• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০১৯, ০৮:২২ এএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ১৫, ২০১৯, ০৮:২২ এএম

উচ্চ আদালতের নির্দেশনার ৩ মাস 

ওষুধের মূল্য-মেয়াদ এখনও স্পষ্ট অক্ষরে হয়নি

ওষুধের মূল্য-মেয়াদ এখনও স্পষ্ট অক্ষরে হয়নি

বড় হরফে ওষুধের মেয়াদ, মূল্য লেখার ব্যবস্থা করতে হবে- উচ্চ আদালত থেকে এমন নির্দেশনা প্রায় ৩ মাস আগে দেয়া হলেও এর বাস্তব প্রতিফলন ঘটেনি এখনও। শুধু ওষুধ কোম্পানিগুলোকে এ বিষয়ে চিঠি দেয়ার কাজটিই সেরেছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর।

রাজধানীর বিভিন্ন ফার্মেসি, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি এবং ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি ও উচ্চমূল্যে ওষুধ বিক্রি নিয়ে গত জুলাই মাসে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে দেশজুড়ে। এসময় উচ্চ আদালতের নির্দেশে ৩৬ কোটিরও বেশি টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সারাদেশ থেকে সংগ্রহ করে ধ্বংস করে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। গত ১৮ জুলাই আদালত একটি রিটের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষকে বলে দেয়, ওষুধের পাতায় (স্ট্রিপ) স্পষ্ট করে বাংলা ও ইংরেজি বড় হরফে মেয়াদ, উৎপাদনের তারিখ ও মূল্য লেখার ব্যবস্থা করতে হবে।

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের একটি সূত্র জানায়, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কোম্পানিগুলোকে চিঠি দেয়া হয়। একইসঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকও হয়। কিন্তু নানা অজুহাত দেখিয়ে কিছু কোম্পানি এই নিয়ম এড়িয়ে যেতে চাচ্ছে। কেউ কেউ বলছে, আদালতের নির্দেশ মানলে খরচ বাড়বে, তাই ওষুধের দামও বাড়বে।

ঢাকার বেশকিছু ফার্মেসিতে দেখা যায়- এখনও ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল জাতীয় ওষুধের পাতার এক পাশে খোদাই করে উল্লেখ রয়েছে ওষুধের মেয়াদ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যা সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা সাধ্যের বাইরে। কেউ যদি ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল জাতীয় পাতা ছাড়া কেনেন, সেক্ষেত্রে মেয়াদ দেখার সুযোগই থাকে না। এক্ষেত্রে পুরোপুরি নির্ভর করতে হচ্ছে বিক্রেতার উপর। তাছাড়া কিছু বোতলজাত ওষুধ রয়েছে, যা কাগজের প্যাকেটে মোড়ানো নয়। সেসব বোতলের গায়ে যেভাবে ওষুধের মূল্য ও মেয়াদ লেখা থাকে, তা বোঝা দুর্বোধ্য। কোম্পানিগুলো এমনভাবে এসব লেখা বসায় যেন কোনো রকমে দায় সারা হলো। অথচ ওষুধের নাম, পরিচয়, কোম্পানির নামসহ বহুবিধ তথ্য থাকে শতভাগ স্পষ্ট ও স্বচ্ছ। আবার যেসব বোতলজাত ওষুধ কাগজের প্যাকেট দিয়ে প্যাক করা থাকে, সেসব প্যাকেটের গায়েও ওষুধের মূল্য মেয়াদ যেভাবে লেখা থাকে, সেটাও দায়সারা গোছের লেখা। এই অংশ ছাড়া অন্যসব লেখা স্পষ্ট।

কলেজ গেটের একটি ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে আসা ব্যাংকার আলামিন হোসেনকে প্রশ্ন করা হয়, মেয়াদ দেখে ওষুধ কেনেন কি না? তিনি বলেন, ট্যাবলেট-ক্যাপসুল কেনার ক্ষেত্রে কখনও মেয়াদ দেখা হয়নি। পাতার গায়ে নাকি মেয়াদ লেখা থাকে, কিন্তু সেসব তো বুঝি না।

রিকশাচালক আক্কাস আলী এক পাতা প্যারাসিটামল কিনতে এসেছেন মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটের কাছে একটি ফার্মেসিতে। মেয়াদের ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাস করলে উত্তর আসে- এইসব বুঝি না। ডাক্তার লেইখা দেয়, কিন্না আইনা খাইয়া ফালাই।

গৃহিনী রেবেকা চৌধুরী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৬ বছর ধরে। কখনও ওষুধের মেয়াদ দেখে তিনি ওষুধ কিনেননি। রেবেকা বলেন, গত জুলাই মাসে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ নিয়ে হাইকোর্টের কথা বিভিন্ন পত্রিকায় পড়ে জানলাম, এরপর আসলে ভয়ে আছি। এখন মেয়াদ দেখে ওষুধ কেনার চেষ্টা করি। কিন্তু ওষুধের পাতার গায়ে মেয়াদ-মূল্য, কোনোটাই বোঝা যায় না।

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের একজন পরিচালক নাম না প্রকাশের শর্তে দৈনিক জাগরণকে বলেন, আগের চেয়ে এখনকার ওষুধ বিক্রেতাদের উপর আমাদের নির্দেশনা এবং নজরদারি অনেক। তাদেরকে দিয়ে আরও উন্নত করার চেষ্টা এখনও চলছে।

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান দৈনিক জাগরণকে বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশ পালন করার জন্য ওষুধ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আমরা বসেছি, বৈঠক করেছি। তারা একমত পোষণ করেছেন। কিন্তু এটা বাস্তবায়ন করতে একটু সময় লাগবে। ওষুধের মূল্য, মেয়াদ বসানোর ফরমেট বদলাতে হবে। নতুন ফরমেট তৈরি করতে হবে। তবে আমাদের কাজ থেমে নেই।

আরএম/ এফসি