• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০১৯, ০৮:৫৩ এএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ৬, ২০১৯, ০২:১৬ পিএম

নীতিমালা না থাকায় চালু হয়নি ঢাকার ৫ হাসপাতালে সান্ধ্যকালীন সেবা 

নীতিমালা না থাকায়  চালু হয়নি ঢাকার ৫ হাসপাতালে সান্ধ্যকালীন সেবা 
চাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

নীতিমালা প্রণয়ন না করা পর্যন্ত ঢাকার ৫ হাসপাতালে সান্ধ্যকালীন বহির্বিভাগ সেবা বা ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস চালু হচ্ছে না। যদিও গত ১২ নভেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা আদেশ অনুযায়ী এক সপ্তাহের মধ্যে সান্ধ্যকালীন বহির্বিভাগ সেবা চালু হওয়ার কথা।

৫ হাসপাতাল হচ্ছে- ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতাল এবং জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর)।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের এক সিনিয়র চিকিৎসক দৈনিক জাগরণকে জানান, ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস নিয়ে গত সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়েছে। তড়িঘড়ি করে এতো এটি দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

৫ হাসপাতালের প্রশাসন ও চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস স্থায়ীভাবে চালু করবে সরকার। এজন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। সেই নীতিমালা অনুযায়ী ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস পরিচালিত হবে। সেটা না হলে এ উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বলা হচ্ছে- ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস থেকে যে অর্থ আসবে, তার শতকরা ৮০ ভাগ পাবেন এ সেবায় অংশগ্রহণকারী চিকিৎসকরা। বাকি ২০ ভাগ যাবে হাসপাতালের তহবিলে। কিন্তু চিকিৎসকরা কী হিসাবে এই অর্থ পাবেন, সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো কথা নেই। এখানে জুনিয়র-সিনিয়র চিকিৎসকসহ মেডিকেল অফিসার, জুনিয়র কনসালটেন্ট, সিনিয়র কনসালটেন্ট, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপক রয়েছে। তারা বর্তমানে যেভাবে প্রাইভেট প্রাকটিস করছেন তাতে দেখা যায়, একই পদবির চিকিৎসকের একেক রকম ফি। এজন্য ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিসে একজন চিকিৎসক কী বিবেচনায় কী পরিমাণ অর্থ পাবেন, সেটা নির্ধারণ জরুরি।

ন্যাশনাল নিউরো সায়েন্সেস ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের যুগ্ম-পরিচালক অধ্যাপক বদরুল আলম দৈনিক জাগরণকে বলেন, ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস চালু হলে রোগীদের জন্য অনেক ভাল হবে। তবে কবে চূড়ান্ত নীতিমালা চালু বা বাস্তবায়ন হবে এসব প্রশ্নের কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, কবে নাগাদ ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস চালু হতে যাচ্ছে এখনই বলা সম্ভব নয়। নীতিমালার খসড়া তৈরি হবে। পরে এটা নিয়ে বৈঠক হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, বহু কাঠখড় পুড়িয়ে এই কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। কিছু দলবাজ চিকিৎসক নেতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে এ উদ্যোগ থেমে ছিল। অথচ এটা চালু করতে কয়েক দফা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ এসেছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন। বর্তমানে সরকার ওইসব দলবাজ চিকিৎসক নেতাদের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে থাকায় তারা সুবিধা করতে পারেননি। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশের সব সরকারি হাসপাতালে সরকারের এ পদ্ধতি চালু করার ইচ্ছা আছে।

 এর আগে, ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস চালুর বিষয়ে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের আমলে কয়েকবার উদ্যোগ নেয়া হয়। এ সময় পরীক্ষামূলকভাবে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ পদ্ধতি চালুও করা হয়। কিন্তু কয়েক মাস চলার পর তা ঝিমিয়ে পড়ে।

বিশেষায়িত ৫টি হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সরকারি হাসপাতালগুলোতে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বহির্বিভাগ চালু থাকে। নির্ধারিত সময়ের পরও সেবা নিতে বিপুল সংখ্যক রোগী ভিড় করে। কোনো উপায় না পেয়ে তারা ধরনা দেন চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এতে এসব মানুষের চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যায়। 

এমনও দেখা গেছে, কিছু অসাধু চিকিৎসক অতি মুনাফার আশায় অপ্রয়োজনীয় টেস্ট দিয়ে রোগীর পকেট কাটেন। সরকারি হাসপাতালগুলোয় ইনস্টিটিউটশনাল প্র্যাকটিস চালু হলে এই সমস্যা কমে যাবে। কিন্তু আশঙ্কার বিষয় এই পদ্ধতির কারণে বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীর সংখ্যা কমে যাবে। তারা যদি সংঘবদ্ধ হয়ে কোনো চক্রান্ত করে বসে সেটা চিন্তার বিষয়। আরও শঙ্কার বিষয়, সরকারি কিছু চিকিৎসক ও চিকিৎসক নেতা প্রভাবশালী বেশকিছু বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে মালিকানাগত আছেন। তাদের মাধ্যমে নেতিবাচক কিছু ঘটতে পারে।

সূত্র আরও বলছে, এ পদ্ধতি চালু হলে হাসপাতালে সন্ধ্যার পর চিকিৎসক না থাকার অভিযোগ ঘুচবে। বেশিরভাগ সময় দেখা যেত, সরকারি সিনিয়র চিকিৎসকরা সন্ধ্যার পর প্রাইভেট চেম্বার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এদিকে হাসপাতালে রোগী সামলাতে হয় জুনিয়র বা শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের।

২০১৮ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কয়েকদফা নির্দেশের পর এ বিষয়ে গত ১২ নভেম্বর যে আদেশ জারি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। 

আরএম/একেএস