• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মে ১৫, ২০১৯, ০৭:২৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১৬, ২০১৯, ০৯:৩৮ পিএম

গর্ভপাত বিল

অ্যালাবামায় গর্ভপাত নিষিদ্ধ করলো সিনেট

অ্যালাবামায় গর্ভপাত নিষিদ্ধ করলো সিনেট

 

মাতৃস্বাস্থ্য রক্ষাব্যতীত গর্ভকালীন অবস্থায় এই প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ করে কঠোর আইন প্রণয়নে আনা একটি বিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালাবামা রাজ্যের সিনেটে পাস হয়। অ্যালাবামার সিনেটে ২৫-৬ ভোটে ধর্ষণ বা ব্যভিচার ব্যতীত সকল ক্ষেত্রে গর্ভপাত নিষিদ্ধ বিলটি পাস হয়।

এটা এখন রিপাবলিকান গভর্নরকে আইভের কাছে যাবে, তিনি এই বিলে স্বাক্ষর করবেন কি না তা তিনি বলেননি, কিন্তু তাকে গর্ভপাতের শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবেই দেখা হয়। চলতি বছরে ইতোমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬টি রাজ্যে গর্ভপাত অধিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা চালু করা হয়েছে।

১৯৭৩ সালে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের গর্ভপাতকে বৈধতা দেয়া আইনকে অ্যালাবামার নতুন এই আইন চ্যালেঞ্জ করবে বলে অ্যাক্টিভিস্টরা আশা করছেন। চলতি মাসের শুরুর দিকে অ্যালাবামার হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস এ বিলটি ৭৪-৩ ভোটে পাস করা হয়েছিল। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে মায়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করার ক্ষেত্রে গর্ভপাতকে অনুমতি দেয়া হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নারীর জন্য জাতীয় সংগঠন এই নিষিদ্ধকরণকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে অভিহিত করে এবং একে ‘আসন্ন নির্বাচনে গর্ভপাত বিরোধী প্রার্থীদের জন্য রাজনৈতিক সমর্থন দমন করার স্বচ্ছ প্রচেষ্টা’ বলছে তারা।

প্লানড প্যারেন্টহুড সাউথ ওয়েস্ট অ্যাডভোকেটের স্ট্যাসি ফক্স এই সিদ্ধান্তকে ‘অ্যালাবামা এবং এই দেশের নারীদের জন্য একটি অন্ধকার দিন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এই ভোটের জন্য অ্যালাবামা রাজনীতিবিদরা চিরদিন কুখ্যাত হয়ে থাকবেন এবং এজন্য কাদের জবাবদিহি করতে হবে তা আমরা প্রত্যেক মহিলাদের নিশ্চিত করব।’

অ্যালাবামার রাজনীতিবিদ নতুন আইন সম্পর্কে কী বলে?

আইনটির পৃষ্ঠপোষক রিপাবলিকান সাংসদ টেরি কলিন্স বলেছেন, ‘আমাদের বিলটি বলছে যে, গর্ভের শিশুটিও একজন ব্যক্তি।’ ডেমোক্র্যাটিক স্টেট সিনেটর ববি সিঙ্গেলটন এই বিল ‘ডাক্তারদের অপরাধী বানানো হচ্ছে’ বলে দাবি করেছেন এবং নারীদের শরীরে কী করতে হবে তা জানানোর জন্য পুরুষদের একটি প্রচেষ্টা এই বিল।

আইনটির সমর্থক রিপাবলিকান সিনেটর ক্লাইড চ্যাম্বলিস বলেছেন যে, এই বিলটির বিরুদ্ধে ‘রো বনাম ওয়েড’কে (১৯৭৩ সালের আইন) চ্যালেঞ্জ করার জন্য সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারবেন। বিতর্ক শুরু হওয়ার আগে ডেমোক্র্যাট রজার স্মিথম্যান বলেন, ‘আমরা বর্বরতা ও ধর্ষণের মাধ্যমে গর্ভবতী হওয়া ১২ বছর বয়সী একটি মেয়েকে বলছি যে, তার কোনো কিছু পছন্দের সুযোগ নেই।’

বিল কী বলছে?

গর্ভধারণের ৬ সপ্তাহের মধ্যেই সাধারণত ভ্রূণের হৃদস্পন্দন শনাক্ত করা যায়, এরপরেই গর্ভপাত নিষিদ্ধ করতে দেশটির সাংসদরা বিলটি পাস করাতে বিভিন্ন স্থানে যাবে। অ্যালাবামা পরিস্থিতির পর গর্ভধারণের যে কোনো পর্যায়ে গর্ভপাতকে প্রথম শ্রেণির গুরুতর অপরাধ বলে গণ্য করা হবে। গর্ভপাতের প্রচেষ্টা করার জন্য একজন ডাক্তারের ১০ বছরের জেল হতে পারে এবং পুরো প্রক্রিয়া সম্পাদনের জন্য ৯৯ বছর কারাবাস হতে পারে। একটি গর্ভপাতের জন্য নারীকে অপরাধমূলকভাবে দায়ী করা হবে না। মাতৃস্বাস্থ্যের গুরুতর ঝুঁকির ক্ষেত্রে বিলটি গর্ভপাতের অনুমতি দেয়।

রিপাবলিকান গভর্নর কে আইভ (উপরে বামে), ডেমোক্র্যাটিক স্টেট সিনেটর ববি সিঙ্গেলটন (নিচে বামে), রিপাবলিকান সিনেটর ক্লাইড চ্যাম্বলিস (নিচে ডানে)।

বিলের লেখাটিতে বলা হয়েছে, ‘স্ট্যালিনের গুলাগ কিংবা কম্বোডিয়ার হত্যাযজ্ঞের’ তুলনায় ও মানুষ গর্ভপাতের মাধ্যমে অধিক শিশুকে হত্যা করেছে। গর্ভপাত নিষিদ্ধে স্বাক্ষর করা সাংসদদের পক্ষের সমর্থকরা ফেডারেল কোর্টে একটি অনিবার্য চ্যালেঞ্জকে স্বাগত জানিয়েছে এবং এর বিরোধী সমর্থকেরা এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার অঙ্গীকার করেছে।

বিলটির স্থপতিরা নিম্ন আদালতগুলোতে পরাজিত হতে পারেন বলে আশা করলেও সুপ্রিম কোর্টে এর জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। ‘রো বনাম ওয়েড’ আইনের বিলুপ্তি ঘটানোই তাদের উদ্দেশ্য। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনোনীত দুই কনজারভেটিভ বিচারপতির সংযোজনে, গর্ভপাত বিরোধী কর্মীরা আমেরিকাতে সবচেয়ে বেশি বিভক্তিক বিষয়গুলোর মধ্যে একটিকে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের কাছে নিয়ে যেতে আগ্রহী।

অ্যালবামা প্রো-লাইফ কোয়ালিশনের প্রতিষ্ঠাতা অ্যরিক জনস্টন যিনি বিলের খসড়াতে সহায়তা করেছিলেন, তিনি এনপিআরকে বলেন : ‘গতিশীলতা পরিবর্তিত হয়েছে। বিচারকরা পরিবর্তিত হয়েছে, সেই সময়ের মধ্যে অনেকগুলো পরিবর্তন এবং তাই আমি মনে করি আমরা এমন পর্যায়ে রয়েছি যেখানে আমাদের একটি বড় এবং সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে।’

আইন অনুসারে গভর্নর আইভী স্বাক্ষরিত হলে অ্যালাবামার পদক্ষেপটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাতের অ্যাক্সেসকে চ্যালেঞ্জ করার ৩০০টিরও বেশি আইনের একটি হতে পারে। পদক্ষেপের তীব্রতা কর্মীদের নেতৃত্বে সতর্ক করেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘গর্ভপাত মরুভূমি’ হতে পারে।