুসফুস, লিভারেও মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এবারের ডেঙ্গু ভাইরাসের রূপ তার আগের চেয়ে ভিন্ন রূপে প্রকাশ পেয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পর্যালোচনা কমিটি খতিয়ে দেখেছে, মারা যাওয়া ৪০ জনের মধ্যে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে হেমারেজিকের প্রভাবে। আগের বছরগুলোতে শক সিনড্রোম বা হেমারেজিকের প্রভাব এ বছরের মত ততটা ভয়ানক ছিল না। কিন্তু কেন এবার বেশি- এর সুনির্দিষ্ট উত্তর জানা নেই কারও।

আইইডিসিআর বলছে, এবার ডেঙ্গু ভাইরাস ‘ডেনভি-৩’ এর প্রকোপ বেশি, যার উপসর্গ ও জটিলতা অনেক বেশি ভয়াবহ।

ভবিষ্যতে ডেঙ্গুজ্বর আরও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি একদিনে বা স্বল্পসময়ে তৈরি হয়নি, গত প্রায় ২০ বছর ধরে বাংলাদেশে যে ডেঙ্গু সংক্রমণ হচ্ছে তার ধারাবাহিকতায় এরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। 

ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি টাইপ রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- DENV-1, DENV-2, DENV-3 ও DENV-4 

বে-নজির আহমেদ বলেন, কেউ যদি এই চারটির যে কোনও একটিতে আক্রান্ত হন, তাহলে সেই একটি টাইপ দ্বারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আর কখনই সংক্রমণ হবে না। তবে নতুন টাইপ দিয়ে তিনি আক্রান্ত হতে পারেন। যদি হয়েই যান, তাহলে নতুন টাইপ আগের সংক্রমণে সৃষ্ট ইমিউনোগ্লোবিউলিনের সঙ্গে বিক্রিয়ায় সেই ব্যক্তির মাঝে একটা রিঅ্যাকশন সৃষ্টি করে যেটা জটিল ডেঙ্গুরোগের প্রকাশ ঘটাতে পারে এবং কখনও কখনও সেটা মাত্রাতিরিক্ত ভয়ানক রূপ আকার ধারণও করতে পারে। 

তিনি আরও বলেন, হয়তো এবার যারা মৃত্যুবরণ করেছেন কিংবা প্রবল ঝুঁকিতে আছেন ইত্যাদি তারা আগে যে টাইপের ভাইরাস দিয়ে সংক্রমিত হয়েছিলেন এবার সে টাইপের নয়, অন্য টাইপের ভাইরাস ধারা সংক্রমিত হয়েছেন।

আশঙ্কা প্রকাশ করে বে-নজির আহমেদ বলেন, এবার রোগীরা যে টাইপের ভাইরাস দিয়ে সংক্রমিত হলেন, পরে যদি আক্রান্ত হন, সেটা হবে অন্য টাইপের ভাইরাস দিয়ে। সেটাই হবে সবচেয়ে দুশ্চিন্তার ও ভয়ের জায়গা। সেজন্য ভবিষ্যতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কী হতে পারে, সেটা বলা মুশকিল এবং তা যে আশঙ্কাজনক হবে না, তা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা কেন্দ্রের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান দৈনিক জাগরণকে বলেন, এবারের পরিস্থিতি দেখার পরও যদি ডেঙ্গু রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। 

আরএম/এসএমএম

আরও পড়ুন