• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২০, ০২:৪০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ৩০, ২০২০, ০৩:২১ পিএম

কোভিড-১৯

এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু ৬৪ জন

এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু ৬৪ জন
অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা

আক্রান্তের ১১৫তম দিন 

..... 

গত ২৪ ঘণ্টা দেশে মারা গেছেন আরও ৬৪ জন। এখন পর্যন্ত এটাই হচ্ছে মৃত্যুর সর্বোচ্চ সংখ্যা। ৬৪ জনের মধ্যে ৫২ জন পুরুষ ও ১২ জন নারী। এর মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ৫১ জন এবং বাসায় ১৩ জন। এ নিয়ে মোট প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে গিয়ে দাঁড়াল ১ হাজার ৮৪৭ জনে।

বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে ঢাকা বিভাগে ৩১ জন চট্টগ্রামের ১২ জন, সিলেটের ২ জন, রাজশাহীর ৭ জন, খুলনার ৭ জন, বরিশালের ২ জন ও ময়মনসিংহের ২ জন।

বয়স ভিত্তিক বিশ্লেষণে ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ১১ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১৬ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ২১ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৬ জন এবং ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৭ জন। 

গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) দেশে নতুন করে ৩ হাজার ৬৮২ জনের দেহে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) শনাক্ত হয়েছে।

এ নিয়ে মোট শনাক্ত হলেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৪৮৩ জন।

আইইডিসিআর এর বরাত দিয়ে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৮৪৪ জন সহ মোট সুস্থ হয়েছেন ৫৯ হাজার ৬২৪ জন।

মঙ্গলবার (৩০ জুন) দুপুরে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে এসব তথ্য তুলে ধরেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।

ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে মোট ৬৮টি ল্যাবের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় ৬৬ টি ল্যাব থেকে ১৮ হাজার ৮৬৩ টি নমুনা পাওয়া গেছে। নমুনা পরীক্ষা করা হয় ১৮ হাজার ৪২৬ টি। সব মিলিয়ে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৭ লাখ ৬৬ হাজার ৪০৭ জন।

নমুনা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। সুস্থতার হার ৪০ দশমিক ৯৮ ও মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। 

এখন পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনের নেয়া হয়েছে ৪৪৯ জনকে। আইসোলেশনের আছেন ২৬ হাজার ৫৮৭ জন। আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৫৪৪ জন। এ পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন ১১ হাজার ৪৪০ জন। মোট আইসোলেশনে আছেন ১৫ হাজার ১৪৫ জন।

সোমবার (২৯ জুন) শনাক্ত হয় ৪ হাজার ১৪ ও মারা যায় ৪৫ জন। 

গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা শুরু করে। ৮ মার্চ দেশে প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। ১৮ মার্চ প্রথম কোনও করোনা রোগী মারা যায়।

চলতি মাসের ১ জুন ২,৩৮১, ২ জুন ২,৯১১, ৩ জুন ২,৬৯৫, ৪ জুন ২,৪২৩, ৫ জুন ২,৮২৮, ৬ জুন ২,৬৩৫, ৭ জুন ২,৭৪৩, ৮ জুন ২,৭৩৫, ৯ জুন ৩,১৭১ জন, ১০ জুন ৩,১৯০, ১১ জুন ৩, ১৮৭, ১২ জুন ৩,৪৭১ ও  ১৩ জুন ২,৮৫৬, ১৪ জুন ৩,১৪১, ১৫ জুন ৩,০৯৯, ১৬ জুন ৩,৮৬২, ১৭ জুন ৪,০০৮, ১৮ জুন ৩,৮০৩, ১৯ জুন ৩,২৪৩, ২০ জুন ৩,২৪০,  ২১ জুন ৩,৫৩১, ২২ জুন ৩,৪৮০, ২৩ জুন ৩,৪১৩, ২৪ জুন ৩,৪৬২, ২৫ জুন ৩,৯৪৬, ২৬ জুন ৩,৮৬৮ জন, ২৭ জুন ৩,৫০৪, ২৮ জুন ৩,৮০৯ ও ২৯ জুন ৪,০১৪ জন শনাক্ত হয়।

দেশে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড আছে ৫৩ জনের। সে তথ্য জানান হয় ১৬ জুনের বুলেটিনে। আর সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড আছে ৪ হাজার ৮ জনের। এ তথ্য জানান হয় ১৭ জুনের বুলেটিনে।

বুলেটিনে বরাবরের মতো করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে সবাইকে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, মুখে মাস্ক পরা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান ডা. নাসিমা।

করোনার ভয়াবহতা এখনও বাকি : ডব্লিওএইচও

বিশ্বে করোনা সংক্রণের ছয় মাস পার হয়ে গেছে। পৃথিবীজুড়ে মারা গেছে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ। তবু এ ভাইরাসের তীব্র রূপ দেখা এখনও বাকি রয়ে গেছে। চলমান পরিস্থিতি শেষ হতেও অনেক সময় লাগবে। এমনটাই বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

সোমবার (২৯ জুন) সংস্থাটির প্রধান টেডরস আধানম গেব্রিয়াসিস সোমবার ভার্চুয়াল বৈঠকে বলেছেন, আমরা সবাই চাচ্ছি বর্তমান পরিস্থিতির অবসান হোক। আমরা চাচ্ছি প্রতিটি জীবন বাঁচুক। কিন্তু কঠিন বাস্তবতা হলো এ পরিস্থিতি সহসা শেষ হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, কিছু কিছু দেশে পরিস্থিতির অগ্রগতি হলেও মূলত মহামারি বিশ্বব্যাপী দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ছে।

টেডরস বলেন, চীনে অন্তত ছয়মাস আগে ভাইরাসটির প্রার্দুভাব দেখা দেয়। এর উৎস খোঁজার লক্ষ্যে সেখানে আগামী সপ্তাহে একটি দল যাবে।

তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সঠিক পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও মারাত্মক রূপ নেবে। আরও বেশি মানুষ করোনা ভাইরাসের শিকার হবে।

তিনি পরীক্ষা, শনাক্ত, আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিনের ওপর আবারো গুরুত্বারোপ করেন।

ভারতের পরিস্থিতি

লাফ দিয়ে বাড়তে বাড়তে ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ লাখ ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮ হাজার ৫২২ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হলেন পাঁচ লাখ ৬৬ হাজার ৮৪০ জন। মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু ও দিল্লি— দেশের মোট আক্রান্তের ৬০ শতাংশই এই তিনটি রাজ্য থেকে।

দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যার ৫৯ শতাংশই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

আক্রান্তের পাশাপাশি বাড়ছে মৃত্যুও। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট ১৬ হাজার ৮৯৩ জন প্রাণ হারালেন করোনার কারণে। এর মধ্যে সাত হাজার ৬১০ জন মারা গেছেন মহারাষ্ট্রে। রাজধানী দিল্লিতে দু’হাজার ৬৮০ জন। তৃতীয় স্থানে থাকা গুজরাতে এক হাজার ৮২৭ জনের প্রাণ কেড়েছে করোনা। হাজার পেরনোর তালিকায় ঢুকে পড়েছে তামিলনাড়ুও। সেখানে মৃতের সংখ্যা এক হাজার ১৪১। উত্তরপ্রদেশ (৬৭২), পশ্চিমবঙ্গ (৬৫৩), মধ্যপ্রদেশ (৫৬৪), রাজস্থান (৪০৫)-এ মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া শতাধিক মৃত্যুর তালিকায় রয়েছে তেলঙ্গানা (২৫৩), হরিয়ানা (২৩২), কর্নাটক (২২৬), অন্ধ্রপ্রদেশ (১৮০), পঞ্জাব (১৩৮)।

আক্রান্তের তালিকায় দেশের শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৬৯ হাজার ৮৮৩ জন। এর মধ্যে পাঁচ হাজার ২৫৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন গত ২৪ ঘণ্টায়। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তামিলনাড়ু ও দিল্লির আক্রান্তের সংখ্যাও।

গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৪ হাজার জন আক্রান্ত হওয়ায় তালিকার দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল তামিলনাড়ু। সেখানে মোট আক্রান্ত ৮৬ হাজার ২২৪ জন। দিল্লিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৫ হাজার ১৬১ জন।

আক্রান্তের নিরিখে চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে গুজরাট (৩১,৯৩৮) ও উত্তরপ্রদেশ (২২,৮২৮)। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ (১৭,৯০৭), রাজস্থান (১৭,৬৬০), তেলঙ্গানা (১৫,৩৯৪), হরিয়ানা (১৪,২১০), অন্ধ্রপ্রদেশ (১৩,৮৯১), কর্নাটক (১৪,২৯৫), মধ্যপ্রদেশ (১৩,৩৭০)। এর পর আছে বিহার, আসাম, জম্মু ও কাশ্মীর, ওড়িশা ও পঞ্জাবের মতো রাজ্য, যেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখনও দশ হাজারের কম।

গত তিন চার দিন ধরে পশ্চিমবঙ্গে প্রতিদিন ৫০০ জনেরও বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন করোনায়। রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬২৪ জন। এই বৃদ্ধির জেরে রাজ্যে মোট আক্রান্ত হলেন ১৭ হাজার ৯০৭ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৬৫৩ জন।

আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়লেও, করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যাও স্বস্তি দিচ্ছে দেশবাসীকে। এমনিতেই করোনা অ্যাক্টিভ রোগীর থেকে সুস্থ হয়ে উঠে ওঠার সংখ্যা এক লাখেরও বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ হাজার ৯৯ জন করোনার কবল থেকে মুক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে মোট ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৮২২ জন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হলেন।

বিশ্ব পরিস্থিতি

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা মঙ্গলবার (৩০ জুন) সকাল পর্যন্ত ১ কোটি ২ লাখ ৭৫ হাজার ৩৯২ জনে দাঁড়িয়েছে। সেই সাথে প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৪ হাজার ৮৫১ জন।

জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএইচইউ) দেয়া তথ্য বিশ্লেষণে জানা গেছে, করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্রের  পরে দ্বিতীয় রয়েছে ব্রাজিল। ব্রাজিলে আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ১৯৫ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ৫৮ হাজার ৩১৪ জন।

সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দেশের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে থাকা রাশিয়ায় মোট আক্রান্ত ৬ লাখ ৪০ হাজার ২৪৬ জন। করোনায় আক্রান্ত দেশের তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত। দেশটিতে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ৫ লাখ ৪৮ হাজার ৩১৮ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ১৬ হাজার ৪৭৫ জন।

সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্রে মোট আক্রান্ত ২৫ লাখ ৮৮ হাজার ২০ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ১ লাখ ২৬ হাজার ১৩১ জন।

মৃত্যুর সংখ্যার দিক দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটিতে ৪৩ হাজার ৬৮৯ জন মারা গেছেন।

গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত ২১৩টিরও বেশি দেশে ছড়িয়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। গত ১১ মার্চ করোনাভাইরাস সংকটকে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

এসএমএম

আরও পড়ুন