• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০১৯, ০৯:৫৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ২৪, ২০১৯, ০৯:৫৭ পিএম

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

ওয়ার্ডে মিললেও বারান্দায় দেখা মেলে না চিকিৎসকের

ওয়ার্ডে মিললেও বারান্দায় দেখা মেলে না চিকিৎসকের
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

স রে জ মি ন

..........................

ডাক্তার যান না, এমন ঢালাও অভিযোগ সঠিক নয় : ডা. সাজ্জাদ খন্দকার, উপ-পরিচালক, ঢামেক  

প্রচণ্ড মাথা ব্যথা নিয়ে বরিশালের নলছিটি উপজেলা থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসা নিতে এসেছেন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থী নাজমুল হোসেন। তিন দিন হলো তিনি এসেছেন। ওয়ার্ডে জায়গা হয়নি তার। তাই শয্যা পেতেছেন বারান্দায়। সেখানে চলছে তার চিকিৎসা। প্রথমদিন জরুরি বিভাগে চিকিৎসকের দেখা মিললেও পরের দুইদিন কোনও চিকিৎসকের দেখা পাননি তিনি।

নিউরো সার্জারি বিভাগে ভর্তি নাজমুলের বাবা সোলেমান দৈনিক জাগরণকে বলেন, ‘মাথডা খারাপ হইয়া গেসে। সেদিনের পর এখন পর্যন্ত কোনও ডাক্তারের চেহারা দেখি নাই। খালি নার্স আইসা ওষুধ-পাত্তি খাওয়াই যায়। ছেলেটার কপালে কি আছে আল্লায় জানে।’

ঢাকা মেডিকেলে আসার পর নাজমুলের সিটিস্ক্যান, এমআরআই, রক্ত পরীক্ষা করা হয়। তাতে ধরা পড়ে সে ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেখা না পাওয়ায় ছেলের জীবন নিয়ে শঙ্কিত সোলেমান।

চিকিৎসকের দেখা শুধু নাজমুলই পাচ্ছেন না, তা নয়। ওয়ার্ডে নিয়মিত চিকিৎসকের সংস্পর্শ কোনও না কোনওভাবে মিললেও বারান্দায় একেবারেই মিলছে না। এটা নিয়ে রোগীদের মধ্যে রয়েছে চরম ক্ষোভ, হতাশা ও মনোকষ্ট।

নিউরো সার্জারি বিভাগের অধীনে বারান্দায় চিকিৎসাধীন রাজু মাথায় আঘাত পেয়েছেন গাছ থেকে পড়ে গিয়ে। তিনি জানালেন, আইজকা ৮দিন হলো বারান্দা পড়ে আছি। একদিন ডাক্তার আইসিলো। পরে আর কোনও খবর নাই। গরিব বইলা ঢাকা মেডিকেলে পইরা আছি, বড়লোক হইলে নামি-দামি হাসপাতালে যাইতাম।

কিন্তু এমন কেন? চিকিৎসকরা কেন সব রোগীর কাছে পৌঁছাতে পারছেন না? নিউরো সার্জারিসহ আরও কিছু বিভাগের ওয়ার্ডে দৈনিক জাগরণ এর এই প্রতিবেদক কথা বলেন কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সাথে। তাদের মধ্যে কেউ ইন্টার্ন, কেউ অনারারি মেডিকেল অফিসার। কোনও কোনও বিভাগের সহকারি রেজিস্টারকেও পাওয়া গেছে। তবে কেউ-ই ঢামেক হাসপাতালের পরিচালকের অনুমতি ছাড়া আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে রাজি হননি।

নিউরো সার্জারি বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অনারারি মেডিকেল অফিসার বলেন, সেকেন্ডে সেকেন্ডে রোগী আসে যায়, সে তুলনায় ডাক্তারই নেই। কিভাবে এই চাপ সামলাবো? রোগীরা তো সেবার জন্যেই আসেন। সেবা না পেলে অভিযোগ করবেন না কেন? এই দোষ তো আমাদের ঘাড়েই পড়ে। কিন্তু আমরা যে কতটা অসহায় সেটা কে দেখবে?

১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্তমান শয্যা সংখ্যা দুই হাজার ৬০০। কিন্তু প্রতিদিন ভর্তি থাকে (মেঝে ও বারান্দাসহ) সাড়ে চার হাজারেরও বেশি রোগী। প্রতি বছর আট লাখেরও বেশি রোগী বহির্বিভাগ থেকে, প্রায় চার লাখ রোগী জরুরি বিভাগ থেকে এবং দেড় লাখেরও বেশি রোগী আন্তঃবিভাগ থেকে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। তবে প্রতি বছরই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেলের সব বিভাগের মধ্যে নিউরো সার্জারি বিভাগকেই সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়। কারণ সড়ক দুর্ঘটনা, আঘাতপ্রাপ্তসহ মস্তিষ্ক ও স্নায়ূতন্ত্রের সমস্যায় আক্রান্তরা এখানে আসেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, নিউরো সার্জারির ১০১ নম্বর ওয়ার্ডে দেখা যায়, পা ফেলার জায়গা নেই। রোগীতে একদম ঠাসাঠাসি। বেশিরভাগের অবস্থা গুরুতর। নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রতিটি ওয়ার্ডের অবস্থা একই।

১০৩ নম্বর ওয়ার্ডে কথা হয় একজন রোগীর স্বজনের সাথে। তিনি এনজিও কর্মকর্তা। নাম মুশফিকুর রহমান। তিনি বলেন, পত্র-পত্রিকায় তো পড়ি ঢাকা মেডিকেল কর্তৃপক্ষ বেশ জোর গলায় বলে, তারা রোগী ফিরিয়ে দেন না। কিন্তু রোগী যদি উপযুক্ত চিকিৎসা-ই না পান, তাহলে ফিরিয়ে না দিয়ে রেখে কষ্ট দিয়ে কী লাভ? রোগীকে অন্য মেডিকেলে রেফারও তো করা যায়।

দোতলায় অবস্থিত শিশু ওয়ার্ডের পাশের হাঁটাচলার রাস্তায় কিছু শয্যায় শিশুরা চিকিৎসাধীন। এক শিশুর অভিভাবক রমজান আলী বলেন, অনেক আশা কইরা বাচ্চাটারে আনসিলাম। কিন্তু যেই অবস্থা দেখতাসি, মনে হইতাসে এখানে আইসা ভুল করছি। ডাক্তারের দেখা নাই। গরিব বইলা ঠেইকা গেসি।

রোগীদের এসব অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় ঢামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাজ্জাদ খন্দকারের। তিনি বলেন, চিকিৎসা চলে ঠিকই। না হলে তারা প্রেসক্রিপশন কোথায় পান, অনেক সময় রোগীরা ভুল বোঝেন। দেখা যায়, ডাক্তার পরীক্ষা দিয়েছেন, কিন্তু রোগী করাননি। সেক্ষেত্রে উপযুক্ত চিকিৎসা মিলবে কীভাবে?

তিনি বলেন, আমাদের শয্যা ২৬০০ হলেও প্রতিদিন রোগী থাকে সাড়ে ৪ হাজারের মত। সে তুলনায় আমাদের লোকবল অনেক সংকট। এ কারণে কাজে একটু ব্যাঘাত পড়তে পারে। তাই বলে ডাক্তার যান না, এমন ঢালাও অভিযোগ সঠিক নয়। কোনও রোগী যদি মনে করেন- তার চিকিৎসা ঠিকভাবে হচ্ছে না, অবহেলা করা হচ্ছে, সেক্ষেত্রে তারা আমাদের জানাতে পারেন।

আরএম/এসএমএম