• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৯, ০৯:৫৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৯, ০৯:৫৫ পিএম

সেই পর্দার কথা শুনলে আঁতকে ওঠেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা

সেই পর্দার কথা শুনলে আঁতকে ওঠেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউর পর্দা কেনাকাটায় যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, সেই পর্দার নাম শুনলেই এখন আঁতকে উঠছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এ যেন রাজা-বাদশাহদের ব্যবহার্য বস্তু।

সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পর্দা দুর্নীতির কথা বলে এমন দৃশ্যই পেয়েছে দৈনিক জাগরণ। কয়েকজন কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানিয়ে দিয়েছেন- তাদের কক্ষে এসব নিয়ে কথা বলা তাদের জন্য বিপজ্জনক। নিজ নাম প্রকাশ করে এ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য তো দূরের কথা, ঘটনার কথা বলতেই তারা চেয়ারে নড়েচড়ে বসেন, একইসঙ্গে কণ্ঠে চলে আসে শুষ্ক শুষ্ক ভাব।

অতি সম্প্রতি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ (ফমেক) হাসপাতালে আইসিইউর (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) রোগীকে আড়াল করে রাখার এক সেট পর্দার দাম ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয়ের খবর ফাঁস হয়। যা গণমাধ্যমে আসার পর দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। এমনকী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠানের আলোচনায় এই ঘটনা ঠাঁই পায় জোরালোভাবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডাইরেক্টর (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ও চিকিৎসক সত্যকাম চক্রবর্তী জানান, বিষয়টিকে উচ্চ আদালত দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এর বাইরে আর কিছু বলা সম্ভব নয়।

শুধু পর্দা নয়, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনাকাটায় প্রায় ৪১ কোটি টাকা দুর্নীতির তথ্যও উঠে আসে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক তদন্তে। ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে এসব সরঞ্জাম কেনাকাটা করা হয়। দরপত্রের মাধ্যমে ২০১২-১৬ সাল পর্যন্ত উন্নয়ন প্রকল্পে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স অনিক ট্রেডার্স ওই হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জামাদি ও মালামাল সরবরাহ করে।

অভিযোগ- ২০১২-১৬ সাল পর্যন্ত উন্নয়ন প্রকল্পে হাসপাতালটি ১১ কোটি ৫৩ লাখ ৪৬৫ টাকার মেডিকেল যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনাকাটা করে। এতে বিল দেখানো হয়েছে ৫২ কোটি ৬৬ লাখ ৭১ হাজার ২০২ টাকা। এ কেনাকাটাতেই মেসার্স অনিক ট্রেডার্স বাড়তি বিল দেখিয়েছে ৪১ কোটি ১৩ লাখ ৭০ হাজার ৭৩৭ টাকা। বিষয়টি ওই সময়ের ফমেক কর্তৃপক্ষ কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে কাজ করলেও বিপত্তি বাঁধে সর্বশেষ ১০ কোটি টাকার একটি বিল নিয়ে। সর্বশেষ ১০ কোটি টাকার বিলটিতে চিকিৎসা সরঞ্জামাদিতে বেশি দাম নেয়া হয়েছে- এ মর্মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিলটি আটকে দেয়। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স অনিক ট্রেডার্স ওই বিল পেতে হাইকোর্টে একটি রিট করলে বিষয়টি ফাঁস হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি বিভাগের পরিচালকের কাছে দৈনিক জাগরণ পর্দাসহ অন্যান্য জিনিস কেনাকাটায় দুর্নীতির কথা উপস্থাপন করে। এসময় এই পরিচালক কিছুটা ইতস্ততবোধ করে মৃদু হাসি দেন। তারপর বলেন, আসলে এ বিষয়ে কথা বলা বিপজ্জনক। আপনি একটু চা পান করেন। অনুরোধ, আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না। আমি বলতে পারব না।

জাগরণ প্রতিবেদক চা পান করার সময় এক ফাঁকে তিনি বলেন, আইসিইউর জিনিসপত্র এমনিতেই ব্যয়বহুল। কিন্তু ফরিদপুর মেডিকেলের বিষয়টি একটু অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। আর কিছু বলব না।

এরপর জাগরণ যায় অধিদপ্তরের আরেকটি বিভাগের পরিচালকের কাছে। তাকে কিছু প্রশ্ন করা হয়। তিনি বেশ ভড়কে যান। টেবিল থেকে উঠে তিনি তার কক্ষের দরজা আটকে এসে এ প্রতিবেদককে খুব নরম সুরে বলেন, দেখেন, আমি এ বিষয়ে কিছু শুনেছি। আমাদের অধিদপ্তরের কিছু দুর্নীতিবাজ লোকজন এর সঙ্গে নাকি যুক্ত। আর কিছু জানি না।

অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক বিভাগ ঘটনাটি নিয়ে বেশ পর্যদুস্ত। কেননা, প্রতিনিয়ত তাদের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছে সাংবাদিক যাচ্ছেন বা মোবাইল ফোন করছেন। তা ছাড়া দুদক থেকেও তাদের কাউকে কাউকে ফোন করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের অনেকেই এ বিভাগে এ বিষয় নিয়ে প্রতিনিয়তই ডাকেন বা খোঁজ করেন। 

এ বিভাগের তৃতীয় শ্রেণির একজন কর্মচারী বলেন, হাসপাতাল ও ক্লিনিক বিভাগের চেয়ার খুব খারাপ। খুব কম পরিচালক বা উপ-পরিচালক আছেন যারা সৎ। এ পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালের বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনাকাটায় যত দুর্নীতি হয়েছে, ততটিতেই এ বিভাগের ঊর্ধ্বতনদের যোগসাজশ ছিল।

এ বিষয়ে জানার জন্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের নম্বরে মোবাইল ফোন করেও পাওয়া যায়নি।

আরএম/ এফসি

আরও পড়ুন