• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০, ০৮:২২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০, ০৮:২২ পিএম

বর্ষায় ভয়াবহ রূপ নিতে পারে ডেঙ্গু

বর্ষায় ভয়াবহ রূপ নিতে পারে ডেঙ্গু

শীত কমার সাথে সাথে রাজধানীসহ সারাদেশে বেড়ে গেছে মশার উপদ্রব। মশার ঘনত্ব বেড়েছে প্রায় সব জায়গাতেই। আসন্ন বর্ষায় ভয়াবহ রূপ নিতে পারে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। এরই মধ্যে বেশকিছু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ডেঙ্গু রোগী। এখনই মশক দমনে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আবারও দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ও বিশেষজ্ঞরা।

রাজধানীর শাহবাগ, মগবাজার, পরিবাগ, বনশ্রী, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, মুগদা, সবুজবাগ এলাকাতে মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে অনেকগুন। দুই সিটির মশক নিধন কর্মীরা ওষুধ ছিটালেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মশার আবাসস্থলে দিচ্ছে না ওষুধ। 

আসন্ন বর্ষা মৌসুমে দুই সিটির ১১টি ওয়ার্ড রয়েছে ডেঙ্গু ঝুঁকিতে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের জরিপে উঠে এসেছে এমন চিত্র।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ডেঙ্গু সার্ভিলেন্স অ্যান্ড প্রেডিকশন প্রোজেক্ট এর আওতায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মশার উপস্থিতি নিয়ে গবেষণা করছে।

জরিপের তথ্যমতে, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসেও রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার উপস্থিতি রয়েছে। এখন উপস্থিতি কম থাকলেও তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মার্চ-এপ্রিলের দিকে এর আরও প্রকোপ বাড়বে। 

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে মশার তীব্র উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। মশার উপস্থিতির হারে ঢাকাকে ছয়টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে।

এই জরিপ চলবে আগামী দুই বছর। তাই বৃষ্টি হওয়ার আগে আগেই মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে দুই সিটি করপোরেশন থেকে এখনই মশার লার্ভা জন্মানো স্থান পরিষ্কারে বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে।পাশাপাশি তা ধ্বংসে মাঠে নামতে হবে।

প্রথম দুই মাসেই সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২৪২ জন। এর মধ্যে রাজধানীতেই ১৭৯ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। 

তাদের দেয়া ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনের পর ঝুঁকিপূর্ণ ৬টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গু নিধনে সাতদিনের কর্মসূচি শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
প্রথম দিনেই অনেক বাড়ি ডেঙ্গুর প্রজনন উপযোগী বলে শনাক্ত হয়েছে।

অতি দ্রুতই ডেঙ্গু ঝুঁকিমুক্ত করা হবে জানিয়েছেন দক্ষিণ ঢাকার মেয়র সাঈদ খোকন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিবেদনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের  ৫, ৬, ১‌১, ১৭, ৩৭ ও ৪২ নম্বর ওয়ার্ড সবচেয়ে ডেঙ্গু ঝুঁকিতে। এরমধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের। যেটি ধানমন্ডিতে।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ডেঙ্গু নিধন অভিযানে নেমে বেশকয়েকটি বাসা-বাড়ি এডিসের প্রজনন উপযোগী পায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

একইভাবে অভিযান চালানো হয় বাকি পাঁচ ওয়ার্ডেও। কীটনাশক স্প্রে, দিনে প্রতি ওয়ার্ডে ৫০টি বাড়িতে অভিযান এবং ধোয়া দিয়ে মশক নিধন।

মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, তিন ধাপে চলবে এ কর্মসূচি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এই ৬ ওয়ার্ডে সব এডিস মশা ধ্বংস করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, এরই মধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বাড়ছে তাপমাত্রাও। কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে বাড়বে এডিসের প্রকোপ।

ঢাকা দক্ষিণের মতো উত্তরেও এডিসমশার ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ড রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। 

গেলো বছর ঢাকা সহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে, ডেঙ্গু জ্বর। এতে আক্রান্ত হন ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। সরকারি হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা ১শর বেশি।

সমালোচনার মুখে পড়ে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এই ইস্যু গড়ায় উচ্চ আদালতেও। তবে এ বছর ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ কেমন হবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট-আইইডিসিআর।

সংস্থাটি বলছে, সব কিছু নির্ভর করছে, মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ওপর।

আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, গতবছর আমরা বেশিরভাগ দেখেছি সেরোটাইপ ৩। যদি অন্যকোন সেরোটাইপ না আসে সেক্ষেত্রে সেরোটাইপ ৩ এ আমরা আশা করছি যে আগের থেকে আমাদের ইমিউনিটি লেভেল বেড়েছে যার কারণে এটা একজনের থেকে আরেকজনের কাছে ছড়বে না।

আইইডিসিআরের পরামর্শ, এবার মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে, গ্রামকে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত।

সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, গ্রামগুলো আগের মত নেই, এখন আগের থেকে অনেক উন্নত হয়ে শহর-গ্রামের মিশ্রণ হয়ে গেছে। গ্রামে পানি জমা থাকার জায়গাগুলো আলাদা। আর তাই আমরা আমাদের সচেতনতা তথ্যগুলো গ্রামকে ফোকাস করে দেয়ার চেষ্টা করছি।

এসএমএম