• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুন ৯, ২০২১, ১১:০৯ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ৯, ২০২১, ১১:১৬ এএম

বাবা নয়, সন্তানের বুদ্ধিমত্তার কারণ মা

বাবা নয়, সন্তানের বুদ্ধিমত্তার কারণ মা

বিশ্ববিখ্যাত সম্রাট নেপোলিয়ান বোনাপার্ট বলেছেন, “তোমরা আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি দেব।কারণ, একজন শিক্ষিত মা কত প্রজন্মকে যে আলোকিত করতে পারেন, তার ইয়ত্তা নেই।”

সেই কথাই এখন প্রমাণিত। বাচ্চারা মায়ের কাছ থেকেই বুদ্ধিমত্তার গুণ গ্রহণ করে থাকে, বাবার কাছ থেকে নয়। সম্প্রতি এক সমীক্ষা উঠে এসেছে এমন তথ্য।

জন্মের পর থেকেই বাচ্চারা কার মতো হয়েছে, এ নিয়ে থাকে নানা জল্পনা-কল্পনা। স্বজনরা খুঁটিয়ে বেড়ান বাচ্চার চোখ, নাক, মুখ দেখতে কার মতো হলো। স্বভাবত আচরণেই বা কার প্রভাব বেশি দেখা যাচ্ছে। সন্তানদের বুদ্ধি, চালচলনে, কথার ধরনে স্বজনরা খুঁজে বেড়ান বাবা না মায়ের প্রভাব বেশি পড়েছে। সমীক্ষায় দেখা যায়, বাচ্চাদের স্বভাবের বৈশিষ্ট্যে বাবার প্রভাবও থাকে। কিন্তু বুদ্ধিমত্তার পুরোটাই পায় মায়ের কাছ থেকেই।

সমীক্ষার বিস্তারিত তথ্য নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম এই সময়-এর প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানায়, বাচ্চারা তাদের মায়ের কাছ থেকেই বুদ্ধিমত্তার গুণ গ্রহণ করে। এই দাবির পেছনে রয়েছে একাধিক বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা। সন্তান মা-বাবার কাছ থেকে আইকিউ স্তরসহ অন্যান্য বৈশিষ্ট্যও সমানভাবে অর্জন করে থাকে। তবে একটি জেনেটিক স্টাডিতে প্রমাণিত, বুদ্ধিমত্তার গুণাগুণ সন্তান পেয়ে থাকে তার মায়ের কাছ থেকেই।

সন্তান কতটা বুদ্ধিমান হবে কিংবা কতটা চালাক হবে, তা-ও মায়ের কাছ থেকেই পায়। মানে মায়ের জেনেটিকই সেটি নির্ধারণ করে থাকে। অন্যদিকে বাবার জিনগুলো সন্তানের বুদ্ধিমত্তায় সামান্য প্রভাব ফেলে বা কোনো ক্ষেত্রে একেবারেই প্রভাব ফেলে না।

সাইকোলজি স্পট নামক জার্নালে প্রকাশিত সমীক্ষার রিপোর্টে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে ১২ হাজার ৬৮৬ জনের ওপর একটি সার্ভে চালানো হয়। যাদের বয়স ছিল ১ থেকে ২২ বছর। জাতি, শিক্ষার স্তর, আর্থসামাজিক স্ট্যাটাস সম্পর্কে তাদের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়। একই প্রশ্ন তাদের মায়েদেরও করা হয়েছিল। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, বুদ্ধিমত্তার জিনটি X ক্রোমোজোমের সঙ্গে জড়িত। যা প্রধান ফিমেল ক্রোমোজোম।

ওই বছরই আরও একটি সমীক্ষা করা হয়। যেখানে প্রমাণিত হয়, যেহেতু নারীদের মধ্যে X ক্রোমোজোমের সংখ্যা দ্বিগুণ, তাই সন্তানের মধ্যে সেই ইন্টেলিজেন্স জিন সরবরাহ করে দেওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল।

এ বিষয়টি বৈজ্ঞানিকভাবেও সমর্থন পেয়েছে। বিজ্ঞান সমর্থনে জানিয়েছে, বুদ্ধিমত্তা একধরনের ‘শর্তসাপেক্ষ’ জিন, যা সাধারণত মায়ের মাধ্যমে সন্তানের কাছে পাঠানো হয়।

বিজ্ঞানের তথ্য অনুযায়ী, ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ বুদ্ধিমত্তা অবশ্যই বংশপরম্পরায় লাভ করে সন্তানরা। কিন্তু অবশিষ্ট হার নির্ধারিত হয় কিছু পারিপার্শ্বিক বিষয়ের ওপর। সন্তান তার মা-বাবার সঙ্গে কতটা ইমোশনালি যুক্ত, এই বিষয়টিও তাদের বুদ্ধিমত্তা নির্ধারণ করে। আবেগপ্রবণ মা ও তার উপস্থিতি বাচ্চাদের মধ্যে বুদ্ধিমত্তার হারকে তাৎপর্যপূর্ণভাবে বাড়িয়ে দেয়। আবেগের দিক দিয়ে সক্রিয় অভিভাবকের প্রভাবে বাচ্চাদের বুদ্ধি, জ্ঞানভিত্তিক বুদ্ধিমত্তা, ব্যক্তিত্ব এবং যুক্তিপূর্ণ চিন্তাভাবনা প্রভাবিত হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মায়েরাই সন্তানের দেখাশোনা ও লালন-পালনে মুখ্য বা প্রাথমিক ভূমিকা পালন করে। এতে বাচ্চাদের উন্নয়নে বা বিকাশের প্রাথমিক বা জটিল পর্যায়ে মায়ের প্রভাবই সব থেকে বেশি পড়ে। ওই সময় মায়ের প্রভাবেই প্রভাবিত হয় সন্তানরা। তাদের মস্তিষ্কের বিকাশেও মায়ের মতোই হয়। বাচ্চাদের পূর্ণ বিকাশে তাই শিক্ষিত, বুদ্ধিমতী মায়ের বিকল্প নেই।