• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৯, ০৪:১০ পিএম

ব্রেন আলাদা করার ধাপে রাবেয়া-রোকেয়ার প্রবেশ

ব্রেন আলাদা করার ধাপে রাবেয়া-রোকেয়ার প্রবেশ

 

জোড়া মস্তিষ্ক বা ব্রেনের রাবেয়া-রোকেয়ার মাথার চামড়া বৃদ্ধি করতে একটি অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন চিকিৎসকরা। এবার মস্তিষ্ক আলাদা করার পালা। হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে অবস্থিত সেইন্ট জোন্স হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ ও মিলিটারি হাসপাতালে ৩০ মাস বয়সী রাবেয়া-রোকেয়ার এসব চিকিৎসা চলছে।

শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা সামন্ত লাল সেন বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দৈনিক জাগরণকে বলেন, মস্তিষ্কের চামড়া বৃদ্ধি করার অপারেশনটি সফল হয়েছে। তারা এখন ভাল আছে।

৪ জানুয়ারি মোহাম্মদ নাসিম রাবেয়া-রোকেয়ার মা-বাবার হাতে হাঙ্গেরি যাওয়ার এয়ার-টিকিট তুলে দেন। এদিন রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে হাঙ্গেরির উদ্দেশে রওয়া দেয় রাবেয়া-রোকেয়া, তাদের বাবা রফিকুল ইসলাম, মা তাসলিমা খাতুন ও রাফিয়া নামে তাদের ছয় বছরের বোন।

হাঙ্গেরিতে তাদের থাকতে হবে প্রায় তিন মাস বা তার কিছু বেশি সময়। তাদের চিকিৎসায় যুক্ত আছেন হাঙ্গেরির ইন্টারভেনশন নিউরোলজিস্ট ইস্তাভান হুদাক ও নিউরোসার্জন অ্যান্ড্রু চকে। সামন্ত লাল সেন জানান, তাদের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পূর্ণ সহযোগিতায় রাবেয়া-রোকেয়ার চিকিৎসা চলছে।

ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে এরইমধ্যে রাবেয়া-রোকেয়ার দুইটি অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আর যে অংশটি কেটে মস্তিষ্ক বা ব্রেন আলাদা করা হবে সে অংশে কৃত্রিমভাবে চামড়া বাড়ানোর ধাপ শেষ হলো হাঙ্গেরিতে। এবার ব্রেন বা মস্তিষ্ক আলাদা করার প্রক্রিয়া বা ধাপে যাবার পথ তৈরি হলো।

এই চিকিৎসায় সফলতার হার কতুটুক- এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের একজন সহকারী অধ্যাপক বলেন, এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন। পৃথিবীতে নজির নেই জোড়া মস্তিষ্ক বা ব্রেনের কাউকে আলাদা করার পর বেঁচে আছে। অনেকে ভাবছেন এটা জোড়া মাথা। এটা সম্পূর্ণ ভুল। রাবেয়া-রোকেয়ার ব্রেন বা মস্তিষ্ক জোড়া। ‘মাথা জোড়া’ হলে চিকিৎসায় সফল হওয়া অনেক সহজ ছিল।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ব্রেন আলাদা করার পর তারা যদিও বেঁচে থাকে, তাহলে শারিরীকভাবে মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা থেকে যাবে। জিনিসটা তো ব্রেন। আলাদা করার সময় একটা না একটা অঘটন ঘটার আশঙ্কা থেকে যায়। যেমন- প্যারালাইজড, মূত্রনালির সমস্যা সৃষ্টিসহ নানা ভয় আছে। পরবর্তীতে এটা ভাল করা অত্যন্ত দুরুহ। আমি ভয় পাচ্ছি এ বিষয়টা নিয়ে। যদি মারা যায় সেটা এক বিষয়। কিন্তু যদি কোনো সমস্যা নিয়ে বেঁচে থাকে, সেটা হবে সবচেয়ে ভয়াবহ কষ্টের।

প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে রাবেয়া-রোকেয়ার প্রথম অপারেশন সম্পন্ন করেন চিকিৎসকরা। এ অপারেশনের মাধ্যমে নতুন একটি রক্তনালি সৃষ্টি করা হয়। অপারেশনের আগে একটিমাত্র রক্তনালি দিয়ে দুই মস্তিষ্ক বা ব্রেনে রক্ত পরিসঞ্চালন হতো। তাদের পূর্ণ সুস্থ্ করতে দুইটি রক্তনালি অপরিহার্য ছিল।

দ্বিতীয় অপারেশন সম্পন্ন হয় ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে। এ সময় প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে তাদের মাথায় বেলুন পরানো হয়। যার মাধ্যমে চামড়া বৃদ্ধি পায়। চূড়ান্ত অপারেশনের একটি অন্যতম ধাপ ছিল। এই অপারেশনের জন্য ৩০ লাখ টাকারও বেশি ব্যয়ে চিকিৎসা-যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে কিনে আনা হয়।

হাঙ্গেরি ও জার্মানির চিকিৎসকদের নেতৃত্বে এই দুইটি অপারেশন সম্পন্ন হয়।

২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তির পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে রাবেয়া-রোকেয়ার চিকিৎসা করা হচ্ছে। তাদের মা- বাবা চাটমোহর উপজেলার আটলংকা গ্রামের স্কুল শিক্ষক রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা খাতুন। রাফিয়া (৬) নামে আরেক কন্যাশিশু রয়েছে এ দম্পত্তির।

২০১৬ সালের ১৬ জুলাই পাবনা সদরের একটি হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে রাবেয়া-রোকেয়ার জন্ম। তাদের বয়স যখন ৫ দিন, তখন থেকে চিকিৎসার জন্য ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা হয়। সেখানেও তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়।

আরএম/এসজেড