• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০১৯, ০২:০১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ১৩, ২০১৯, ০২:০৩ পিএম

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ

লাভজনক সানোফি চলে যাওয়ার পেছনে প্রতিবেশী দেশের ষড়যন্ত্র

লাভজনক সানোফি চলে যাওয়ার পেছনে প্রতিবেশী দেশের ষড়যন্ত্র
সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেড শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন ছবি : জাগরণ

বাংলাদেশে ১৯৫৮ সাল থেকে চলে আসা ফ্রান্সভিত্তিক ওষুধ কোম্পানি সানোফির চলে যাওয়ার পেছনে প্রতিবেশী দেশের ষড়যন্ত্র দেখছেন প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীরা। তাদের অভিযোগ, দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে লাভজনক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে চলে আসা বিশ্ববিখ্যাত এ কোম্পানির অর্গানোগ্রামে চেয়ারম্যানের কোনো পদ নেই, ও ছিল না। কিন্তু গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে প্রায় বছর দেড়েক আগে হঠাৎ করেই কোম্পানির অর্গানোগ্রাম লঙ্ঘন করে প্রতিবেশী একটি দেশের একজনকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর থেকেই এ কোম্পানি নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়। সেই ষড়যন্ত্রের চূড়ান্ত রূপের অংশ হিসেবে এখন সানোফি বাংলাদেশ থেকে চলে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। যা বাংলাদেশের স্বার্থ পরিপন্থী ও মর্যাদাহানিকর।

রোববার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের মওলানা আকরম খাঁ হলে সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেড শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক। লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সিবিএর সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১৯৫৮ সালে টঙ্গীতে কারখানা প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে ফ্রান্সভিত্তিক ওষুধ কোম্পানি সানোফি বাংলাদেশে ব্যবসা করে আসছে। দীর্ঘ এ সময়ে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটি কখনও ক্ষতির সম্মুখিন হয়নি। চলতি বছরও তারা ৭২ কোটি টাকারও অধিক মুনাফা করেছে। 

আরও বলা হয়, সম্প্রতি গণমাধ্যমের খবরে আমরা জানতে পারি সানোফি বাংলাদেশ থেকে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে চলে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ রহস্যজনকভাবে নীরবতা ও লুকোচুরির আশ্রয় নিয়েছে। তারা সানোফিতে কর্মরত কাউকে এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানাচ্ছে না। আমরা সিবিএর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ কেমিক্যাল এনার্জি অ্যান্ড এলাইড ফেডারেশনের (বিসিইএফ) মাধ্যমে সানোফির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও সানোফির লোকাল কান্ট্রি চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালককে সর্বশেষ জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছি এবং আলোচনায় বসার জন্য পত্র দিয়েছি। কিন্তু তারা কোনো সাড়া না দিয়ে উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে। 

সংবাদ সম্মেলনে সানোফির সিবিএ সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক দৈনিক জাগরণের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আজ পর্যন্ত সানোফি কর্তৃপক্ষ তাদের চলে যাওয়ার বিষয়ে আমাদের কোনো তথ্য দেয়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে তো নয়ই মৌখিকভাবেও কিছু জানায়নি। আমরা আপনাদের (গণমাধ্যম) মাধ্যমে তাদের চলে যাওয়ার বিষয়ে জানতে পেরেছি। আমরা বারবার তাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছি। কিন্তু তারা কোনো সাড়া দিচ্ছে না।

সংবাদ সম্মেলনে কেমিক্যাল এনার্জি অ্যান্ড এলাইড ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি কুতুবুদ্দিন আহমেদ বলেন, দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে চলে আসা সানোফিতে কখনও কোনো চেয়ারম্যানের পদ ছিল না। কিন্তু বছর দেড়েক আগে হঠাৎ করেই প্রতিবেশী একটি দেশের রাম প্রসাদ কৃষ্ণ ভাট নামের এক লোককে এনে চেয়ারম্যানের পদে বসানো হয়। উনি এখানে আসার পর থেকেই ওই দেশের অনেক লোককে এ প্রতিষ্ঠানে উচ্চ বেতনের পদে বসানো হয়। আমাদের দেশের অনেক অভিজ্ঞ কর্মচারীকে চাকরি থেকে ছাঁটাইও করা হয়। 

ষড়যন্ত্রের পেছনে যুক্তি দিয়ে কুতুবুদ্দিন বলেন, এর আগে জার্মানির গ্ল্যাক্সো কোম্পানিও বাংলাদেশে থেকে ব্যবসা গুটিয়ে চলে গেছে। এর পেছনেও আমরা প্রতিবেশী দেশের ষড়যন্ত্র দেখেছি। লাভজনক গ্ল্যাক্সোও চলে যাওয়ার আগে সেখানে ওই প্রতিবেশী দেশের একজনকে উচ্চ পদে বসানোর বছর খানেক পর প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ থেকে চলে যায়। আশ্চর্যজনক কথা হচ্ছে- সেই গ্ল্যাক্সো বাংলাদেশ থেকে বেরিয়ে গিয়ে ভারতে নতুন করে কারাখানা চালু করে। সানোফির ক্ষেত্রেও তাই হতে চলেছে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে এ বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে কপের নেতা রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, সানোফিকে এভাবে চলে যেতে দিলে ভবিষ্যতে আর যারা এদেশে বিনিয়োগ করতে আসবে তাদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তারা সুবিধা পেয়ে যাবে। তারা দেখবে এদেশে ইচ্ছে করলেই আসা যায়, আবার ইচ্ছে করলেই চলেও যাওয়া যায়। এতে আমাদের দেশের বিনিয়োগে বিরূপ প্রভাব পড়বে। 

তিনি ঘোষণা করেন, কারখানা আমরা চলে যেতে দেব না। যদি তাদের চলে যেতেই হয়, তাহলে শ্রমিক ও আমাদের দেশের যে ক্ষতি হবে এর জন্য সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। প্রয়োজনে নিজেদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শ্রমিকরাই এ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নেবে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিটি শ্রমিকের বয়স ৬০ বছর ধরে তার পাওনা, প্রতিবছর দুই মাসের গ্রাচুইটিসহ সকল পাওনা পরিশোধের দাবিসহ মোট ১৩ দফা দাবি জানানো হয়। 

এছাড়া, কারখানা বন্ধের চক্রান্তের প্রতিবাদে আগামী ১৮ অক্টোবর টঙ্গীতে কারখানার সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সেখান থেকে আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলেও জানানো হয়।

টিএস/ এফসি