• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৯, ০১:২৬ পিএম

জরুরি স্বাস্থ্য সেবায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী সরকারি হাসপাতাল

জরুরি স্বাস্থ্য সেবায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী সরকারি হাসপাতাল

 

প্রতিদিন হাজার হাজার রোগীর চাপে ভার হয়ে থাকলেও দেশের সরকারি হাসপাতালগুলো জরুরি স্বাস্থ্য সেবায় এখনও অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে গ্রিন রোডে কর্মরত অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হন আফজাল হোসেন। সহকর্মীরা সংজ্ঞাহীন আফজালকে নিয়ে যান নিকটস্থ গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগ জানিয়ে দেয় এখানে আফজালকে রাখা সম্ভব নয়। পরে নেয়া হয় নিকটস্থ ল্যাব এইড হাসপাতালে। সেখানের জরুরি বিভাগ থেকেও বলা হয় অবস্থা গুরুতর আফজালের, এখানে উপযুক্ত চিকিৎসা প্রদান সম্ভব নয়। পরে সহকর্মী রাশেদের পরামর্শে নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। এসময় চিকিৎসক আফজালকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুনে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জানিয়ে দেন, এখানে-ওখানে ঘুরে সময়ক্ষেপন করা মারাত্মক ভুল হয়েছে। শুরুতেই ঢাকা মেডিকেল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট বা শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে নিলে অঘটন এড়ানোর সুযোগ থাকতো।

এই চিকিৎসক রাশেদের কাছে আরও বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলো ঝুঁকিপূর্ণ বা জটিল কেস গ্রহণ করতে চায় না।

বুধবার রাশেদ দৈনিক জাগরণকে বলেন, বেসরকারি হাসপাতালের আচরণ দেখে আমি অবাক। রোগীর জীবন বাঁচানো নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হৃদরোগ বিভাগের মেডিকেল অফিসার দ্বীনে মুজাহিদ মো. ফারুক ওসমানী দৈনিক জাগরণকে বলেন, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা যেমন হৃদরোগ, সড়ক দুর্ঘটনা, আত্মহত্যার চেষ্টা, ব্রেন স্ট্রোকসহ আরও বেশকিছু বিষয় মোকাবিলায় প্রতিটি সরকারি হাসপাতাল সব সময় সজাগ থাকে। এসবে আক্রান্তরা বেশিরভাগই মধ্য ও নিম্ন আয়ের। তারা জরুরি সেবার জন্য সরকারি হাসপাতালেই আসেন। কেউ কেউ বেসরকারিতে গেলেও পরক্ষণেই সরকারি হাসপাতালে চলে আসেন ভাল সেবার আশায়। অনেক সময় টাকা দিয়েও বেসরকারি হাসপাতাল থেকে উপযুক্ত জরুরি সেবা মিলে না।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের সাবেক ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার আরাফাত আহমেদ দৈনিক জাগরণকে বলেন, জরুরি স্বাস্থ্যসেবায় সরকারি হাসপাতালের ধারে কাছেও নেই বেসরকারি হাসপাতাল। দেশে প্রতিদিন যত জরুরি সেবা প্রদানের ঘটনা ঘটছে তার ৯৯ ভাগই প্রদান করা হয় সরকারি হাসপাতাল থেকে। বেসরকারি কিছু হাসপাতালে ভাল জরুরি সেবা আছে, কিন্তু সেসব অত্যন্ত ব্যয়বহুল। বাড়ি-গাড়ির মালিক, প্রচুর ব্যাংক-ব্যালেন্সের মালিক ছাড়া সেই হাসপাতাল থেকে সেবা নেয়া সম্ভব নয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, নিউরো সায়েন্স ইনস্টিটিউট, কিডনি ইনস্টিটিউট, মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউট, হৃদরোগ ইনস্টিটিউটসহ যত সরকারি  মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট আছে, তার প্রতিটিতে জরুরি বিভাগ আছে। উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা নিয়ে এসব জরুরি বিভাগ জেগে থাকে ২৪ ঘণ্টা। যে কোনো বিষয়ে জরুরি সেবা মিলে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে। শুধুমাত্র  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে জরুরি সেবা পাওয়া যায়- হৃদরোগ, অর্থোপেডিক্স, গাইনি ও নিউরো সার্জারি বিভাগ থেকে।

গত রোববার ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে মিরাজ নামের এক রোগীর সঙ্গে কথা হচ্ছিলো। মানিকগঞ্জে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় তার ডান পায়ের একটি হাড় ভেঙে চামড়া ভেদ করে বেরিয়ে পড়েছে। তিনি জানান, প্রথমে তাকে নেয়া হয়েছিল শ্যামলীর ট্রমা সেন্টারে। কিন্তু সেখানে জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ভাল লাগেনি। খরচ অনুপাতে সেবা নেই। এজন্য তৎক্ষণাৎ আনা হয় পঙ্গু হাসপাতালে। এখানে আনার পরপরই চিকিৎসকরা উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। জরুরিভিত্তিতে একটি অপারেশনও করেন।

মিরাজের বড় ভাই সোহান বলেন, সবাইর মুখে শুনছি ট্রমায় গেলে নাকি ভাল চিকিৎসা পাবো। আমি ভাবছি- টাকা যায় যাক, ভাইকে বাঁচাব। কিন্তু গিয়ে দেখি শুধু টাকাই দেব, কাজের কাজ হবে না। এজন্য পঙ্গুতে আনলাম। এখানে তাৎক্ষণিক যা সেবা পেয়েছি, আমি অনেক অবাক।

সরকারি নিয়মানুযায়ী- প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগ থাকতেই হবে। শয্যা অনুযায়ী- এই বিভাগের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক চিকিৎসক, নার্সসহ অন্য লোকবল থাকবে। কিন্তু বাস্তবতা বলছে- অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল নামমাত্র জরুরি বিভাগ চালু রেখেছে, চিকিৎসক-নার্স নয়, সাদা এপ্রোন গায়ে পরিয়ে কাজ চালানো হয় কথিত চিকিৎসক দিয়ে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক তানভীর আহমেদ বুধবার দৈনিক জাগরণকে বলেন, জরুরি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় সরকারি হাসপাতালগুলোয় সব সময় একটা দল প্রস্তুত থাকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও কড়া নির্দেশনা থাকে এর প্রতি। এজন্য ভাল ও আস্থাশীল সেবা পাওয়া যায় সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে। তাছাড়া প্রতিদিন এতো রোগী দেখতে হয় সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরতদের, এতে তারা অনেক দক্ষ হয়ে উঠেন। যে দক্ষতা তাদের চেয়েও বেশি পড়াশোনা করা বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের থাকে না।

আরএম/বিএস