• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৯, ১০:১৩ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৯, ১০:১৩ এএম

সংকট সমাধানের উদ্যোগ

১০ হাজার বন্দির চিকিৎসায় একজন চিকিৎসক

১০ হাজার বন্দির চিকিৎসায় একজন চিকিৎসক
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জ

সারাদেশে ৬৮টি কারাগারে বন্দির সংখ্যা ৮৮ হাজার ১৪৯ জন। কিন্তু এই বিপুল সংখ্যক কারাবন্দির জন্য চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ৯ জন। গড়ে দশ হাজার বন্দির জন্য চিকিৎসক মাত্র একজন। 

কারা অধিদফতর সূত্রমতে, দেশের ৬৮টি কারাগারে বন্দিদের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে ৪০ হাজার ৬৬৪। কিন্তু বর্তমানে বন্দি রয়েছে ৮৮ হাজার ১৪৯ জন। যা ধারণক্ষমতা চাইতে দ্বিগুণেরও বেশি। এই বিপুল-সংখ্যক বন্দির জন্য চিকিৎসক মাত্র ৯ জন। এ হিসেবে গড়ে ১০ হাজার কারাবন্দির জন্য রয়েছেন একজন চিকিৎসক। ৯ জন চিকিৎসকের মধ্যে কেরানীগঞ্জ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ২ জন। কাশিমপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, গাজীপুর ও কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন করে চিকিৎসক রয়েছেন। এছাড়া কারা অধিদফতরে কর্মরত রয়েছেন একজন চিকিৎসক।

এদিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চিকিৎসক সংকটের চিত্র তুলে ধরে সহকারী সার্জন ডা. খুরশিদ আলম বলেন, আমাদের কেন্দ্রীয় কারাগারে সহকারী সার্জন পদ আছে ৫টি। চিকিৎসক আছেন ২ জন। দশ হাজারের বেশি বন্দিকে সেবা দিচ্ছি মাত্র দুজন চিকিৎসক। ডিপ্লোমা পোস্ট আছে তিনটি, আছেন একজন।  ফার্মাসিস্ট পোস্ট আছে দুটি, আছেন একজন। এই লোকবল নিয়ে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যেতে আমাদের প্রতিনিয়তই হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই দুরবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বারবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালি করছে কারা অধিদফতর। বছরের পর বছর চাহিদার কথা জানানোর পরও চিকিৎসক সংকট দূর হচ্ছে না। এ সংক্রান্ত বিষয়ে বারবার চিঠি চালাচালি করেও সমাধান না পাওয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে আলাদা মেডিকেল ইউনিট গঠনের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খোঁজা হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণায় সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ, কারাগার ও আনসারের জন্য আলাদা মেডিকেল ইউনিট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। যা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে আরও  এক বছর বেশি সময় লাগবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

কারা অধিদফতর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, চলমান সংকটের মধ্য দিয়েই কারাবন্দিদের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। শিগগিরই এই সংকটের সমাধান হচ্ছে না।

এদিকে কারাগারে নিয়োগ পেতে চিকিৎসকদের অনীহা রয়েছে। এই অনীহা চিকিৎসক সংকটকে আরও বাড়িয়েছে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, কারা অধিদফতরে নিয়োগ পাওয়া নিয়ে অনীহা থাকার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। পদোন্নতি ও উচ্চশিক্ষার মতো সুযোগ না থাকাসহ বেশ কিছু কারণে চিকিৎসকরা কারাগারে নিয়োগ পেতে চান না। একাধিক কারা চিকিৎসক জানান, কারাগারে চিকিৎসক পোস্টটি হলো ব্লক পোস্ট। যেখানে পদোন্নতি নেই, উচ্চশিক্ষার সুযোগ নেই, পদ-পদবি নেই বলে কেউ ওখানে যেতে চান না।

কারা প্রশাসন সূত্র জানায়, বিগত কয়েক বছরে কারাবন্দিদের জন্য চিকিৎসক চেয়ে শতাধিকবার স্বরাষ্ট্র ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে কারা অধিদফতর। কিন্তু কাজ হয়নি। তাই বিকল্প ভাবা হচ্ছে। ঠিক কী কারণে চিকিৎসক নিয়োগ হচ্ছে না, তা বলতে পারছেন না কেউ। চিকিৎসক সংকট নিরসনে গত আগস্ট মাসেও ১৪১ জন চিকিৎসক চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কারা অধিদফতরের অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেন। ওই সময় তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে আলাদা মেডিকেল ইউনিট গঠনের নির্দেশনা দেন। যে ইউনিটের মাধ্যমে কারা, পুলিশ, বিজিবি, হাসপাতাল ও আনসার পরিচালিত হাসপাতালগুলোর জন্য চিকিৎসক, নার্স ও প্যারামেডিক নিয়োগ দেওয়া হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে আলাদা মেডিকেল ইউনিট গঠনের প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কারাগারে চিকিৎসক সংকট অনেকটাই দূর হবে বলে মনে করেন কারা অধিদফতরের অতিরিক্ত আইজিপি কর্নেল আবরার হোসেন। তিনি বলেন, এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটা নিজস্ব মেডিকেল ইউনিট গঠনের জন্য নিয়মিত মিটিং চলমান রয়েছে। এই মেডিকেল ইউনিট হলে কারাগারে চিকিৎসক সংকট দূর হবে।
 
এবিষয়ে কারা অধিদফতরের মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা বলেন, গত ৮ সেপ্টেম্বর সংসদীয় কমিটির প্রেজেন্টেশনেও চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি হাইলাইটস করা হয়েছে। কেন পাওয়া যাচ্ছে না, এটা বলা দুরূহ। আমি আসার আগে একবার নিয়োগও দেওয়া হয়েছিল। কয়েকজন যোগ দিলেও বেশিরভাগ চিকিৎসক যোগ দেননি। পৃথক মেডিকেল ইউনিটের মাধ্যমে চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষা, প্রমোশন, র‌্যাংক-ব্যাজের মতো বিষয়গুলো নিশ্চিত করা গেলে কারাগারের মতো জায়গাতে চিকিৎসকরা নিয়োগ পেতে আগ্রহী হবেন মনে করেন তিনি।

কামাল পাশা বলেন, যারা বন্দি আছেন  তারা এ দেশের নাগরিক। অন্য নাগরিকদের যেমন চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার আছে, বন্দিদেরও সেই অধিকার রয়েছে। আমি তাদের দায়িত্বে আছি। আমার পক্ষ থেকে বিভিন্ন সভা বা রাউন্ডটেবিলে তাদের এই সমস্যার কথা তুলে ধরছি। আমি চাই এ সমস্যার সমাধান হোক।

এবিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) হাবিবুর রহমান খান বলেন, আমরা সব সময়ই কারাগার, পুলিশসহ অন্যদের চিকিৎসক দিয়ে সহযোগিতা করি। আমাদের নিজেরই চিকিৎসক সংকট রয়েছে। যে কারণে অন্যদের চাহিদামতো চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এইচ এম/বিএস 
 

আরও পড়ুন