• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০১৯, ০৫:৩৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ৭, ২০১৯, ০৫:৩৩ পিএম

বন্ধুর পাঠানো ইলিশ খেলেন বুদ্ধদেব 

বন্ধুর পাঠানো ইলিশ খেলেন বুদ্ধদেব 
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও বুদ্ধদেব গুহ - ফাইল ছবি

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে ইলিশ মাছ পাঠালেন ৩৫ বছরের পুরনো বন্ধু সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ। মাছ খেয়ে খুব ভালো লেগেছে বলে লেখককে ফোনে জানিয়েছেন বুদ্ধ-জায়া মীরা ভট্টাচার্য।

একজন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। জ্যোতি বসুর পর বামফ্রন্ট সরকারের দ্বিতীয় ও শেষ মুখ্যমন্ত্রী। অন্যজন বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। বিশেষত জঙ্গল নিয়ে তার একাধিক দুই বাংলার কাছে সম্পদ হয়ে রয়েছে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও বুদ্ধদেব গুহ। তাদের বন্ধুত্বের বয়স পেরিয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই বন্ধুত্বের শিকড় গেড়ে বসেছে আরও জমাট হয়ে।

বেশ কিছুদিন যাবৎ ভালো নেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শরীর। ঘরবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। সিওপিডি রোগে কাবু, তাই নিত্যসঙ্গী অক্সিজেন। চোখেও সমস্যা অনেক। প্রায় কিছুই স্পষ্ট করে দেখতে পাননা। অন্ধকার ভালো লাগে তার। শরীরের কারণে দলের কোনো কাজ করতে পারেন না। বলা যায়, এক অব্যক্ত যন্ত্রণা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। 

আরেকজন, সাহিত্যিক বুদ্ধদেবের শরীরও একেবারে ঠিকঠাক নয়। লেখকই জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগে বন্ধুর শারীরিক অবস্থার খবর নিতে ফোন করেছিলেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তখন ঘুমাচ্ছিলেন। ফলে তার সঙ্গে কথা হয় মিরাদেবীর সঙ্গে। কথায় কথায় গরম, বর্ষা, পদ্মার ইলিশের কথা উঠে আসে। মীরা তাকে জানান, ইলিশ বুদ্ধদেবের দারুন প্রিয়। সেই প্রসঙ্গেই উঠে আসে ইলিশের বেশি দামের কথা। ইলিশ আবার লেখক বুদ্ধদেবেরও প্রিয় পদ। তাই ফোন ছেড়েই ইলিশ কেনার  সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি। যেমন ভাবা তেমন কাজ। বাজারে গিয়ে দুটি আড়াই কেজি ওজনের পদ্মার ইলিশ কিনে ফেলেন। একটি নিজের জন্য রেখে অন্যটি বন্ধুর বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
পরে খোঁজ নিয়ে জানেন, বন্ধুর উপহার পেয়ে বেজায় খুশি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। অবাক তো হয়েছেনই। পরের দিন মিরাদেবী ফোন করেন লেখককে জানান, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রিয় মাছ খেয়ে খুব খুশি হয়েছেন।

ঘটনাটি দুই ভালো বন্ধুর ব্যক্তিগত গল্প হলেও আজকের কাটমানির যুগে বড়ই প্রাসঙ্গিক। প্রায় ১১ বছর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব বাবু। দলের সর্বোচ্চ পলিটব্যুরোর সদস্য। অথচ থাকেন দক্ষিণ কলকাতার একটি আবাসনের ছোট্ট দু-কামরার ফ্ল্যাটে। বহু অনুরোধেও ঘর ছাড়েননি। তিনি দলের সর্বক্ষণের কর্মী। তাই দল তার জীবনধারণের অর্থ দেয়। কিন্তু সে অর্থ খুবই কম। তাই নিত্য জরুতি খরচ মিটিয়ে বাড়তি খরচের পয়সা থাকে না। একটা দামী ইলিশ কিনতেও যেন অর্থের কথা ভাবতে হয় পরিবারের। তাই এমন এক মহার্ঘ গিফট পেয়ে শিশুর মতো আনন্দিত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।

পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীদের অনেকেরই অতীত এরকমই। ইতিহাস বলছে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল ঘোষের কোনো মাথা গোঁজার জায়গা ছিল না কলকাতায়। পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন ছেড়ে তিনি চলে গিয়েছিলেন বোনের বাড়ি। আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল সেন প্রায় সারাটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছিলেন কলকাতায় তার এক বন্ধুর বাড়িতে। রাজ্যের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী, চিকিত্সক বিধানচন্দ্র রায় তার সব বিলিয়ে দিয়েছিলেন। জ্যোতি বসুর পারিবারিক বাড়ি থাকলেও নিজের কোনো সম্পত্তি ছিল না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সাধারণ জীবনযাপন করেন।    

এফসি   

আরও পড়ুন