• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০১৯, ০৫:২৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১, ২০১৯, ০৫:৩১ পিএম

পরোক্ষ ধূমপানে ক্ষতির ব্যাপকতা বৃদ্ধি রোধে প্রয়োজন যথাযথ উদ্যোগ 

পরোক্ষ ধূমপানে ক্ষতির ব্যাপকতা বৃদ্ধি রোধে প্রয়োজন যথাযথ উদ্যোগ 
ধূমপায়ীদের চেয়ে অধূমপায়ীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়া

● পরোক্ষ ধূমপানে সবচেয়ে ক্ষতি এশিয়া-ইউরোপের মানুষ 

● নিকোটিনসহ ৫৬টি বিষাক্ত উপাদান থাকে বিড়ি-সিগারেটে 

● পরোক্ষ ধূমপানে বিশ্বব্যাপী বছরে মারা যায় ৬ লাখ মানুষ 

দেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সি ৪ কোটি ১৩ লাখেরও বেশির মানুষ কোনও না কোনওভাবে তামাক সেবন করছে। তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য সেবনের ফলে পরোক্ষভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ মানুষ। এই অবস্থায় পরোক্ষ ধূমপানে ক্ষতির ব্যাপকতা বৃদ্ধিতে যথাযথ উদ্যোগ নেয়ার এখনই সময় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী— ধূমপানরত ব্যক্তির বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়া দ্বিতীয় ব্যক্তি গ্রহণ করলে সেটাকে ‘পরোক্ষ ধূমপান’ বলা হয়। এটা দু’ভাবে আসতে পারে— ধূমপানরত ব্যক্তির জ্বলন্ত বিড়ি কিংবা সিগারেট থেকে নির্গত ধোঁয়া কিংবা ধূমপায়ী ধোঁয়া গ্রহণের পর নিঃশ্বাসের সঙ্গে পরিত্যক্ত ধোঁয়া। বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত অংশ থেকে নির্গত ধোঁয়া। যা কোনও কক্ষের মোট ধোঁয়ার ৮৫ শতাংশ ভরে থাকে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, বিভিন্ন গবেষণায় সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত, ধূমপান যক্ষ্মা, ফুসফুসের ক্যান্সারসহ নানা রোগের অন্যতম প্রধান কারণ এবং ধারক ও বাহক। ধূমপান না করে কেউ যেন পরোক্ষভাবে এর কুফলের শিকার না হন, তার জন্য প্রকাশ্যে ধূমপানকে নিষিদ্ধ করা হয়। 

গবেষণায় দেখা যায়, পরোক্ষ ধূমপান পুরুষের তুলনায় নারী ও শিশুর ওপর বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন ইউরোপ ও এশিয়ার মানুষ। এর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থা অত্যন্ত করুণ।তামাকজাত ধোঁয়া ও পরোক্ষ ধূমপান পরিবেশ থেকে শুরু করে সকল বয়সী ব্যক্তির ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

গর্ভবতী নারীদের ওপর পরোক্ষ ধূমপান ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

সিগারেটের ধূমপানে নিকোটিনসহ ৫৬টি বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে। ২০১০ সালে প্রকাশিত বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে বিশ্বের ১৯২ দেশে পরিচালিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, নিজে ধূমপান না করলেও অন্যের ধূমপানের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ৬ লাখ মানুষ মারা যায়। এর মধ্যে ১ লাখ ৬৫ হাজারই হলো শিশু। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে শিশুরা নিউমোনিয়া ও অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর দিকে ঝুঁঁকে পড়ে।

পরোক্ষ ধূমপানের কারণে হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যান্সারসহ শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগও দেখা দেয়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ২০০৮ এর গবেষণা অনুযায়ী প্রতিবছর ৬০ লাখ মানুষ ধূমপানের কারণে মারা যায়। এর মধ্যে ১০শতাংশ মানুষই পরোক্ষ ধূমপানের কারণে মারা যাচ্ছে। 

দেখা যাচ্ছে, একজন ধূমপায়ী যে সব ঝুঁকিগুলোর মধ্যে রয়েছে সে সব ঝুঁকি থেকে অধূমপায়ী ব্যক্তিরাও ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।

আইন, মরিস ও ওর্য়াল্ড এর ১৯৯৭ এর গবেষণায় দেখা গেছে, অনুযায়ী পরোক্ষ ধূমপানের ফলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। এর মধ্যে রয়েছে ঘাড় সংক্রান্ত ক্যান্সার, মলাশয়ের ক্যান্সার, ব্রেন টিউমার ও শ্বাসকষ্ট। এগুলো ছাড়া আরও অনেক রোগের জন্য দায়ী পরোক্ষ ধূমপান।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন ও ধূমপানবিরোধী বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে জানা যায়, ধূমপান আইন মেনে না চলার প্রবণতা, জরিমানার পরিমাণ কম হওয়া এবং তামাক উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কৌশল ও দাপটের কারণে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ হয় না। ২০১৩ সালের তামাক আইনের আইন অনুযায়ী পাবলিক প্লেসে ধূমপায়ীকে অনধিক মাত্র ৩০০ টাকা জরিমানা করতে হবে বলে বলা হলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই।

বাংলাদেশে তামাকের ব্যবসা অনৈতিক হলেও বৈধ। তাই প্রকাশ্যে ধূমপান বন্ধে মোটা অঙ্কের জরিমানার বিধান প্রণয়ন ও এর সঠিক প্রয়োগ, যেখানে-সেখানে, ফুটপাতে অবাধে বিড়ি-সিগারেট বিক্রি বন্ধে প্রশাসনকে কঠোর নীতিমালা তৈরি করতে হবে। তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে তামাক কোম্পানি থেকে সরকারের সব ধরনের শেয়ার প্রত্যাহার, নতুন করে কোনও কোম্পানির অনুমতি না দেয়া, সব তামাকের ওপর উচ্চহারে কর বাড়ানো জরুরি। তাহলে দেশের মানুষ ধূমপানের পরোক্ষ ক্ষতির হাত থেকে রেহাই পাবে। 

শাপলা রহমান ● সাংবাদিক ও উন্নয়নকর্মী