• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯, ০৮:৪১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯, ০৮:৪১ পিএম

শেকড় সদৃশ বস্তু নিয়েই চলছে আবুল বাজনাদারের জীবন

শেকড় সদৃশ বস্তু নিয়েই চলছে আবুল বাজনাদারের জীবন
আবুল বাজনাদার

শেকড় সদৃশ বস্তু বেড়ে চলছে বিরল রোগ ট্রিম্যান সিনড্রোমে আক্রান্ত আবুল বাজনাদারের দুই হাত-পায়ে। বর্তমানে খুলনায় নিজ বাড়িতে অবস্থানরত আবুল চিকিৎসার বাইরে আছেন। এ বছরের প্রথমভাগে দ্বিতীয় দফা ঢাকা মেডিকেলে আসলেও বিনা চিকিৎসাতেই ফেরত যান তিনি। তার চাওয়া ছিল- প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় বিদেশে পাঠিয়ে যেন তার চিকিৎসা করানো হয়।

রোববার (১৫ ডিসেম্বর) আবুল বাজনাদার দৈনিক জাগরণকে বলেন, ‘কী করব বলেন। ঢাকা মেডিকেলের ডাক্তাররা বলছে, শেকড় নাকি আবার উঠবে। এভাবে যতদিন বেঁচে থাকব ততোদিন তা কেটে রাখতে হবে। এটার নাম কী জীবন? চাচ্ছিলাম- বিদেশে গিয়ে একবার চিকিৎসা করাতে। প্রধানমন্ত্রী যদি আমার দিকে একটু তাকাতো। ঢাকা মেডিকেলের ডাক্তারদেরকে বলেছিলাম, তারা বিদেশের ব্যাপারে কিছু বলে না।’

গত ২০ জানুয়ারি আবুল বাজনাদার আসেন ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে। অন্যদিকে, একটানা আড়াই বছর ঢামেকের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসা গ্রহণ শেষে ২০১৮ সালের ২৭ মে তিনি এ হাসপাতাল ছেড়ে যান কাউকে কিছু না জানিয়েই। 

২০ জানুয়ারি আসার পর আট সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের অধীনে চিকিৎসা শুরু হয় বাজনাদারের। বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ২৬ জানুয়ারি অপারেশন করে আক্রান্ত স্থানে আবার গজানো শেকড় সদৃশ বস্তু সমূলে তুলে ফেলতে। কিন্তু তার চিকিৎসার সহযোগী সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের বিশেষজ্ঞরা শুক্রবার পর্যন্ত অপারেশনের বিষয়ে উত্তর পাঠাননি। ফলে সেই অপারেশন আর করা হয়নি। কিছুদিন পর আবুল চলে যান খুলনায়।

মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য দৈনিক জাগরণকে বলেন, রোগটির চিকিৎসা নেই। তারপরও আমরা চাচ্ছি যেন কার্যকর চিকিৎসা প্রয়োগ করা যায়। সেজন্যই সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের সহযোগিতা চেয়েছিলাম। আবুল তো আমাদের কাছে স্পষ্টই বলেছে, তিনি বিদেশে যেতে চান। কিন্তু বললেই তো আর সব হয়ে যায় না। দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। তার চিকিৎসায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ আছে। তার অনুমতি-সহযোগিতা ছাড়া তো বিদেশে পাঠানো সম্ভব না। তাছাড়া বিদেশে যাবার মতন আর্থিক সামর্থ আবুলেরও নেই।

২০১৮ সালের ২৭ মে ঢামেক থেকে চলে যাবার পর আবুলের হাত-পা সহ দেহের বিভিন্ন স্থানে শেকড়-সদৃশ বস্তু আবারও বড় হতে থাকে।

২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢামেকে ভর্তির পর চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, আবুল বাজনাদার ‘এপিডার্মোডিসপ্লাসিয়া ভেরাসিফরমিস’ রোগে আক্রান্ত। রোগটি ‘ট্রি-ম্যান’ (বৃক্ষমানব) সিনড্রোম নামে অধিক পরিচিত।

ঢাকা মেডিকেলে ভর্তির পর ছোট-বড় ২৩টিরও বেশি অস্ত্রোপচার হয়েছে আবুলের দুই হাত ও দুই পায়ে। সর্বশেষ অস্ত্রোপচার হয় গত বছরের ২৭ জুলাই।

চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী ‘ট্রি-ম্যান সিনড্রোম’ এর কোনো চিকিৎসা নেই। এটা জিনঘটিত রোগ।

আবুলের আগে পৃথিবীতে এই রোগে আক্রান্ত মাত্র ৩ জনের সন্ধান পাওয়া গেছে। ২০০৭ সালের মার্চে রোমানিয়ায় সন্ধান পাওয়া যায় কৃষক আয়ন তোয়াদের। পৃথিবীতে সন্ধান পাওয়া প্রথম বৃক্ষ মানব তিনি। রেডিয়েশন চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। ২০১৩ সালের শেষ দিকে তার দেহে অস্ত্রোপচার করা হয়। ধারণা করা হয়, পরে ক্যান্সার সংক্রমণের শিকার হয়েছিলেন আয়ন। তিনি এখন বেঁচে নেই।

২০০৭ সালের নভেম্বরে ইন্দোনেশিয়ায় সন্ধান পাওয়া যায় ৩৪ বছরের দেদে কসওয়ারার। ২০০৮ সালে অস্ত্রোপচারের পর তার দেহ থেকে অপসারণ করা হয় ৬ কেজি ওজনের আঁচিল। বিরল সেই অস্ত্রোপচার নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করে ডিসকভারি চ্যানেল। পরে অবশ্য দেদের শরীরে ফিরে আসতে থাকে রোগের লক্ষণগুলো। চিকিৎসকরা তাকে বছরে দুইবার করে অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তিনি সেই চিকিৎসা নিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনিও জীবিত নেই।

২০০৯ সালে ডিসকভারি চ্যানেল ‘ট্রিম্যান মিটস ট্রিম্যান’ শিরোনামে আরেক অনুষ্ঠানে ইন্দোনেশিয়ার আরেক ব্যক্তিকে হাজির করে। দেদে কসওয়ারার এলাকায় সন্ধান পাওয়া ওই ব্যক্তি চিকিৎসার পর এখন অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনে।

আরএম/টিএফ
 

আরও পড়ুন