• ঢাকা
  • শনিবার, ১১ মে, ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০১৯, ০৪:২৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ১৫, ২০১৯, ০৪:২৮ পিএম

ভারতের স্বাধীনতা দিবস ১৫ আগস্টের নেপথ্যে

ভারতের স্বাধীনতা দিবস ১৫ আগস্টের নেপথ্যে
লাল কেল্লায় উড়ছে ভারতীয় পতাকা

ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধিকার আন্দোলন যে অখণ্ড ভারত বর্ষের বিভক্তির মাধ্যমে হবে তা কেউ হয়তো প্রত্যাশাও করেননি। কিন্তু তৎকালীন কংগ্রেস নেতা মাওলানা আবুল কালাম আজাদের শত প্রচেষ্টার পরেও হলো তাই। ঔপনিবেশকতার হাত থেকে মুক্ত হয়ে অনন্তকালের গৃহদাহে নিপতিত হল গোটা উপমহাদেশ, যার নেপথ্যে ছিলো সাম্প্রদায়িক ইস্যু। সেই প্রেক্ষাপটে এ অঞ্চলের হিন্দু ও মুসলিম এই দুটি সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা দুটি রাষ্ট্র গঠিত হয়।

মাওলানা আবুল কালাম মহিউদ্দিন আজাদ (ডানে)- ছবি: ইন্টারনেট

১৯৪৭ সালের ৪ জুলাই ভারতের স্বাধীনতা বিল পেশ করা হয় যা ১৯৪৭ সালের ১৮ জুলাই গৃহীত হয়েছিল। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট হিন্দু অধ্যুষিত ভূখণ্ড হিসেবে ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। আর ঠিক তার আগের দিন অর্থাৎ ১৪ আগস্ট ঘোষিত হয় মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্র পাকিস্তানের স্বাধীনতা। প্রতি বছর ১৫ আগস্ট দিনটি পালিত হয় স্বাধীনতা দিবস রূপে, এ বছরও দেশ জুড়ে পালন করা হচ্ছে ৭৩ তম স্বাধীনতা দিবস ।

স্বাধীন ভারত বর্ষের প্রবাদ পুরুষ মহাত্মা গান্ধি- ছবি: ইন্টারনেট

১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করেছিল এবং সেই কারণেই ১৫ অগাস্ট দিনটি ভারতীয়দের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে সময় জওহরলাল নেহরু ভারতের স্বাধীনতা দিবসে একটি ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। যাকে 'ট্রিটস উইথ ডেসটিনি' বলেই জানা হয়। এটি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জওহরলাল নেহরুর সংসদে দেওয়া প্রথম ভাষণ। প্রতি স্বাধীনতা দিবসে ভারতের যিনি প্রধানমন্ত্রী থাকেন, তিনি লাল কেল্লা থেকে পতাকা উত্তোলন করেন।

বাঁ থেকে- ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণার প্রাককালে জওহরলাল নেহরু, লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন ও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ- ছবি: ইন্টারনেট

তবে  ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট কিন্তু এই পতাকা তোলা হয়নি। লোকসভা সচিবালয়ের একটি গবেষণা পত্রের তথ্য অনুসারে, নেহেরু ১৯৪৭ সালের ১৬ আগস্ট লাল কেল্লা থেকে পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। তখনও ভারত-পাকিস্তানের নির্দিষ্ট সীমানা স্থির হয়নি। ১৭ আগস্ট রেডক্লিফ লাইনের ঘোষণার সঙ্গে এর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

১৯৪৭ সালের ৪ জুলাই ব্রিটিশ হাউস অব কমন্সে ভারতীয় স্বাধীনতা বিল পেশ করা হয়। এই বিলে ভারত ভাগ ও পাকিস্তান গঠনের প্রস্তাব ছিল। বিলটি ১৯৪৭ সালের ১৮ জুলাই গৃহীত হয় এবং ১৪ আগস্ট দেশ ভাগের পর  ১৪-১৫ আগস্ট মধ্যরাতে ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল। সে বার মহাত্মা গান্ধি ভারতের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে অংশ নেননি। কেননা ভারত যখন স্বাধীনতা পায়, তখন মহাত্মা গান্ধি বাংলার নোয়াখালিতে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রোধে উপবাস করছিলেন।

'ট্রিটস উইথ ডেসটিনি' ঘোষণার সময় জওহরলাল নেহরু- ছবি: ইন্টারনেট

তবে ভেবে দেখার মত বিষয় হচ্ছে কেন ১৫ আগস্ট তারিখটিকেই ভারতের স্বাধীনতার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল? এ সম্পর্কে বিভিন্ন ঐতিহাসিকের আলাদা আলাদা মন্তব্য রয়েছে। কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন সি রাজা গোপালচারীর পরামর্শে মাউন্টব্যাটেন ভারতের স্বাধীনতার জন্য ১৫ অগাস্ট দিনটিকে বেছে নিয়েছিলেন। সম্ভবত রাজ গোপালাচারী লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে বলেছিলেন যে তিনি ১৯৪৮  সালের ৩০ জুলাই পর্যন্ত যদি অপেক্ষা করেন, তাহলে তখন তার কাছে আর এই অঞ্চল স্থানান্তর করার কোনও শক্তি থাকবে না। এমন পরিস্থিতিতেই মাউন্টব্যাটেন ১৫ আগস্ট অর্থাৎ মাসের মাঝামাঝি একটি দিনকে ভারতের স্বাধীনতা দিবস হিসাবে বেছে নেওয়ার পক্ষে ছিলেন।

একই সঙ্গে, কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন যে মাউন্টব্যাটেন ১৫ আগস্ট তারিখটিকে শুভ বলে বিবেচনা করেছিলেন, এই জন্যেই তিনি ভারতের স্বাধীনতার জন্য ওই তারিখটি বেছে নিয়েছিলেন। একজন সেনা কর্মকর্তা হিসবে মাউন্টব্যাটেনের কাছে  ১৫ আগস্ট দিনটি মঙ্গলজনক ছিল। কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪৫ সালের ১৫  আগস্ট জাপানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল তদানীন্তন মিত্র বাহইনীর কাছে। লর্ড মাউন্টব্যাটেন সে সময় মিত্রবাহিনীর সেনাপতি ছিলেন।

তবে অনেকের ধারনা ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতার বিষয়টি মীমাংসার জন্য বসা হয় বেশ রাত করে। গুরুত্বপূর্ণ সে বৈঠকে একই সঙ্গে ঘোষিত হয় পাকিস্তান ও ভারতের স্বাধীনতা। তবে পাকিস্তানের পর যখন ভারতের স্বাধীনতা ঘোষিত হয় ততক্ষনে ঘড়ির কাটায় রাত ১২ টা অতিক্রম হয়ে যাওয়ায় সেটি ১৫ আগস্ট হয়ে যায়।

তথ্যসূত্র সহায়ক: নিউজ ১৮ ও এনডিটিভি বাংলা
এসকে

আরও পড়ুন