• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২৬, ২০১৯, ০৩:৩৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২৬, ২০১৯, ০৩:৩৫ পিএম

রাজ্যে ঝড়ের মুখে একা মমতা, বিজেপিকে আটকাতে পারবেন?

রাজ্যে ঝড়ের মুখে একা মমতা, বিজেপিকে আটকাতে পারবেন?
মমতা বন্দোপাধ্যায়

মুখ্যমন্ত্রীত্ব ছাড়তে চেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রত্যাশিতভাবেই দল তার ইচ্ছা মেনে নেয়নি। দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েও তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, এবার সরকারের থেকে দলের কাজে তিনি বেশি সময় দেবেন। নেই। সন্দেহ নেই। কাজটা কঠিন তো বটেই, প্রায় অসম্ভবও। 

এ কথা দিনের আলোর মত সত্যি, এই তৃণমূল দলে নেতা একজনই। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাকিদের না আছে কোনও ক্ষমতা, না জনসংযোগ। মমতাকে বাদ দিলে এই দলটা ব্যান্ড পার্টির মত। সদ্য শেষ হওয়া লোকসভার ৪২টি আসনে দলের ৪২টি মুখ থাকলেও আসলে তিনিই সব কেন্দ্রের প্রার্থী, এ ঘোষণা মমতারই। প্রশ্ন হল, রাজ্যে বিজেপির এই উত্থানের সময়ে তার পক্ষে একা কুম্ভো হয়ে গড় রক্ষা করা কি সম্ভব? 

শাসক তৃণমূলের কাছে বাস্তব এখন অনেকটা ছিল বেড়াল হয়ে গেল রুমালের মত। এই নির্বাচন দেখিয়ে দিয়েছে, অতিমাত্রায় সংখ্যালঘু তোষণ, ছোট-মাঝারি-বড় মাপের নেতাদের দুর্নীতি, সিন্ডিকেট রাজ, দাদাগিরি, বিরোধীদের গায়ের জোরে দাবিয়ে রাখা, পছন্দ না হলে পুলিশ লেলিয়ে দেয়া এবং আইন-শৃঙ্খলার অবনতির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন মানুষ।

এই প্রেক্ষিতে তৃণমূলের গড়ে এখন চালকের আসনে বিজেপি। লোকসভায় ১৮টি আসন পেয়ে তারা ১২৯টি বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে গিয়েছে। রাজ্যের যা মুড, তাতে তৃণমূলের ভাঙন এখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। এরইমধ্যে এক বিধায়ক বিজেপির পক্ষে কথা বলে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। নিচুতলায় এরইমধ্যে দলবদল শুরু হয়ে গেছে। জেলায় জেলায় তৃণমূলের পার্টি অফিস দখল করে গেরুয়া রং লাগছে। বিজেপি নেতাদের দাবি, শতাধিক বিধায়ক দল ছাড়ার অপেক্ষায়। বহু পুরসভার কাউন্সিলাররা দড়ির ওপর দিয়ে হাঁটছেন। বেশ কয়েকজন বড়মাপের নেতাও বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন।বিজেপি নেতা মুকুল রায় বলেছেন, পুজোর আগে চমক দেখাবেন। পরিস্থিতি যা তাতে কোনও চমকই আশ্চর্যের হবে না।

রাজ্যে বছর শেষে কয়েকটি পুরসভার ভোট। আগামী বছর কলকাতা পুরসভার ভোট। ইসা সেমি ফাইনাল। ২০১২-এ বিধানসভার ভোট। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ২০১১-তে রাজ্যে পালাবদলের পর প্রায় রাতারাতি হাজার বামকর্মী তৃণমূল হয়ে যায়। এখন সেই তৃণমূল বাহিনী পদ্মের গন্ধে শিবির বদল করে গেরুয়া বাহিনী হবে। এটাই ইতিহাসের পরম্পরা।তারা হওয়া মোরগ। কোনও দলের প্রতি দায়বদ্ধতা নেই তাদের। অনেকের আশঙ্কা, দিল্লিতে বিজেপি সরকার থাকে রাজ্যে বিধানসভার ভোট এগিয়ে আসতে পারে।

প্রশ্ন হল, এই বাস্তব অবস্থার মোকাবেলা মমতা একা কি করবেন? পশ্চিমবঙ্গে চালু রসিকতা হল, দলে মমতা একাই পোস্ট, বাকি সব লাম্পপোস্ট। ঘটনাও তাই। আগামী দু-বছর একের পর এক পরীক্ষায় জিততে হলে সরকার ও দলের কাজে সমন্বয়। এ জন্য একটা শক্তিশালী টিম দরকার। মমতার সেনাপতিরা কি সেই গুরুদায়িত্ব পালনে সক্ষম? বিশেষত ভাঙ্গনের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা একটা দলকে অটুট ও শক্তিশালী রাখার কাজ করা? আপাতত উত্তরটা হচ্ছে না। সরকারের থাকার সুবিধা নিতে যে সব নেতা-কর্মীরা দলে দলে তৃণমূল করে, তাদের ভোল বদলাতে সময় লাগবে না। যেমনটা হয়েছে বামেদের ক্ষেত্রে। এখন শাসক দলেও তেমন হলে এই তৃণমূলকে ভগবানও বাঁচাতে পারবে না।  

ভিএস/এসএমএম