অবশেষে বহুলালোচিত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ অপেক্ষমান তদন্ত কার্যক্রমে গতি আনলো, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ও তদন্তকারী কর্মকর্তা অ্যাগনেস ক্যালামার্ডের প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদন। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তিনি দাবি করেন, সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের সাপেক্ষে খাশোগি হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসেবে, সৌদি রাজপুত্র মুহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে পূর্ণ তদন্ত ও বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনায় কোন প্রতিবন্ধকতা থাকছে না।
বুধবার (১৯ জুন) অ্যাগনেস ক্যালামার্ডের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা দ্য গার্ডিয়ান জানায়, দীর্ঘ তদন্ত কার্যক্রম শেষে বহুল প্রতীক্ষিত তদন্ত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন জাতিসংঘের এই বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা। প্রায় ১০০ পৃষ্ঠার এই তদন্ত প্রতিবেদনে জাতিসংঘের বিশেষ তদন্তকারী দলের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা সকল তথ্য বিস্তারিত সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানান ক্যালামার্ড।
প্রকাশিত প্রতিবেদন পেশকালে এক বিবৃতিতে এই জাতিসংঘের এই বিশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, ' খাশোগি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে নিয়োজিত জাতিসংঘের বিশেষ তদন্তকারী দলের অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, এটি একটি আইন বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড যা আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। আর এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে সৌদি আরব সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়।'
প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, সৌদি যুবরাজ বিন সালমানের অনুসারী, একদল সৌদি কর্মকর্তা তারই (বিন সালমান) নির্দেশে ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর তুরস্কে অবস্থিত সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরে সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকা স্বত্ত্বেও বিভিন্ন সময় তা থেকে সৌদি যুবরাজের সম্পৃক্ততার বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টা করে বিভিন্ন মহল।
প্রতিবেদনের তথ্য মতে, খাশোগিকে হত্যার মাত্র কয়েক মুহূর্ত আগে এই হত্যাকাণ্ডে নিয়োজিত দলটির দু'জন সদস্যের মাঝে কয়েক মিনিটের ফোনালাপ চলে। পরে কনস্যুলেটের ভেতরে স্থাপিত গোপন অডিও রেকর্ডিং ডিভাইজে ধারণকৃত টেপের সাহায্যে তা জাতিসংঘ তদন্ত দলের নাগালে আসে। এতে সুনির্দিষ্টভাবেই বলা হয় যে, আলাপরত ওই দুই ব্যক্তির একজন হলেন যুবরাজ বিন সালমানের একনিষ্ঠ সহকারী মাহের আব্দুলাজিজ মুতরেব ও অপরজন হলেন দলটির সঙ্গে থাকা ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ সালাহ মুহাম্মদ আবদাহ ত্যুবেইগি। হত্যার পর খাশোগির মরদেহ কিভাবে কনস্যুলেটের বাইরে বহন করা হবে তা নিয়েই এ দু'জনের মাঝে সংক্ষিপ্ত আলাপ চলে বলে তথ্য সূত্রে জানা যায়।
জাতিসংঘের এই বিশেষ হত্যা-তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘ এই প্রতিবেদনটিতে এমনই আরো বহু তথ্য-উপত্তা সংযোজিত হয়েছে যা দ্বিধাহীনভাবে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের সাথে সৌদি যুবরাজ বিন সালমান ও তার অনুসারীদের পাশাপাশি খুনিদের প্রশ্রয় প্রদানে, সৌদি আরব সরকারের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততাও প্রমাণ করে।
২০১৮ সালের ২ অক্টোবর নিজের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সংগ্রহের জন্য তুরস্কে অবস্থিত সৌদি কনস্যুলেটে যান সৌদি আরবের নাগরিক ও ওয়াশিংটন পোস্টের অনুসন্ধানী সাংবাদিক জামাল খাশোগি। পরে কনস্যুলেটের ভেতরেই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি। এ ব্যাপারে তাৎক্ষনিকভাবে হস্তক্ষেপ করেন তুরস্ক সরকার। শুরু থেকেই তুর্কি গোয়েন্দেরা জোর দাবি তুলে আসছিলো যে এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত আছেন সৌদি আরবের রাজপরিবারের কোন সদস্য। কিন্তু বিষয়টি বার বার প্রত্যাখান করে সৌদি আরব সরকার। আর এক্ষেত্রে তাদের সমর্থন জানায় ট্রাম্প প্রশাসন।
পরবর্তীতে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে একই তথ্যের সত্যতার দাবি তোলে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিআইএ। কিন্তু মার্কিন চাপের মুখে সেটিও ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে। অবশেষে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অপরাধ বিশেষজ্ঞ, অ্যাগনেস ক্যালামার্ডের নেতৃত্বে ঘটনার সত্যতা অনুসন্ধানে মাঠে নামে জাতিসংঘের বিশেষ তদন্তকারী দল। অবশেষে বুধবার, নিজেদের অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যাদি যাচাই শেষে খাশোগি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে তারা। দ্য গার্ডিয়ান
এসকে