• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৯, ০৯:১৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৯, ০৯:২৬ এএম

সুযোগ-সুবিধার অভাব

মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে কাজ করছেন টেকনোলজিস্টরা

মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে কাজ করছেন টেকনোলজিস্টরা

মারাত্মক তেজস্ক্রিয়তার ঝুঁকি নিয়েই দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের রেডিওলজি, কার্ডিওলজি এবং রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগের চিকিৎসক, টেকনোলজিস্টসহ কর্মচারীদের কাজ করতে হচ্ছে। এ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা নেই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব বিভাগে কর্মকর্তাদের ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। আরও আশঙ্কার বিষয় এসবের প্রভাব শুধু কর্মরত ব্যক্তির মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে না। এমন হতে পারে পরবর্তী এক বা একাধিক প্রজন্মের মাঝেও এর নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেয়। কর্মরত ব্যক্তি হৃদরোগ, স্মরণশক্তি লোপ পাওয়া, অল্প বয়সে বৃদ্ধ হওয়া, চোখে ছানি পড়া, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস বা হারানো, মাথা ঘোরানো, বমি বমি ভাব হওয়া, পায়খানায় সমস্যা, দৃষ্টিশক্তি লোপ পাওয়াসহ নানা শারীরিক বা মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন।

ঢাকার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ঘুরে জানা যায়- বিভিন্ন হাসপাতালের এক্সরে, সিটিস্ক্যান, কার্ডিয়াক ক্যাথ ল্যাব ও রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগ থেকেই তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায়। এসব বিভাগে কাজ করতে তেজস্ক্রিয়তা প্রতিরোধক পোশাক পরার নিয়ম আছে। কিন্তু এসব সহজলভ্য না হওয়ায় বেশিরভাগই পোশাক পড়েন না। শরীরে কতটা তেজস্ক্রিয়তা জমা হয়েছে, তা পরিমাপে বিশেষ ধরনের ব্যাজ ব্যবহারের কথা থাকলেও জটিলতার কারণে বেশিরভাগ কর্মীই তা করেন না। আবার এসব কর্মীদের জন্য রেডিয়েশন অ্যালাউন্স দেবার প্রচলনও নেই। যা উন্নত বিশ্বে প্রচলিত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, তেজস্ক্রিয়তার হাত থেকে বাঁচতে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের রেডিয়েশন প্রটেক্টর ব্যবহার করার নিয়ম। রেডিয়েশন প্রতিরোধে বিশেষ ধরনের পোশাক লেড শিল্ড গাউন পরতে হবে। পাশাপাশি চোখে চশমা এবং রেডিয়েশন নিরোধক কার্বন শিল্ড কলার গার্ড পরিধান করতে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোর রেডিওলজি বিভাগের কেউই প্রটেক্টর ব্যবহার করেন না। ক্যাথল্যাবে ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্টরা লেড জ্যাকেট পরলেও অন্য গার্ডরা ব্যবহার করেন না। আর টেকনোলজিস্টরা এতটাই পুরনো লেড জ্যাকেট পরেন, যেগুলো অনেক আগেই কার্যকারিতা হারিয়েছে। এসব দামি পোশাক সরকারিভাবে সরবরাহ না কারায় ডাক্তার বা টেকনোলজিস্টরা নিজে থেকে কিনে ব্যবহার করেন না।

মহাখালী জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের অবসর প্রাপ্ত কর্মী মনিরুল ইসলাম (৬৮) বলেন, সারাটা জীবন কাটিয়েছি এক্সরে রুমে। বয়স যখন বাড়তে লাগলো, তখন আমার বহু ধরণের সমস্যা দেয়া শুরু করতে লাগল। চোখে কম দেখা, হার্টে সমস্যাসহ আরও কিছু। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছিলাম। সবার একটাই কথা- রেডিয়েশন থেকে দূরে থাকা। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি।

ঢাকার গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিটিস্ক্যান বিভাগের কর্মী রাসেল (ছদ্মনাম)। সম্প্রতি তার সাথে দৈনিক জাগরণের পরিচয় হয়। কথা হচ্ছিল অন্যবিষয়ে। এরই মধ্যে বমি বমি ভাবের জন্য তিনি বাথরুমে দৌড়ে যান। কিছুক্ষণ পর এসে তিনি বলেন, শরীর ভাল না ক’দিন ধরে, মাথা ঘোরায়।

‘কারণ কী’- প্রশ্নে তিনি বলেন, এই যে সিটিস্ক্যানে কাজ করি, এইটার রেডিয়েশন থেকে এই সমস্যা হয়। এ থেকে সুরক্ষার জন্য উপযুক্ত পোশাক তাদের দেয়া হয় না বলে জানান তিনি।

ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট, ক্যাথল্যাব টেকনোলজিস্ট এবং সংশ্লিষ্টরাও থাকেন এই ঝুঁকিতে। যখন কোনো রোগীকে ক্যাথল্যাবে ঢোকানো হয়, তখন ফ্লোরস্কপির মাধ্যমে রোগীর শরীরের ভেতরের সবকিছু দেখেন চিকিৎসকরা। এ সময়ই রেডিয়েশন ছড়িয়ে পড়ে।

তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের কাইয়ুম ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন, লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের ডার্করুম অ্যাসিস্ট্যান্ট এনাম মারা যান। তবে এর বাইরে আরও কতজন কত ধরনের রোগ-শোকে আক্রান্ত হয়েছেন, তার হিসাব নেই।

জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক আবদুল্লাহ আল শাফী মজুমদার এসব বিভাগের কর্মরতদের সব সময় সতর্কতার সঙ্গে নিয়ম মেনে কাজ করার পরামর্শ দেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, পারমাণবিক বোমার মতো উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয় যে ধরনের ক্ষতি করে, এসব নিম্নমাত্রার তেজস্ক্রিয়তাও সে ধরনের ক্ষতিকারক। তেজস্ক্রিয়তা ঝুঁকি থেকে দূরে থাকতে তিনি প্রটেক্টর ও ব্যাজ পরার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

আরএম /একেএস

আরও পড়ুন