• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৯, ০৭:৩৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৯, ০৭:৩৬ পিএম

গাজায় ইসরায়েলি সহিংসতার শিকার ৩০ গণমাধ্যমকর্মী: জাতিসংঘ

গাজায় ইসরায়েলি সহিংসতার শিকার ৩০ গণমাধ্যমকর্মী: জাতিসংঘ
বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোর সর্বোচ্চ অভিভাবক জাতিসংঘ

...............................................

বিশেষ প্রতিবেদন

চলতি বছরের শুরুতে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার নীতিমালা আরোপের পর, এখন পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান সংঘাতের মাঝে অন্তত ৩০ জন গণমাধ্যমকর্মী ইসরায়েলি সেনাদের হামলার শিকার হয়েছে। যা এ সংক্রান্ত ইস্যুতে প্রোণিত আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে জাতিসংঘ।

সম্প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরাসের কাছে পেশকৃত এক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন সংস্থাটির মানবাধিকার সংরক্ষণ কমিশনের হাই কমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট। ৯ সেপ্টেম্বর, জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে পাঠানো এই প্রতিবেদনের বিস্তারিত তথ্য সংস্থাটির দাপ্তরিক ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হয়।

..................................................................

চলতি বছর ২২ মার্চ জাতিসংঘের ৪০/১৩ নীতিমালা প্রণয়নের পরেও সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। পুরো গাজা উপত্যকাজুড়ে ভয়াবহ ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। বিশাল পরিসরের এই গণ আন্দোলনে অংশ নেয়া সাধারণ জনগণের উপরেও ইসরায়েলি সেনাদের সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে

..................................................................

লিখিত এক বিবৃতিতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ব্যাচেলেট বলেন, 'মার্চ ২০১৮ থেকে ইসরায়েল-গাজা সীমান্তের পশ্চিম তীরবর্তী এলাকায় শুরু হওয়া 'গ্রেটেস্ট মার্চ অব রিটার্ন' নামে চলমান আন্দোলনের তথ্য সংগ্রহ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমকর্মীরা। এ সকল গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে অনেককেই ইসরায়েলি সেনাদার হামলার শিকার হতে হয়েছে। বার্তা সংস্থা আনাদুল এজেন্সির ৪ জন সাংবাদিক এই সহিংসতায় আহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে ২ জন গাজায় এবং ২ জন ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম উপকূলে সেনাদের হামলা চালানোকালে আহত হন। একই সময় অন্য একটি বার্তা সংস্থার ২ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন বলেও তথ্য পাওয়ায় গেছে।'

গাজা উপত্যকায় চলমান সংঘাতের মাঝে অন্তত ৩০ জন গণমাধ্যমকর্মী ইসরায়েলি সেনাদের হামলার শিকার হয়েছে- জাতিসংঘ প্রতিবেদনের তথ্য চিত্র

প্রকাশিত এই বিবৃতিতে ব্যাচেলেট আরও বলেন, চলতি বছর ২২ মার্চ জাতিসংঘের ৪০/১৩ নীতিমালা প্রণয়নের পরেও সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। পুরো গাজা উপত্যকাজুড়ে ভয়াবহ ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। বিশাল পরিসরের এই গণ আন্দোলনে অংশ নেয়া সাধারণ জনগণের উপরেও ইসরায়েলি সেনাদের সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে।

প্রকাশিত প্রতিবেদনটির তথ্য মতে, স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ডাক দিয়ে ইসরায়েল অধিকৃত অংশে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে, ২০১৮ সালের ৩০ মার্চ শুরু হয় ফিলিস্তিনিদের সবচেয়ে বড় এই আন্দোলন 'দ্য গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন'। কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনবাসী এ আন্দোলনের সময় ইসরায়েলি সেনাদের বাধার মুখে উপত্যকার সীমান্তবর্তী এলাকায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এই বিক্ষোভ দমনে মারমুখী ভূমিকায় অবতীর্ন হয় ইসরায়েলি সেনার। প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভকারীদের নিরস্ত করতে চালানো হচ্ছে গুলি। এছাড়া জলকামান, রাবার বুলেট ও টিয়ার সেলওও নিক্ষেপ করা হচ্ছে। এ ধরনের আগ্রসনের প্রেক্ষিতে উপত্যকায় এখন পর্যন্ত ৫ শিশুসহ ১৩ জনের প্রাণহানি হয়েছে।

..................................................................

২২ মার্চ ২০১৯ এর পর থেকে নিহত ১৩ জন ফিলিস্তিনি নাগরিকসহ গত ১২ মাসে ৩৮ জন শিশুসহ ১৯ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে গাজা উপত্যকায়। ২০১৮ সালের পর থেকে ২৭০ জন ফিলিস্তিনি নাগরিক সেনা হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন

..................................................................

জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রধান তার বিবৃতিতে জানিয়েছেন, 'ফিলিস্তিনবাসী ছাড়াও সেখানে কর্তব্যরত বিভিন্ন সংস্থার কয়েক শত স্বাস্থ্যকর্মী এবং গণমাধ্যমও ইসরায়েলি সেনাদের এই হামলা চলাকালীন আহত হয়েছেন। এদের মাঝে এমন অনেকের তথ্য পাওয়া গেছে যারা আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। অন্তত ৬ জনের ব্যাপারে এমন তথ্য জানা গেছে যারা চিরস্থায়ীভাব এদৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন, ২ জনের পুরো শরীর পঙ্গু হয়ে গেছে এবং অন্তত ২০ জন মানসিক পক্ষাঘাতে বিপর্যস্ত।'

সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য মতে আরো জানা যায় যে, ২২ মার্চ ২০১৯ এর পর থেকে নিহত ১৩ জন ফিলিস্তিনি নাগরিকসহ গত ১২ মাসে ৩৮ জন শিশুসহ ১৯ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে গাজা উপত্যকায়। ২০১৮ সালের পর থেকে ২৭০ জন ফিলিস্তিনি নাগরিক সেনা হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন। এর আগে জাতিসংঘের এই সংস্থাটির এক কর্মকর্তা ইসরায়েলি সেনাদের এই বর্বরতাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

চলমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সারা বিশ্বের বিভিন্ন পর্যায়ে কূটনৈতিক জটিলতার মুখে পড়োতে শুরু করেছে ইসরায়েল। এছাড়া নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের উপর সশস্ত্র ইসরায়েলি সেনাদের চালানো এই নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ বিরোধীতাও প্রকাশ করেছে অনেক রাষ্ট্র। ক্রমে আরো বিধ্বংসী হয়ে ওঠা ইসরায়েলি আগ্রাসনের মুখে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সে অঞ্চলের মানবাধিকা পরিস্থিতি। তবে এ প্রসঙ্গে নিজেদের গা বাঁচাতে মিথ্যাচার করছে ইসরায়েল সরকার। তারা দাবি করেছে জাতিসংঘ প্রণীত নীতিমালা গাজার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, যে দাবি একেবারেই অমূলক ও ভিত্তিহীন।

সূত্র: জাতিসংঘের দাপ্তরিক ওয়েব সাইট