কোভিড-১৯ মোকাবেলায় প্রথমবারের মতো মানবদেহে প্রতিষেধক প্রয়োগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
সোমবার (১৬ মার্চ) ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথের অর্থায়নে সিয়াটলের হেলথ রিসার্চ কেন্দ্রে জেনিফার হলার নামে এক নারীর শরীরে টিকা প্রয়োগ হয়।
জেনিফার হলার একটি স্টার্টআপের অপারেশনস ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন।
হলারই বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি যার ওপর পরীক্ষামূলকভাবে কোভিডের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হলো।
পর্যায়ক্রমে আরও ৪৪ জনের শরীরে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। তাদের বয়স ১৮ থেকে ৫৫ বছর। তবে এই টিকা পুরোপুরি প্রস্তুত হতে সময় লাগবে এক থেকে দেড় বছর।
বৈশ্বিক মহামারির আকার ধারণ করা কোভিড-১৯ এর প্রতিষেধক তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশ।
জাতিসংঘ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে ৩৫টি প্রতিষেধক তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। তবে এই প্রথম মানবদেহে প্রতিষেধক প্রয়োগের কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র।
টিকা দেয়ার পর জেনিফার হলারের শরীরে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কি না সেদিকটিই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে পরীক্ষায়।
টিকা নেয়ার পর হলার নিজের বাসাতেই আছেন। তিনি বলেন, টিকা নেয়ার পর আমি খুব ভালো আছি। আমার বাহুতে মোটেও কোনও যন্ত্রণা হয়নি। এটি অন্যান্য ফ্লুর ভ্যাকসিনের চেয়ে ভালো।
প্রথম ডোজের পর ওই ৪৪ জনকে একমাস পর্যবেক্ষণ করা হবে। এরপর ২৯তম দিনে দ্বিতীয় ডোজ দিয়ে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে আরও ১২ মাস। এতে পরীক্ষার ফল পেতে আরও এক বছরেরও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে। আর এই টিকা বাজারে আসতে সময় লাগতে পারে অন্তত দেড় বছর।
কোভিডের প্রতিষেধক তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হেলথ ইনস্টিটিউটের সঙ্গে কাজ করছে বায়োটেকনোলজি কোম্পানি মোডেরনা। মানুষের আগে অন্য প্রাণির দেহে চালানো পরীক্ষায় সাফল্য পাওয়ার দাবি করেছে তারা।
এই টিকার উপাদান হলো- কোভিড-১৯ ভাইরাসের একটি জেনেটিক কোড- যা আসল ভাইরাসটি থেকেই নকল করে তৈরি করা হয়েছে। এই কপিটি বিপজ্জনক নয় এবং এটা মানবদেহে সংক্রমণ ঘটাতেও পারে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভ্যাকসিনটি বা এরকম যে আরও কয়েকটি টিকা এখন গবেষণার পর্যায়ে আছ - তাতে আদৌ কোনও কাজ হবে কিনা তা জানতে আরও অনেক মাস পর্যন্ত সময় লেগে যাবে।
বিবিসি জানায়, বিজ্ঞানীরা সারা পৃথিবীজুড়েই বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন গবেষণার কাজ দ্রুততর করতে।
এমআরএনএ-১২৭৩ নামের এই টিকাটি কোভিড-১৯ সংক্রমণ সৃষ্টিকারী ভাইরাস থেকে তৈরি নয়। বরং সেই ভাইরাসের জেনেটিক সংকেতের একটি অংশ কপি বা নকল করেছেন বিজ্ঞানীরা এবং সেটাই এই টিকাতে সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
আশা করা হচ্ছে, এই টিকা প্রয়োগ করা হলে মানবদেহের নিজস্ব রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জাগিয়ে তুলেই ভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলা করা যাবে।
স্বেচ্ছাসেবকদের বাহুতে ২৮ দিন পর পর দু’বার টিকাটি দেয়া হবে।
পরীক্ষাটি যদি ভালোভাবে এবং নিরাপদে সম্পন্ন হয় তাহলে জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য পাওয়া যেতে ১৮ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ এই ভ্যাকসিনটি মানবদেহে পরীক্ষা করার আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বাদ দিচ্ছে। সেটি হলো এই টিকাটি প্রাণির দেহে সংক্রমণ-প্রতিরোধী ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করে তোলে কিনা - তার পরীক্ষাটি এ ক্ষেত্রে করা হয়নি।
তবে মোডেরনা থেরাপিউটিক্স নামে যে বায়োটেকনোলজি কোম্পানি এ কাজটা করছে তারা বলছে, বহুল-পরীক্ষিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই এই ভ্যাকসিন বানানো হয়েছে।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ড. জন ট্রেগোনিং বলছেন, এই টিকা বিদ্যমান প্রযুক্তিই অনুসরণ করেছে এবং অত্যন্ত উচ্চ মান রক্ষা করে এটি বানানো হয়েছে।
এতে যা ব্যবহৃত হয়েছে তা যে মানুষের দেহে ব্যবহার নিরাপদ তা আমাদের আগে থেকেই জানা এবং এই ট্রায়ালে যারা অংশ নেবেন তাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে মনিটর করা হবে।
ড. ট্রেগোনিং বলেন, হ্যাঁ, এটা অত্যন্ত দ্রুত তৈরি হচ্ছে কিন্তু এখন ভাইরাসটির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটতে হচ্ছে এব্ং কাজটা করা হচ্ছে মানবতার কল্যাণের জন্য।
এসএমএম