• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২০, ০৩:০৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১৪, ২০২০, ০৩:০৮ পিএম

কোভিড আক্রান্ত ছিলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী

কোভিড আক্রান্ত ছিলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী
ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ● ফাইল ছবি

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্ত ছিলেন।

রোববার (১৪ জুন) বাদ আসর তার গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার কেকানিয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে বাবা ও মায়ের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হবে। এর আগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাড়ির মসজিদ প্রাঙ্গণে নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর পরিবার সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

শনিবার (১৩ জুন) রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে হৃৎরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তার মৃত্যু হয়।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস) খন্দকার ইয়াসীর আরেফিন জানান ‘উনার ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগ ছিল।’

প্রতিমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) নাজমুল হক সৈকত জানান, শনিবার রাতে বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়লে শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। পরে ১১টা ৪৫ মিনিটে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নূরুল ইসলাম জানান, শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহকে রাতে বাসায় বুকে ব্যথা নিয়ে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ টেকনোক্র্যাট কোটায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ১৯৪৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার মধুমতী নদীর তীরবর্তী কেকানিয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত ধার্মিক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা নাম শেখ মোহাম্মদ মতিউর রহমান এবং মা রাবেয়া খাতুন। চার ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।

তিনি স্থানীয় গওহরডাঙ্গা হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পবিত্র কোরআন হেফজের মাধ্যমে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। এর পর একই মাদ্রাসার কওমী ধারায় পড়াশোনা করেন।

তিনি সুলতানশাহী কেকানিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা এবং সুলতানশাহী কেকানিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৬১ সালে মেট্রিক পাসের মাধ্যমে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন।

তিনি খুলনার আযম খান কলেজ থেকে ১৯৬৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক, ১৯৬৬ সালে বিকম (অনার্স) ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে এম.কম. এবং  ১৯৭৪ সালে অর্থনীতিতে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৭৭ সালে ঢাকা সেন্ট্রাল ‘ল’ কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।

শিক্ষা জীবন শেষে তিনি সুলতানশাহী কেকানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি অ্যাডভোকেট হিসেবে গোপালগঞ্জ জজকোর্ট এবং ঢাকা জজকোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ধারণ করে ছাত্রজীবনেই তিনি রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। তিনি খুলনার আযম খান কমার্স কলেজে প্রথম ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালের ছয়দফা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে রাজনীতিতে গভীরভাবে সম্পৃক্ত হন। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা যুবনেতা  শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে তিনি আওয়ামী যুবলীগে যোগদান করেন।

এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধুর সরাসরি তত্ত্বাবধানে গঠিত গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।  তিনি ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এরপর ১৯৭০ এর নির্বাচনে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িত হয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ব্যাপক নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্ট মুজিব বাহিনীর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হলে তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

আবদুল্লাহ ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশ সেবা করার লক্ষ্যে চাকরির পরিবর্তে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং তার নেতৃত্বে রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এরপর কাউন্সিলের মাধ্যমে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। দীর্ঘদিন তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে বিভিন্ন সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি দীর্ঘদিন যাবত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহর মৃত্যুতে অর্থমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, স্বরাস্ট্রমন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, গণপুর্ত প্রতিমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, ভুমিমন্ত্রী, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী, পানি প্রতিমন্ত্রী ও উপ মন্ত্রী, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, পরিবেশ মন্ত্রী, বিমান প্রতিমন্ত্রী, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী, সাংস্কৃতিক প্রতিমন্ত্রী গভীর শোক ও দুঃখপ্রকাশ করেছেন।

এসএমএম

আরও পড়ুন