• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০১৯, ০২:০৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১৯, ২০১৯, ০৩:২৮ পিএম

‘জাতবিদ্বেষী’ মন্তব্য

রবীন্দ্রভারতীর ৪ বিভাগীয় প্রধানের পদত্যাগ

রবীন্দ্রভারতীর ৪ বিভাগীয় প্রধানের পদত্যাগ

তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্যের অভিযোগ তুলে ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বিভাগীয় প্রধান। ভূগোলের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান ‘তফসিলি’ উপজাতির সরস্বতী কেরকেটাকে জাত তুলে হেনস্থা করা হয়েছে, এমন অভিযোগে এই পদত্যাগের ঘটনা ঘটে। প্রতিবাদের একই পথ ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি স্টাডি সেন্টারের অধিকর্তা। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন তারা। যদিও অধ্যাপকদের তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র পরিষদ টিএমসিপি।

একদল পড়ুয়ার বিরুদ্ধে বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগ আনেন সরস্বতী কেরকেটা। তার অভিযোগ, ‘তফসিলি’ জাতভুক্ত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে দিনের পর দিন ধরে চলছে কটূক্তি ও হেনস্থা ৷ এর ফলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন তিনি। এর প্রতিবাদেই সোমবার (১৭ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরীর কাছে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। ওই অধ্যাপিকার সমর্থনে এগিয়ে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো তিন অধ্যাপক। এদিন অভিযোগকারী অধ্যাপিকা ছাড়াও উপাচার্যের কাছে নিজের পদত্যাগ পত্র জমা দেন এই তিন বিভাগীয় প্রধান। কয়েকজন অশিক্ষক কর্মী তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তারা। যদিও তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। অধ্যাপকদের সম্পর্কে তাদের অভিযোগ, নিয়মিত ক্লাসে আসতেন না তারা।

সমস্যা সমাধানে বুধবার বৈঠক ডাকেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য। বিভাগীয় প্রধান ও ডিনদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান উপাচার্য। ইস্তফা দেয়া বিভাগীয় প্রধানদেরও বৈঠকে যোগ দিতে বলা হয়। ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে রবীন্দ্রভারতী যান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

মঙ্গলবার (১৮ জুন) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা বলেন তিনি। এরপরই তিনি কথা বলেন পদত্যাগী চার শিক্ষক ও শিক্ষিকার সঙ্গে। শিক্ষামন্ত্রী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃষ্ট এই পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান হবে। এরইমধ্যে উপাচার্য এই ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছেন। এই ঘটনার জেরে অপমানিত হওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে অবিলম্বে পড়ুয়ারা যেন ভুল স্বীকার করে নেয়, সেই নির্দেশও এদিন দেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

শিক্ষামন্ত্রী স্পষ্ট করে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতির হারের বিষয়ে কোনো শিথিলতা করা হবে না। তিনি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম জড়িত একটি জায়গায় এই ধরনের ঘটনা কাম্য নয়। এই ধরনের ঘটনা, প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে। এটা ঘটা উচিত নয়।’ বৈঠকের পর শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। তদন্তে কারও বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পদত্যাগী অধ্যাপক ও অধ্যাপিকাদের ইস্তফা প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। সেই আবেদনে তারা সম্ভবত সাড়া দিতে পারেন বলেই সূত্রের খবর। একই পথে হাঁটতে পারেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি স্টাডি সেন্টারের অধিকর্তাও। ভূগোলের ওই শিক্ষিকাসহ অধ্যাপকদের একটা বড় অংশের অভিযোগ ক্যাম্পাসে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ও কর্মী সংগঠনের বিরুদ্ধে। তারা অবশ্য এদিনও সব অভিযোগই অস্বীকার করেছে। তাদের স্পষ্ট দাবি, তদন্তে তারা সাহায্য করবে।

সব মিলিয়ে ভূগোলের শিক্ষিকা সরস্বতী কেরকেটার জাত তুলে হেনস্থা হওয়ার অভিযোগকে ঘিরে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্যান্ডোরার বাক্স হঠাৎ খুলে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে এমনটা মাঝেমধ্যে ঘটলেও কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে টালবাহানা করেন বলে দাবি করে সরব হয়েছেন শিক্ষকদের একটি বড় অংশ। 

১৯৬২ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসটি ঐতিহ্যমণ্ডিত।

সূত্র : এনডিটিভি, সেই সময়

এসজেড