• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০১৯, ০৯:২৪ এএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ১, ২০১৯, ০৯:২৪ এএম

খাবার বহনকারী মুসলিম হওয়াতে অর্ডার বাতিল

খাবার বহনকারী মুসলিম হওয়াতে অর্ডার বাতিল

 

খিদে পেলে মাথা কাজ করে না অনেকেরই! কখন খাবার আসবে কিংবা যা-যেভাবে অর্ডার দেয়া হয়েছে সেই খাবার আসবে কি না তার অপেক্ষাতেই চিন্তিত থাকার কথা। খালি পেটের জ্বালায় উড়ে যায় যাবতীয় বাছবিচার, তবে সকলের তো ওড়ে না। অনেকেরই ভুখা পেটের আগে খড়্গহস্ত হয়ে দাঁড়ায় ধর্ম। যেমন, অমিত। ধর্মের খাতায় যার নাম হিন্দু তালিকায়। মঙ্গলবার রাতে অনলাইন ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম জোমাটোতে খাবার অর্ডার করেও ভীষণই অসন্তুষ্ট তিনি। কারণ? একজন মুসলিম আসছেন তাঁকে খাবার পৌঁছে দিতে! এ কেমন অনাচার? মোটেও ধর্মে সইছে না।

ভারতের মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরের বাসিন্দা অমিত শুক্লার কাছে বোধহয় খাবারের থেকেও তার অর্ডারের ডেলিভারি বয়ের ধর্ম জরুরি। এমনকি, মুসলিম হওয়াতে অমিত সেই খাবারের অর্ডারও বাতিল করে দেন। খাবারের অর্ডার বাতিল করে দিতে চেয়ে জোমাটোর গ্রাহক পরিসেবায় মেসেজও করেন অমিত। তাঁর দাবি, ওই মুসলিম ব্যক্তির পৌঁছে দেওয়া খাবার মুখে তুলবেন না তাঁরা, বদলে দিতে হবে ডেলিভারি পার্সনকে। খালি পেটের উর্ধ্বে গিয়ে এমন গোঁড়ামির মুখে যে জবাব দিয়েছে জোমাটো সেই প্রতিক্রিয়া অবশ্য অগুনতি মানুষের মন জিতে নিয়েছে।

মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) জোমাটো নামে একটি ফুড ডেলিভারি অ্যাপে খাবারের অর্ডার দেন তিনি। তবে, ওই অর্ডার দেয়ার পর অমিত জানতে পারেন, তার খাবার নিয়ে আসছেন ফৈয়াজ নামের এক মুসলিম। সঙ্গে সঙ্গে সেই অর্ডার বাতিল করে দেন অমিত। কারণ হিসেবে অমিত জানিয়েছেন, কোনো অ-হিন্দুর কাছ থেকে খাবারের ডেলিভারি তিনি নেবেন না। ফৈয়াজের বদলে অন্য কাউকে দিয়ে ডেলিভারি করানোর অনুরোধ জানালেও তা খারিজ করে দেয় জোমাটো। অর্ডার বাতিলের সেই কারণ দেখিয়েই জোমাটোর কাছ থেকে টাকা ফেরত চান অমিত। তবে তা করার পর ওই অ্যাপ মালিকের কাছ থেকে যে প্রত্যুত্তর পেয়েছেন অমিত, তা বাহবা কুড়োচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

মঙ্গলবার অর্ডার বাতিল করলেও তার টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করেন জোম্যাটোর কাস্টমার কেয়ার এক্সিকিউটিভ। সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক টুইট করতে শুরু করেন মধ্যপ্রদেশের জবলপুরের বাসিন্দা অমিত। একাধিক টুইটের মাধ্যমে জোমাটোর গ্রাহক পরিসেবার সঙ্গে তার কথোপকথনের স্ক্রিনশট শেয়ার করে অমিত বলেছেন, তিনি বিষয়টি তার আইনজীবীদের কাছে নিয়ে যাবেন। টুইটারে ‘নামো সরকার’ নামধারী অমিত শুক্লা টুইট করেছেন, “এইমাত্র জোমাটোর একটি অর্ডার বাতিল করলাম। তারা আমার খাবার পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটি অ-হিন্দু রাইডারকে দায়িত্ব দিয়েছিল। ওরা জানিয়েছে যে তারা চালক পরিবর্তন করতে পারবে না এবং টাকাও ফেরত দিতে পারবে না। আমি বলেছি, ওই ডেলিভারি নিতে আমার ওপর জোর খাটানো যাবে না।”

তবে, অমিতের রণং দেহী মনোভাবেও দমে যায়নি ওই অ্যাপ কর্তৃপক্ষ। জোম্যাটোর তরফে অমিতকে টুইটারে পাল্টা জানানো হয়, ‘খাবারের কোনো ধর্ম নেই। খাদ্যই ধর্ম।’ জোমাটোর তরফে এই প্রত্যুত্তরের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশংসার ঝড় উঠেছে। ধর্মান্ধতা ও হিংসার এই উদাহরণকে সমর্থন না করায় সদর্থক ভাবে সাড়া দিয়েছেন বহু নেটিজেন। একজন লিখেছেন, ‘দারুণ বলেছেন। কর্পোরেট জগৎ যে ক্রমবর্ধমান ধর্মান্ধতার ও হিংসাকে বর্জন করছে, তা সত্যিই বিরল।’

এখানেই থেমে থাকেননি ওই অ্যাপ কর্তৃপক্ষ। বুধবার সকালে বিষয়টি নিয়ে নিজেই আসরে নামেন জোম্যাটোর প্রতিষ্ঠাতা দীপিন্দ্র গয়াল। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘ভারতের ধারণা বিষয়ে আমরা গর্বিত এবং একইভাবে আমাদের সম্মানীয় গ্রাহক ও অংশীদারদের বৈচিত্র্য নিয়েও আমরা গর্বিত। আমাদের মূল্যবোধের পথে বাধা দেয় এমন কোনও ব্যবসায় হারাতে হলে আমাদের দুঃখ নেই!’ দীপিন্দ্রর এই জবাবেও মুগ্ধ অনেকে। একজন নেটিজেন লিখেছেন, ‘একটা স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠাতার কাছ থেকে এমন জবাবই প্রয়োজন।’ অনেকে আবার পরের খাবারের অর্ডারগুলোও যে ওই অ্যাপ থেকেই করবেন, সে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর এক নেটিজেন বলেন, ‘এই দুঃসময়ে ভারতের ভাবাদর্শকে তুলে ধরার জন্য অনেক ভালোবাসা।’

গোঁড়ামি এবং ঘৃণার প্রতি প্রত্যাখ্যান জানাতে এমন পদক্ষেপ করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় জোমাটোর ভূমিকা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত। বাস্তবিকই, ভুখা পেটের কোনও ধর্ম কি কোনো দেশে আছে?

সূত্র : এনডিটিভি

এসজেড