• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২, ২০১৯, ১০:১৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৩, ২০১৯, ০৪:৩৩ এএম

ধেয়ে আসছে ‘ফণী’, ছোবল হানবে শুক্রবার

ধেয়ে আসছে ‘ফণী’, ছোবল হানবে শুক্রবার


ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রাণঘাতী ছোবলের আতঙ্কে কাঁপছে বাংলাদেশ ও ভারতের বিস্তীর্ণ উপকূল অঞ্চল।

বঙ্গোপসাগরের বুক থেকে ওঠে আসা এই ‘ফণী’ এখন প্রলয় সৃষ্টিকারী সাইক্লোন। দীর্ঘ সময় নিয়ে উত্তাল সাগরের বুকে সৃষ্টি হয়ে ক্রমাগত শক্তিশালী হয়ে উঠা সাইক্লোন ফণীর আঘাত মোকাবেলায় এরই মধ্যে তৎপর হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার। প্রথমে ঘূর্ণিঝড় রূপে আবর্তিত হলেও ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় করে প্রলয়ঙ্করী সাইক্লোনে পরিণত হয়েছে এটি। ধারণা করা হচ্ছে মাঝরাতের অন্ধকারেই ভারতের উপকূলে হানা দেবে চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী সাইক্লোন ফণী। বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানবে শুক্রবার দিনের শেষভাগে।

‘ফণী’র নামকরণ যেভাবে

সাইক্লোন ফণীর নামকরণ করেছে বাংলাদেশ। বাংলা ‘ফণী’ শব্দের অর্থ ফণা বিশিষ্ট বিষধর সাপ। এটি পুরুষবাচক বিশেষ্য (নাম পদ) যার স্ত্রীবাচক বিশেষ্য রূপ হচ্ছে ‘ফণীনি’। ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ, তথ্য প্রদান, সতর্কতা সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা ইত্যাদি কাজ সহজ করতেই এই নামকরণের প্রথা প্রচলিত হয়। ইংরেজিতে (Fani) লেখা হলেও এর উচ্চারণ ফণী।

৩০ এপ্রিল থেকে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ আরও জমাট বেধে এখন বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। যাকে আবহাওয়াবিদরা বর্ণনা করছেন ‘সিভিয়ার সাইক্লোন’ হিসেবে। বাংলায় যাকে বলা হয় প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়।  

বৃহস্পতিবার (০২ মে) বিকেলের আবহাওয়া বুলেটিন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় ফণী চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৯২৫ কি. মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৯০ কি. মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৮১০ কি. মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।

‘ফণী’ আরও ঘণীভূত ও উত্তর বা উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আগামীকাল শুক্রবার বিকাল নাগাদ ভারতের উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। পরবর্তীতে উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল হয়ে শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় পৌঁছতে পারে।

আবহাওয়ার বুলেটিনে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের (কি. মি.) মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কি. মি. যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কি. মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। 

মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

আবহাওয়া অফিস জানায়, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা,পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ফণী অতিক্রমকালে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা সমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘন্টায় ৯০ থেকে ১১০ কি. মি. বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। 


‘ফণী’ মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি

ঘূর্ণিঝড় ফণী’র ক্ষয়-ক্ষতির মোকাবিলায় এরই মধ্যে সাইক্লোন সেল্টার প্রস্তুত, মেডিকেল টিম গঠনসহ যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে খুলনা, যশোর, বাগেরহাটসহ উপকূলের ১৯ জেলার প্রশাসন। বরিশাল থেকে সব রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে, সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছে বিআইডব্লিউটিএ। 

সাতক্ষীরা জেলায় স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে । এরইমধ্যে জেলায় ৪নং সতর্ক সংকেত দেয়া হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার জেলে-বাওয়ালীদের পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নদীতে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। 

জেলার ১৩৭টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। প্রত্যেক ইউনিয়নে মেডিকেল টিম ও স্বেচ্ছাসেবক টিমের প্রস্তুতি, ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার, শুকনা খাবার মজুদ রাখা, ওষুধের পর্যাপ্ততা নিশ্চিতকরণসহ দুর্যোগ মোকাবেলায় সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি নিশ্চিত করা হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার অফিসে নিয়ন্ত্রণ-কক্ষ খোলা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ-কক্ষের ফোন নম্বর- ০৪৭১৬৩২৮১। এছাড়াও সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় ৩২শ প্যাকেট শুকনো খাবার, ১১৬ টন চাল, ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা, ১১৭ বান টিন, গৃহ নির্মাণে ৩ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা ও ৪০ পিস শাড়ি মজুদ আছে।

এদিকে চট্টগ্রাম জেলায় ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবেলায় স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনের দেয়া তথ্য মতে জেলায় দুই হাজার ৭৩৯টি সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর সঙ্গে সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক। সব উপজেলার ইউএনওকে আশ্রয় কেন্দ্র, শুকনো খাবার, স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় মন্ত্রণালয়ের সব অফিস খোলা রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে সিপিপি, স্কাউট ভলান্টিয়ার, আনসার-ভিডিপি, রেড ক্রিসেন্টসহ সব ভলান্টিয়ার রেডি রয়েছে। প্রাথমিকভাবে নগদ ৫ লাখ টাকা ও ২০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপ ও নোয়াখালীর হাতিয়া রুটে নৌচলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

২৮৪টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ উপজেলায় ৫টি করে ৭০টি, ২০০ ইউনিয়নে ১টি করে মোট ২০০টি, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৫টি এবং নগরে আরও ৯টি আরবান ডিসপেনসারি টিম গঠন করে তাদের প্রস্তুত হয়েছে।

মোট ৮৫২ জন টিমের সদস্যকে সম্ভাব্য দুর্যোগসহ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার জন্য বলা হয়েছে।  এছাড়া ৯ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ওষুধ এবং সাড়ে ৪ লাখ ওরস্যালাইনও মজুদ আছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন। 

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। কক্ষের নম্বর- ০৩১-৬৩৪৮৪৩।  

ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য ও সেবা পেতে কন্ট্রোল রুমের টেলিফোন নম্বরে (৬৩০৭৩৯, ৬৩৩৪৬৯) যোগাযোগের অনুরোধ জানিয়েছে চসিক।

ঘূর্ণিঝড় ফণী’র আঘাতের আশঙ্কায় চট্টগ্রাম নগরবাসীর যেকোনো সহযোগিতায় প্রস্তুতি নিয়েছে নগর পুলিশও। নগরীর ১৬টি থানাকে সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুর রহমান। থানার পাশাপাশি সিএমপি সদর দফতরেও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর ও বহির্নোঙ্গর মিলিয়ে বৃহস্পতিবার (২ মে) সকালে মোট জাহাজ ছিল ১৬৮টি। এর মধ্যে পণ্যবোঝাই জাহাজ ছিল ৮০টি। আবার এর মধ্যে ১৬টি জাহাজ জেটিতে পণ্য খালাসের জন্য নোঙ্গর করা ছিল। বাকি ৬৪টি জাহাজ ছিল বহির্নোঙ্গরে। ৬ নম্বর বিপদ সংকেত জারির পর জেটি থেকে ১৬টি জাহাজকে সরানো হয়েছে। 

কক্সবাজার, উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবির

দুর্যোগ ঝুঁকিতে থাকা কক্সবাজার উখিয়ার-টেকনাফের কয়েক লাখ রোহিঙ্গার নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।  স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে প্রশাসনের প্রস্তুতি আছে। 

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভারী বর্ষণ হলে পাহাড় ধসের আশঙ্কাও রয়েছে রোহিঙ্গা শিবিরে। তাই এ দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ২ হাজার ৪শ’ জন কর্মী।  এছাড়াও প্রস্তুত রয়েছে ২০ জন চিকিৎসকের নেতৃত্বে কয়েকটি মেডিকেল টিম। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ৫ হাজার রোহিঙ্গাকে দুর্যোগ মোকাবিলার প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। তারা যে কোনো দুর্যোগে এগিয়ে আসবে।

ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ উপকূলে আঘাত হানার আগেই উপকূলীয় এলাকার লোকজনের পাশাপাশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরও নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হবে। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয় শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ১৮ হাজার ৯৫১ জন। এর মধ্যে অন্তত ৭ লাখ নারী ও শিশু। 

৪ মে’র এইচএসসি পরীক্ষা ১৪ মে

ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র কারণে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের ৪ মে’র (শনিবার) সব পরীক্ষা ১৪ মে (মঙ্গলবার) নির্ধারিত সময় অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে।

বৃহস্পতিবার (০২ মে) আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ৪ মে’র সকালের পরীক্ষাগুলো ১৪ মে সকালে এবং বিকেলেরগুলো একই দিনে বিকেলে নেয়া হবে।

এইচএসসিতে ৪ মে সকালে উচ্চতর গণিত প্রথম পত্র এবং ইসলাম শিক্ষা প্রথম পত্রের পরীক্ষা ছিল। আর বিকেলে ছিল গার্হস্থ্য বিজ্ঞান প্রথম পত্রের পরীক্ষা ছিল। এছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ৪ মে জীববিজ্ঞান প্রথম পত্রের (তত্ত্বীয়) সূচি নির্ধারিত ছিল।

উপকূলীয় এলাকায় যাচ্ছে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ যেসব এলাকায় আঘাত হানতে পারে সেসব এলাকায় যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। ইতিমধ্যেই কয়েক’শ নেতাকর্মী সেসব এলাকার উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছেন। 

বৃহস্পতিবার (২ মে) দুপুরে সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এ তথ্য জানান।

প্রতিমন্ত্রী জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণী’র বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সেচ্ছাসেবক লীগের কয়েকশত নেতৃবৃন্দ উপকূলীয় অঞ্চলে রওয়ানা হয়ে গেছেন। তারা স্থানীয়দের সচেতন করার পাশাপাশি উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করবেন বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। 

পাউবোর কর্মকর্তা কর্মচারীদের ছুটি বাতিল 

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি স্থগিত করা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপ ‘ফণী’র প্রভাবে ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় পাউবোর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি স্থগিত করা হয়।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে এ তথ্য দিয়ে আরও বলা হয়, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের স্থানীয় জেলা প্রশাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তরসহ ত্রাণ ও উদ্ধারকারী বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

গভীর নিম্নচাপ ‘ফণী’ জনিত কারণে সম্ভাব্য বিপর্যয় হতে রক্ষায় তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের স্বার্থে বাপাউবোর্ডের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্ব স্ব কর্মস্থলে অবস্থান করতে হবে। 

দুর্যোগকালীন সময়ে ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কিত যে কোন তথ্য পাউবোর কেন্দ্রীয় তথ্যকেন্দ্রের নিম্নোক্ত নম্বরসমূহে জানানোর জন্য অনুরোধ জানানো হয়। নম্বরগুলো হচ্ছে-০২-৯৫৮৮৭৪৫, ০২-৯৫৫৩১১৮, ০২-৯৫৫০৭৫৫, ০১৭১৫০৪০১৪৪ এবং ০১৩১৮২৩৪৭৫১, খুলনা কেন্দ্র- ০৪১-৭৬০৪৬১।

ফণী মোকাবেলায় ভারতের প্রস্তুতি

ভারতের সরকারি সূত্রে খবর, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ২৮টি দল ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছে উড়িষ্যায়। এছাড়া ১২টি অন্ধ্রপ্রদেশে ও ৬টি পশ্চিম বাংলায়। অতিরিক্ত ৩০টি দল মজুত রাখা হয়েছে যে কোনও আপত্‍কালীন অবস্থার জন্য। উড়িষ্যা ও অন্ধ্রপ্রদেশের সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিত্‍সক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে ১৫ মে পর্যন্ত। 

পশ্চিমবঙ্গের আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, উড়িষ্যা থেকে ফণী মুখ ঘুরিয়ে যখন পশ্চিমবঙ্গের দিকে আসবে, তখন তার দাপট কমলেও গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১৫ কিলোমিটারের কাছাকাছি।

ভারতের উড়িষ্যা উপকূলের পুরী, কেন্দ্রপাড়া, ভদ্রক, বালাসোর, ময়ূরভঞ্জ, গঞ্জাম, খুরদা কটক, জাজপুর ইত্যাদি জায়গায় থেকে মানুষকে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ চলছে।

এরই মধ্যে পর্যটকদের পুরী ছেড়ে চলে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে উড়িষ্যা প্রশাসন। এদিকে, ঝড়ের আশঙ্কায় ১০৩ টি ট্রেন যাত্রা বাতিল ঘোষণা হয়েছে! এর মধ্যে রয়েছে হাওড়া-চেন্নাই কমণ্ডল এক্সপ্রেস, পাটনা-এরনাকুলাম এক্সপ্রেস, নয়া দিল্লি ভুবনেশ্বর রাজধানী এক্সপ্রেস, হাওড়া-হায়দরাবাদ ইস্টকোস্ট এক্সপ্রেস ,ভুবনেশ্বর -রামেশ্বর এক্সপ্রেস।

ঘূর্ণিঝড়ের পর পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভারত সরকার প্রতিরক্ষা বাহিনীকে মোতায়েন করে রেখেছে। নৌ বাহিনী থেকে শুরু করে বিমানবাহিনী এবং উপকূল রক্ষী বাহিনীর পাশাপাশি এনডিআরএফ এবং উড়িষ্যার বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে জাহাজ থেকে শুরু করে হেলিকপ্টার নিয়ে আসা হয়েছে।

উড়িষ্যার সবগুলো সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য কর্মীদের ছুটি ১৫ মে পর্যন্ত বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবীন পট্টনায়ক সরকার।

পুরো উড়িষ্যায় ৮৮০টি সাইক্লোন শেল্টার তৈরি করা হয়েছে। মানুষকে বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়ে সেখানেই রাখা হচ্ছে। রাজ্য প্রশাসনের প্রবীণ কর্মকর্তাদের গোটা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে নির্দেশ দিয়েছে সরকার।

উড়িষ্যার পাশাপাশি অন্ধ্রপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে ফণীর প্রভাব পড়তে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গের দুই মেদিনীপুর, দুই চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, হুগলি এবং ঝারগ্রামের মত জেলায় ঝড়ের প্রভাব পড়বে। প্রভাব পড়বে কলকাতাতেও।

অন্ধপ্রদেশের ৩টি জেলা শ্রীকাকুলাম, বিশাখাপত্তম এবং বিজয়নগর প্রভাব ফেলবে ঘূর্ণিঝড় ফণী, এইরমধ্যে উপকূলবর্তী এই শহরগুলোতে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে ।

এস খান/ আরআই