• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২০, ০২:৩৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৭, ২০২০, ০২:১৫ পিএম

কোভিড-১৯

১১১তম দিনে মৃত্যু ৪০, নতুন শনাক্ত ৩,৮৬৮

১১১তম দিনে মৃত্যু ৪০, নতুন শনাক্ত ৩,৮৬৮

আক্রান্তের ১১১তম দিন 

.....

গত ২৪ ঘণ্টা দেশে মারা গেছেন আরও ৪০ জন। এর মধ্যে ৩১ জন পুরুষ ও ৯ জন নারী। এ নিয়ে মোট প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে গিয়ে দাঁড়াল ১ হাজার ৬৬১ জনে।

গত ২৪ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) দেশে নতুন করে ৩ হাজার ৮৬৮ জনের দেহে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট শনাক্ত হলেন ১ লাখ ৩০ হাজার ৪৭৪ জন।

আইইডিসিআর এর বরাত দিয়ে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৬৩৮ জন সহ মোট সুস্থ হয়েছেন ৫৩ হাজার ১৩৩ জন। 

শুক্রবার (২৬ জুন) দুপুরে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে এসব তথ্য তুলে ধরেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।

ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে মোট ৬৬ টি ল্যাবে গত ২৪ ঘন্টায় মোট ১৮ হাজার ২৭৫ টি নমুনা সংগ্রহ হয়েছে। নতুন- পুরাতন মিলিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয় ১৮ হাজার ৪৯৮ টি। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৬ লাখ ৯৬ হাজার ৯৪১ টি।

নমুনা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৯১ শতাংশ। সুস্থতার হার ৪০ দশমিক ৭২ ও মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। 

এখন পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ২৭ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) শনাক্ত হয় ৩ হাজার ৯৪৬ ও মারা যায় ৩৯ জন। 

গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা শুরু করে। ৮ মার্চ দেশে প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। ১৮ মার্চ প্রথম কোনও করোনা রোগী মারা যায়।

চলতি মাসের ১ জুন ২,৩৮১, ২ জুন ২,৯১১, ৩ জুন ২,৬৯৫, ৪ জুন ২,৪২৩, ৫ জুন ২,৮২৮, ৬ জুন ২,৬৩৫, ৭ জুন ২,৭৪৩, ৮ জুন ২,৭৩৫, ৯ জুন ৩,১৭১ জন, ১০ জুন ৩,১৯০, ১১ জুন ৩, ১৮৭, ১২ জুন ৩,৪৭১ ও  ১৩ জুন ২,৮৫৬, ১৪ জুন ৩,১৪১, ১৫ জুন ৩,০৯৯, ১৬ জুন ৩,৮৬২, ১৭ জুন ৪,০০৮, ১৮ জুন ৩,৮০৩, ১৯ জুন ৩,২৪৩, ২০ জুন ৩,২৪০,  ২১ জুন ৩,৫৩১, ২২ জুন ৩,৪৮০, ২৩ জুন ৩,৪১৩, ২৪ জুন ৩,৪৬২ এবং ২৫ জুন ৩,৯৪৬ জন শনাক্ত হয়।

দেশে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড আছে ৫৩ জনের। সে তথ্য জানান হয় ১৬ জুনের বুলেটিনে। আর সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড আছে ৪ হাজার ৮ জনের। এ তথ্য জানান হয় ১৭ জুনের বুলেটিনে।

বুলেটিনে বরাবরের মতো করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে সবাইকে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, মুখে মাস্ক পরা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান ডা. নাসিমা।

ভারতের পরিস্থিতি

গত সপ্তাহে ১৫ হাজার, গত দু’তিন দিন ১৬ হাজার, শুক্রবার ১৭ হাজার। এ ভাবেই দিন দিন বাড়ছে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা। এই সংক্রমণ বৃদ্ধি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে চিকিৎসক থেকে বিশেষজ্ঞদের।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুসারে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭ হাজার ২৯৬ জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন কোভিডে। ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের নিরিখে যা সর্বাধিক। দেশে এক দিনে এত জনের সংক্রমণ এর আগে হয়নি। এ নিয়ে ভারতে মোট আক্রান্ত হলেন চার লক্ষ ৯০ হাজার ৪০১ জন। মহারাষ্ট্র, দিল্লি ও তামিলনাড়ু— দেশের মোট আক্রান্তের প্রায় ৬০ শতাংশই এই তিনটি রাজ্য থেকে।

আক্রান্তের পাশাপাশি করোনায় মৃত্যুও বাড়াচ্ছে উদ্বেগ। দেশে মৃতের সংখ্যা শুক্রবার ১৫ হাজার ছাড়াল। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এখনও পর্যন্ত দেশে ১৫ হাজার ৩০১ জনের মৃত্যু হল করোনার কারণে। এর মধ্যে প্রায় সাত হাজার মৃত্যু হয়েছে শুধু মহারাষ্ট্রেই। দিল্লিতেও বাড়তে বাড়তে সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে দু’হাজার ৪২৯-এ। তৃতীয় স্থানে থাকা গুজরাতে মারা গিয়েছেন এক হাজার ৭৫৩ জন। বিগত কয়েক সপ্তাহে ধারাবাহিক ভাবে বেড়ে তামিলনাড়ুর মৃত্যু সংখ্যা দাঁড়াল ৮৬৬-তে। এর পরই তালিকায় রয়েছে উত্তরপ্রদেশ (৬১১), পশ্চিমবঙ্গ (৬০৬) ও মধ্যপ্রদেশ (৫৪২)। এ ছাড়া শতাধিক মৃত্যুর তালিকায় রয়েছে রাজস্থান (৩৭৯), তেলঙ্গানা (২৩০), হরিয়ানা (১৯৮), কর্নাটক (১৭০), অন্ধ্রপ্রদেশ (১৩৬) ও পঞ্জাব (১২০)।

আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়লেও রোজদিন সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যাটাও স্বস্তি দিচ্ছে। এখন দেশে সুস্থ হয়ে ওঠা করোনা রোগীর সংখ্যা সক্রিয় করোনা আক্রান্তের চেয়ে বেশি। মোট আক্রান্তের অর্ধেকেরও বেশি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ হাজার ৯৪০ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে মোট দু’লক্ষ ৮৫ হাজার ৬৩৭ জন দেশবাসী করোনার কবল থেকে মুক্ত হয়েছেন।

গোড়া থেকেই দেশে করোনা সংক্রমণের শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র। সেখানে মোট আক্রান্ত এক লাখ ৪৭ হাজার ৭৪১ জন। বিগত কয়েক দিনের তুলনায়, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে সে রাজ্যে।

শুক্রবার চার হাজার ৮৪১ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন সেখানে। দিল্লিতেও রোজদিন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। বেশ দ্রুতগতিতে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে সেখানে। এখনও অবধি মোট আক্রান্ত ৭৩ হাজার ৭৮০ জন আক্রান্ত হয়েছেন দেশের রাজধানীতে। তৃতীয় স্থানে থাকা তামিলনাড়ুতে মোট আক্রান্ত ৭০ হাজার ৯৭৭ জন। চতুর্থ স্থানে থাকা গুজরাতে মোট আক্রান্ত ২৯ হাজার ৫২০ জন।

উত্তরপ্রদেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা শুক্রবার ২০ হাজার পার করেছে। করোনা সংক্রমণের হিসাবে এর পর রয়েছে রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্নাটক। এই সব রাজ্যগুলি ১০ হাজারের গণ্ডি পার করে এগিয়ে চলেছে। রাজস্থান (১৬,২৯৬), পশ্চিমবঙ্গ (১৫,৬৪৮), মধ্যপ্রদেশ (১২,৫৯৬), হরিয়ানা (১২,৪৬৩), তেলঙ্গানা (১১,৩৬৪), অন্ধ্রপ্রদেশ (১০,৮৮৪) ও কর্নাটকে (১০,৫৬০) জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে বিহার (৮,৪৭৩), জম্মু ও কাশ্মীর (৬,৫৪৯), অসম (৬,৩২১), ওড়িশা (৫,৯৬২), পঞ্জাব (৪,৭৬৯), কেরল (৩,৭২৬)-এর মতো রাজ্যগুলি।

গত ২৪ ঘণ্টায় পশ্চিমবঙ্গেও বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। ৪৭৫ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন এ রাজ্যে। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত হলেন ১৫ হাজার ৬৪৮ জন। এর মধ্যে কলকাতায় আক্রান্ত পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। পাশাপাশি এই রোগে রাজ্যে মৃতের সংখ্যা হল ৬০৬। আক্রান্ত ও মৃতের পাশাপাশি রাজ্যের সুস্থ হওয়ার সংখ্যাটাও উল্লেখযোগ্য। কোভিডে আক্রান্ত হয়েও রাজ্যের ১০ হাজার ১৯০ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে আক্রান্তের সব রেকর্ড ভেঙে গেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪০ হাজার ৫০০ জন। করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে দেশটিতে এটি এক দিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের সংখ্যা। এদিন মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৪৩০ জনের।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন এর খবরে বলা হয়েছে, চলতি সপ্তাহে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ শহর টেক্সাস, আলাবামা, অ্যারিজোনা, ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, আইডাহো, মিসিসিপি, মিসৌরি, নেভাডা, ওকলাহোমা, দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া ও ওয়াইমিং অঙ্গরাজ্যে আবারও ভয়াবহভাবে করোনা শনাক্ত শুরু হয়েছে।

প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত ২৫ লাখেরও বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সরকারি হিসেবে এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার মানুষের। সেরে উঠেছেন সাড়ে ১০ লাখ ৫২ হাজার। করোনায় মৃত্যু ও শনাক্তের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে।

বিশ্ব পরিস্থিতি

জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএইচইউ) দেয়া তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার (২৬ জুন) সকাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৭৪০ জনে।

প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৯৫ লাখ ৮৩ হাজার ১৪৪ জনে।

জেএইচইউ এর তথ্য অনুসারে, শুক্রবার (২৬ জুন) পর্যন্ত ব্রাজিল ও রাশিয়া যথাক্রমে ১২ লাখ ২৮ হাজার ১১৪ এবং ৬ লাখ ১৩ হাজার ১৪৮ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।

করোনায় ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৫৪ হাজার ৯৭২ জনের এবং রাশিয়ায় মারা গেছেন ৮ হাজার ৫৯৪ জন। 

রাশিয়ার পর সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত রোগীর তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে সাড়ে চার লাখেরও বেশি মানুষ এবং মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৮৯৪ জনে।  

গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত ২১৩টিরও বেশি দেশে ছড়িয়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। গত ১১ মার্চ করোনাভাইরাস সংকটকে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

এসএমএম

আরও পড়ুন