• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০১৯, ০৭:২৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১৮, ২০১৯, ০৭:২৮ পিএম

ট্রান্সফ্যাটের ভয়াবহতায় মহামারির মত হৃদরোগের বিস্তার

ট্রান্সফ্যাটের ভয়াবহতায় মহামারির মত হৃদরোগের বিস্তার

ট্রান্স ফ্যাট বা প্রাকৃতিক-শিল্প উৎস থেকে আসা অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিডের কারণে মহামারির মতো হৃদরোগ বিস্তার লাভ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণের হার ২ শতাংশ বাড়লে হৃদরোগের ঝুঁকি ২৩ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় এবং হৃদরোগজনিত মৃত্যু ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়।

ট্রান্স ফ্যাট বা ট্রান্স-ফ্যাটি অ্যাসিড প্রাকৃতিক বা শিল্প উৎস থেকে আসা অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড। প্রাকৃতিক ট্রান্স-ফ্যাটের উৎস হচ্ছে- দুধ, মাখন, ঘি, গরুর মাংস, ছাগলের মাংস ইত্যাদি। একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত এসব উল্লেখযোগ্য ক্ষতিকর নয়। কিন্তু শিল্পক্ষেত্রে উদ্ভিজ তেলের হাইড্রোজেনেশনের সময় ট্রান্স ফ্যাট উৎপন্ন হয়। আংশিকভাবে হাইড্রোজেনেটেড তেলই শিল্পে উৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাটের প্রধান উৎস। জিলাপি, সিঙ্গারা, সমুচা, পুরি, পিয়াজি, বেগুনি, আলুচপ, নানা পদের বিস্কুট, চানাচুর, চিপসের মতো বেকারি পণ্যে হাইড্রোজেনেটেড তেল ব্যবহার করা হয়। রাস্তাঘাটে বিক্রি করা তেলে কড়া ভাজা খাদ্যেও ট্রান্স ফ্যাট থাকে। রান্নার কাজে একই তেল বারবার ব্যবহার করলেও তাতে ট্রান্স ফ্যাট উৎপাদিত হয়। দেশের মানুষ ওইসব খাদ্যের সাথে অনেক অভ্যস্ত বলেই হৃদরোগ মহামারি পর্যায়ে চলে গেছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। বর্তমানে এই খাদ্যাভ্যাসের প্রভাবে প্রচুর তরুণ বা কিশোরদের মধ্যেও হৃদরোগ দেখা দিচ্ছে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী একজন ব্যক্তির দৈনিক ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণের পরিমাণ হওয়া উচিৎ মোট খাদ্যশক্তির ১ শতাংশের কম, অর্থাৎ দৈনিক ২ হাজার ক্যালোরির ডায়েটে তা হতে হবে ২.২ গ্রামের চেয়েও কম। ট্রান্স ফ্যাটের ব্যাপক স্বাস্থ্য বুঁকি বিবেচনা করে ডেনমার্ক বিশ্বে প্রথম ২০০৩ সালে খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্স ফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা মোট ফ্যাটের ২ শতাংশ নির্ধারণ করে। অস্ট্রিয়া, নরওয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা, থাইল্যান্ড, ইরান, ভারতসহ মোট ২৮টি দেশে খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্স ফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ কার্যকর করেছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা ও কানাডা ট্রান্স ফ্যাটের প্রধান উৎস পিএইচও এর উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। ভারতের ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি ২০২২ সালের মধ্যে ট্রান্স ফ্যাটের সর্বোচ্চ মাত্রা ২ শতাংশে কমিয়ে আনার পাশাপাশি খাবারে শিল্পোৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাট পরিহার করার ঘোষণা দিয়েছে। পরিস্থিতির পরিবর্তনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৮ সালে ‘REPLACE’ অ্যাকশন প্যাকেজ ঘোষণা করে, যেখানে ২০২৩ সালের মধ্যে শিল্পোৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাট মুক্ত বিশ্ব অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশে ট্রান্স ফ্যাট নির্মূল সংক্রান্ত কোনও নীতি না থাকায় খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি থেকে যাচ্ছে, যা হৃদরোগজনিত অকাল মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।

সম্প্রতি ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ট্রান্স ফ্যাট নির্মূল করি, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাই’ শীর্ষক অ্যাডভোকেসি ক্যাম্পেইন উদ্বোধন করা হয়। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ, প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) ও কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল।

২০১৫ সালে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন পরিচালিত একটি গবেষণায় জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত ১০টি বিস্কুটের মধ্যে ৫ থেকে ৩১ শতাংশ পর্যন্ত ট্রান্সফ্যাট পাওয়া গেছে। এটা ডব্লিউএইচও নির্ধারিত বর্তমানের পরিমাণের চেয়ে অনেকগুণ বেশি।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, হৃদরোগ পরিস্থিতি উত্তোরণে ট্রান্স ফ্যাট নিয়ন্ত্রণের জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, খাদ্যপণ্যে লেবেলিং নীতিমালা সংশোধন করে খাদ্যপণ্যে কী পরিমাণ ট্রান্স ফ্যাট আছে, সেটা উল্লেখ করার বাধ্যবাধকতা রাখতে হবে। তাহলে সাধারণ মানুষ জানতে পারবে, এক্ষেত্রে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ভূমিকা রাখতে পারে।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৈয়দা সারওয়ার জাহান বলেন, অসংক্রামক রোগ ধীরে ধীরে মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। তাই এর থেকে পরিত্রাণ পেতে কোনটি অনিরাপদ খাদ্য, কোনটি নিরাপদ- সেটা মানুষকে জানাতে হবে।

আরএম/একেএস