• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২০, ০৪:০১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ২৪, ২০২০, ০৪:০১ পিএম

শীতে ভয়ঙ্কর হবে করোনা

শীতে ভয়ঙ্কর হবে করোনা

বাংলাদেশে গত ৩ মাস ধরে করোনা পরিস্থিতি একই রকম। শতকরা ২০ থেকে ২৩ ভাগের মধ্যে প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে। পরীক্ষা কমানো হলেও আক্রান্তের সংখ্যা কমেনি, মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৩ এর মধ্যে ঘোরাফেরা করছে, সুস্থতার হার ৫৫ থেকে ৬০ ভাগ। 

বাংলাদেশে করোনা আসলে সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে কি না, সেই বিষয়ে নিশ্চিত নন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশে একই অবস্থায় দীর্ঘদিন করোনা থাকার ফলে বিশেষজ্ঞদের পক্ষে কোনো প্রক্ষেপণ করাও সম্ভবপর হচ্ছে না। একদিকে সীমিত আকারে পরীক্ষা হচ্ছে, অন্যদিকে বহুলোক পরীক্ষার আওতার বাইরে থাকছে এবং মৃদু উপসর্গ বা উপসর্গহীন মানুষ পরীক্ষা ছাড়াই সুস্থ হয়ে উঠছেন। এরকম পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে করোনা আসলে কতদিন থাকবে বা করোনা কবে কমবে সে বিষয়ে কোন সঠিক বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ করা সম্ভব হচ্ছে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

এই পরিস্থিতিতেই নতুন শঙ্কার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করছেন, সামনে শীত এবং শীতে যদি এইরকম অবস্থা থাকে, তাহলে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। ইউরোপ-আমেরিকার অভিজ্ঞতা থেকেই বিশেষজ্ঞরা এই ধরণের আশঙ্কা ব্যক্ত করছেন বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হয়েছিল গত মার্চে। সে সময় বাংলাদেশে উষ্ণ সময় শুরু হয়। পৃথিবীতে যে দেশগুলোতে করোনা তাণ্ডব চালিয়েছে সেই দেশগুলোতে শীতকালেই করোনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকায় শীত মৌসুমে করোনা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছিল। যদিও এরকম কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য-প্রমাণ নেই যে গরমকালে করোনা চলে যায়। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, শীতে যে করোনার প্রকোপ ভয়াবহ হয় তা প্রমাণিত। আর সে কারণে বাংলাদেশে যদি আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসে, তাহলে করোনা সংক্রমণ শীতে ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করতে পারে। 

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বাংলাদেশে অক্টোবরের শেষ থেকে শীতের প্রকোপ শুরু হতে পারে এবং নভেম্বর-ডিসেম্বর-জানুয়ারি এই তিন মাস শীতকালীন সময়। এবার আগাম শীতেরও পূর্বাভাস দিচ্ছেন কোন কোন আবহাওয়াবিদ। এ রকম বাস্তবতায় বাংলাদেশে যদি আগামী অক্টোবরের মধ্যে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হয়, তবে শীতে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, আরও দুই বছর আমাদের করোনার সঙ্গে বসবাস করতে হবে। এটা সত্যি হলে শীতেও আমাদের করোনার সঙ্গে লড়াই করতে হবে। যদিও স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন যে, করোনা আপনাআপনি বিদায় নেবে। কিন্তু এটাকে হাস্যকর এবং উদ্ভট বলে মনে করছেন চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন , এরকম কোনো তথ্য-উপাত্ত আমাদের হাতে নেই। বাংলাদেশে এখন স্বাস্থ্যবিধি না মানা, সামাজিক দূরত্ব না মানা এবং গাদাগাদি হয়ে চলাফেরার কারণে করোনা সংক্রমণ কমার কোনো লক্ষণ নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এ কারণে আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে করোনা পরিস্থিতি নাগালের মধ্যে আসবে এমন আশাবাদও শোনাতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা। এ কারণেই সামনের দিনগুলোতে আমাদের করণীয় কী তা আমাদের এখনই নির্ধারণ করা দরকার।

বিশ্বে ভ্যাকসিন নিয়ে যে দৌড়ঝাঁপ হচ্ছে সেখানেও নিরাপদ এবং পরীক্ষিত ভ্যাকসিন পাওয়া আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির আগে সম্ভব নয় বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। আর এ ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের সামনের দিনগুলো নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ বাংলাদেশে যখন শীতকাল শুরু হবে, তখন করোনা সংক্রমণ ইউরোপ-আমেরিকার মতো ভয়াবহ হবে কি না; তা নিয়ে কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করছেন। অবশ্য এর সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করছেন অনেকে। তারা বলছেন, বাংলাদেশে যেভাবে শীত আসে সেই শীতটি ইউরোপ-আমেরিকার উষ্ণকালের মতোই। কাজেই বাংলাদেশে শীতে করোনা ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করবে এমন কোন বাস্তবভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত নেই। তাই শেষ পর্যন্ত করোনার প্রকোপ ভয়াবহ হবে নাকি এভাবেই করোনা আরও কিছুদিন থাকবে, তা বোঝা যাবে সামনের দিনগুলোতে।

এসকে/এসইউ