• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৪, ২০১৯, ০৬:৩৮ পিএম

জোড়া মস্তিষ্ক

হাঙ্গেরিতে যে চিকিৎসা হবে রাবেয়া-রোকেয়ার 

হাঙ্গেরিতে যে চিকিৎসা হবে রাবেয়া-রোকেয়ার 
রায়েবা-রোকেয়া। ছবি : জাগরণ

 

মাথার চামড়া বৃদ্ধি এবং মস্তিষ্ক আলাদা করা সর্বশেষ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে জোড়া মস্তিষ্কের রাবেয়া-রোকেয়াকে হাঙ্গেরি নেয়া হচ্ছে। হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে অবস্থিত সেইন্ট জোন্স হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ ও মিলিটারি হাসপাতালে ৩০ মাস বয়সী রাবেয়া-রোকেয়াকে চিকিৎসা দেওয়া হবে। 

শুক্রবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম রাবেয়া-রোকেয়ার মা-বাবার হাতে হাঙ্গেরি যাওয়ার এয়ার-টিকিট তুলে দেন। রোকেয়া-রাবেয়াকে হাঙ্গেরিতে নিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত নানা তথ্যাদি তুলে ধরতে এদিন প্রেস ব্রিফিং এর আয়োজন করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

রাবেয়া-রোকেয়ার চিকিৎসার সমন্বয়ক ও শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা সামন্ত লাল সেন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পূর্ণ সহযোগিতায় রাবেয়া-রোকেয়াকে হাঙ্গেরিতে নেওয়া নেয়া হচ্ছে। তাদের দেখ-ভালের সঙ্গে থাকবেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহকারি অধ্যাপক হোসাইন ইমাম। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকবেন রাবেয়া-রোকেয়ার বাবা রফিকুল ইসলাম, মা তাসলিমা খাতুন ও রাফিয়া নামে তাদের ছয় বছরের বোন। আজ শুক্রবার (৪ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১টায় তাদের নিয়ে এমিরেটস এয়ারলাইন্স এর একটি ফ্লাইট হাঙ্গেরির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবে।

আগামী ১৫ জানুয়ারি হাঙ্গেরিতে রাবেয়া-রোকেয়ার তৃতীয় অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা রয়েছে।এ জন্য তাদের থাকতে প্রায় তিন মাস বা তার কিছু বেশি সময়। তাদের চিকিৎসায় যুক্ত আছেন হাঙ্গেরির ইন্টারভেনশন নিউরোলজিস্ট ইস্তাভান হুদাক ও নিউরোসার্জন অ্যান্ড্রু চকে।

হাঙ্গেরিতে রাবেয়া-রোকেয়ার কী চিকিৎসা করা হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য মেলেনি প্রেস ব্রিফিং থেকে। তবে এ বিষয়ে কথা হয় তাদের চিকিৎসার সাথে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত থাকা ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের একাধিক চিকিৎসকের সাথে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাদেরই একজন সহকারি অধ্যাপক জাগরণকে জানান, এরইমধ্যে রাবেয়া-রোকেয়ার দুইটি অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে। যে অংশটি কেটে মস্তিষ্ক বা ব্রেন আলাদা করা হবে সে অংশে কৃত্রিমভাবে চামড়া বাড়ানো হবে হাঙ্গেরিতে। এটি সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারলে পরে ব্রেন বা মস্তিষ্ক আলাদা করার প্রক্রিয়া বা ধাপে যাওয়া যাবে। 

এই চিকিৎসায় সফল কতুটুক এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন।পৃথিবীতে নজির নেই জোড়া মস্তিষ্ক বা ব্রেনের কাউকে আলাদা করার পর বেঁচে আছে। অনেকে ভাবছেন এটা জোড়া মাথা। এটা সম্পূর্ণ ভুল। রাবেয়া-রোকেয়ার ব্রেন বা মস্তিষ্ক জোড়া। ‘মাথা জোড়া’ হলে চিকিৎসায় সফল হওয়া অনেক সহজ ছিল। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ব্রেন আলাদা করার পর তারা যদিও বেঁচে থাকে, তাহলে শারিরীকভাবে মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা থেকে যাবে। জিনিসটা তো ব্রেন। আলাদা করার সময় একটা না একটা অঘটন ঘটার আশঙ্কা থেকে যায়। যেমন- প্যারালাইজড, মূত্রনালির সমস্যা সৃষ্টিসহ নানা ভয় আছে। পরবর্তীতে এটা ভাল করা অত্যন্ত দুরুহ। আমি ভয় পাচ্ছি এ বিষয়টা নিয়ে। যদি মারা যায় সেটা এক বিষয়। কিন্তু যদি কোনো সমস্যা নিয়ে বেঁচে থাকে, সেটা হবে সবচেয়ে ভয়াবহ কষ্টের।

প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে রাবেয়া-রোকেয়ার প্রথম অপারেশন সম্পন্ন করেন চিকিৎসকরা। এ অপারেশনের মাধ্যমে নতুন একটি রক্তনালি সৃষ্টি করা হয়। অপারেশনের আগে একটিমাত্র রক্তনালি দিয়ে দুই মস্তিষ্ক বা ব্রেনে রক্ত পরিসঞ্চালন হতো। তাদের পূর্ণ সুস্থ্ করতে দুইটি রক্তনালি অপরিহার্য ছিল।

দ্বিতীয় অপারেশন সম্পন্ন হয় ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে। এ সময় প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে তাদের মাথায় বেলুন পরানো হয়। যার মাধ্যমে চামড়া বৃদ্ধি পায়। চূড়ান্ত অপারেশনের একটি অন্যতম ধাপ ছিল। এই অপারেশনের জন্য ৩০ লাখ টাকারও বেশি ব্যয়ে চিকিৎসা-যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে কিনে আনা হয়।

হাঙ্গেরি ও জার্মানির চিকিৎসকদের নেতৃত্বে এই দুইটি অপারেশন সম্পন্ন হয়।

২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তির পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে রাবেয়া-রোকেয়ার চিকিৎসা করা হচ্ছে। তাদের মা- বাবা চাটমোহর উপজেলার আটলংকা গ্রামের স্কুল শিক্ষক রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা খাতুন। রাফিয়া (৬) নামে আরেক কন্যাশিশু রয়েছে এ দম্পত্তির।

২০১৬ সালের ১৬ জুলাই পাবনা সদরের একটি হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে রাবেয়া-রোকেয়ার জন্ম। তাদের বয়স যখন ৫ দিন, তখন থেকে চিকিৎসার জন্য ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা হয়। সেখানেও তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়।

আরএম/এসএমএম