• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ৯, ২০১৯, ০২:২৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ৯, ২০১৯, ০২:২৬ পিএম

লিবিয়া থেকে পালাচ্ছে মানুষ

লিবিয়া থেকে পালাচ্ছে মানুষ

 

লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির কাছে নতুন করে লড়াই শুরু হওয়ায় প্রাণ বাঁচাতে অন্তত দুই হাজার ৮০০ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। যারা পালাতে পারেনি তারা অত্যন্ত মানবেতর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। সেখানে পানি ও বিদ্যুতের মত জরুরি সেবা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে জেনারেল খলিফা হাফতারের বিদ্রোহী বাহিনী ত্রিপোলির উপকণ্ঠে আক্রমণ শুরু করে। তারা লিবিয়ার জাতিসংঘ সমর্থিত সরকারের কাছ থেকে ত্রিপোলির নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নিতে চাইছে।

প্রধানমন্ত্রী ফায়েজ আল-সেরাজের অভিযোগ, জেনারেল হাফতার অভ্যুত্থানের চেষ্টা করছেন। বিদ্রোহী দলগুলো তার সঙ্গে যোগ দিতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
গণস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সোমবার হামলায় অন্তত ২৫ জন নিহত এবং আরো ৮০ জন আহত হয়েছে বলে জানানো হয়। যদিও এর আগে হতাহতের সংখ্যা আরো বেশি বলা হয়েছিল। জেনারেল হাফতার বাহিনী তাদের অন্তত ১৪ যোদ্ধা নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে।

ত্রিপোলির লড়াই তীব্র হওয়ার পর আহত ও বেসামরিকদের এলাকা ছাড়তে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে দুই ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু জেনারেল হাফতার বাহিনী আক্রমণ জারি রাখে। এর প্রতিক্রিয়া জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়াসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশ আক্রমণ বন্ধের আহ্বান জানায়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, “ত্রিপোলির বিরুদ্ধে এ একতরফা লড়াই সেখানকার বেসামরিক নাগরিকদের জীবন হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। একই সঙ্গে তা লিবিয়ার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য শুরু হওয়া সশস্ত্র আন্দোলনের মর্যাদাও ক্ষুন্ন করছে।”

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আবেদন অগ্রাহ্য করে লিবিয়ার রাজধানীর দিকে এগিয়ে যাওয়া বিদ্রোহী বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান ত্রিপোলির একমাত্র সচল বিমানবন্দরে বোমাবর্ষণ করেছে। সোমবারের এই হামলার পর ত্রিপোলির পূর্বাংশের শহরতলীতে অবস্থিত মিটিগা বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই বিমান হামলাকে ‘মানবিক আইনের গুরুতর লংঘন’ বর্ণনা করে বিমান হামলার নিন্দা জানিয়েছেন লিবিয়ায় নিযুক্ত জাতিসংঘের দূত হাসান সালেমি।   

জেনারেল হাফতারের নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী বাহিনী লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির (এলএনএ) এক মুখপাত্র মিটিগা বিমানবন্দরে বিমান হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তাদের বাহিনী বিমানবন্দরটিতে শুধু পার্ক করে রাখা একটি মিগ বিমান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে, কোনো বেসামরিক বিমানকে লক্ষ্যস্থল করেনি বলে দাবি করেছেন তিনি। মিটিগা বিমানবন্দরটি বন্ধ করে দেওয়ায় ত্রিপোলির বাসিন্দাদের একমাত্র বিকল্প এখন ২০০ কিলোমিটার পূর্বের মিসরাতা বিমানবন্দর।

ত্রিপোলিতে এলএনএ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ত্রিপোলিভিত্তিক প্রধানমন্ত্রী ফায়েজ আল সেরাজের অনুগত বাহিনীগুলোর মধ্যে লড়াই আরও তীব্র হয়েছে। লড়াই তীব্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হতাহতের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। পূর্ব লিবিয়াভিত্তিক এলএনএ জানিয়েছে, গত কয়েকদিনের লড়াইয়ের তাদের ১৯ জন যোদ্ধা নিহত হয়েছেন এবং তারা ত্রিপোলির কেন্দ্রস্থলের আরও কাছে পৌঁছেছেন। ত্রিপোলির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, রাজধানীর দক্ষিণাংশে লড়াইয়ে তাদের যোদ্ধা ও বেসামরিকসহ অন্তত ২৫ জন নিহত ও ৮০ জন আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা সোমবার বিকালে জানিয়েছেন, ত্রিপোলির পুরনো পরিত্যাক্ত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে এলএনএ এবং নিয়ন্ত্রণ হারানোর পর তারা এয়ারপোর্ট রোড থেকে তাদের অবস্থান সরিয়ে নিয়েছে। ঘটনাস্থলে অবস্থান করা রয়টার্সের এক সাংবাদিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ত্রিপোলি সরকারের অনুগত বাহিনীগুলোকে পরিত্যাক্ত ওই বিমানবন্দরটির ভিতরে দেখা গেছে। বিমানবন্দরটির দক্ষিণে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে এলএনএর লড়াই আরও তীব্র হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছেন তারা। পিছিয়ে যাওয়ার আগে এলএনএ বাহিনী বিমানবন্দর থেকে অগ্রসর হয়ে ত্রিপোলির কেন্দ্রস্থলের ১১ কিলোমিটারের মধ্যে পৌঁছে গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

নিউ ইয়র্কের সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফেন দুজারিক জানিয়েছেন, ত্রিপোলির ভিতরে ও আশপাশের তিন হাজার ৪০০ বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, জরুরি সেবা সংস্থাগুলোকে হতাহত ও বেসামরিকদের কাছে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।

লিবিয়া নিরাপত্তা পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়ায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শক্তি দেশটি থেকে তাদের বাহিনী সরিয়ে নিচ্ছে। ২০১১ সালে লিবিয়ার দীর্ঘদিনের শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে উৎখাত এবং হত্যার মধ্য দিয়ে দেশটিতে যে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। তা ক্রমে আরো নাজুক হয়েছে। জাতিসংঘের উদ্যোগে দেশটিতে নতুন নির্বাচন আয়োজনের দিকনির্দেশনা নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল বৈঠকে বসার যে তারিখ ঠিক করা হয়েছিল তার ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি

এসজেড